এবার পুরো ইউক্রেন দখলে নিতে চান পুতিন

- আপডেট সময় ০১:১৯:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
- / ২৫৯ বার পড়া হয়েছে
ভ্লাদিমির পুতিন আবারও স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, ইউক্রেনের পুরো ভূখণ্ড রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করতে চান! এই ঘোষণা বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
একদিকে যেমন পুতিন তার অনড় অবস্থান ব্যক্ত করেছেন, অন্যদিকে ইউরোপীয় দেশগুলো এবং কানাডা ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সেন্ট পিটার্সবার্গ অর্থনৈতিক ফোরামে তার উদ্দেশ্য পরিষ্কার করে বলেছেন, “আমি বহুবার বলেছি, রুশ ও ইউক্রেনীয় জনগণ এক জাতি। এই দৃষ্টিকোণ থেকে পুরো ইউক্রেনই আমাদের।”
তিনি আরও যোগ করেন, “যেখানে রুশ সেনারা পা রাখে, তা আমাদের।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে পুতিন কার্যত ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করেছেন এবং তার সম্প্রসারণবাদী মনোভাব আবারও সামনে এসেছে। এর আগে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল এবং ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ শুরুর পর থেকেই পুতিনের এই আকাঙ্ক্ষা স্পষ্ট ছিল। কিন্তু এবার তিনি আরও সরাসরি নিজের লক্ষ্য তুলে ধরলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা স্থগিত থাকায় যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা পূরণে এগিয়ে এসেছে ইউরোপীয় দেশগুলো ও কানাডা। ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটে জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসেই ইউরোপ ও কানাডা মিলে ইউক্রেনকে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে।
এটি গত বছরের মোট ৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। এই বিপুল পরিমাণ সহায়তা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এর মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, সামরিক সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষণ। এটি প্রমাণ করে যে, পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনের পাশে থাকার অঙ্গীকারে দৃঢ়।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন এখনও পর্যন্ত সামরিক সহায়তা তেমনভাবে শুরু করেনি। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বিশেষভাবে ‘প্যাট্রিয়ট’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্প জানিয়েছেন, কিছু সরঞ্জাম দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে, তবে এগুলো খুবই দুর্লভ এবং বর্তমানে ইসরায়েলকেও সরবরাহ করা হচ্ছে।
প্যাট্রিয়ট সিস্টেম ইউক্রেনের আকাশসীমা রক্ষায় অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হতে পারে, বিশেষ করে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোকে রক্ষা করতে। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ প্রতিরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রাশিয়া স্পষ্ট করে জানিয়েছে, অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ না হলে যুদ্ধবিরতি সম্ভব নয়। শনিবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সেই শর্ত পুনরায় উল্লেখ করেন। এর অর্থ হলো, যতক্ষণ পর্যন্ত পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেবে, ততক্ষণ পর্যন্ত রাশিয়া যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। এই অবস্থান সংঘাতের সমাধানের পথকে আরও জটিল করে তুলছে।
পুতিনের বক্তব্যের জবাবে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রিই সিবিহা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “যেখানে রুশ সেনা যায় সেখানেই তারা নিয়ে আসে মৃত্যু, ধ্বংস আর বিভীষিকা।” অন্যদিকে, জেলেনস্কি টেলিগ্রামে এক পোস্টে আরও গুরুতর অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেন, পুতিন এবার সম্পূর্ণ খোলামেলাভাবে বলেছেন তিনি শুধু ইউক্রেন নয়, বেলারুশ, বাল্টিক রাষ্ট্র, মলদোভা, ককেশাস এবং কাজাখস্তানের দিকেও নজর দিয়েছেন। জার্মানির সেনাবাহিনীর কৌশলগত প্রতিবেদনেও পুতিনের এই সম্প্রসারণবাদী মনোভাবকে অস্তিত্বগত হুমকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি কেবল ইউক্রেনের নয়, সমগ্র ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।