ঢাকা ০৫:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

    নিঝুমদ্বীপ পানিতে নিমজ্জিত: জোয়ারে ঘর-বাড়ি প্লাবিত, ৫০ হাজার মানুষ খাদ্য সংকটে

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০৬:২২:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
    • / ২৬২ বার পড়া হয়েছে

    বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে শনিবার (২৬ জুলাই) সকাল থেকে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপে হঠাৎ করে ভয়াবহ জোয়ার দেখা দেয়। এর জেরে দ্বীপের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি ঢুকে পড়েছে বাড়িঘর, দোকানপাট ও কাঁচা সড়কে। মাছের ঘের, ফসলের ক্ষেত এবং গবাদিপশুর খামার সবই পানির নিচে। এতে করে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যসংকটে পড়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।

    নিঝুমদ্বীপের ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. মিলন দাঁড়িয়ে আছেন তার পানিতে ডুবে যাওয়া বসতঘরের সামনে। স্তব্ধ চোখে তাকিয়ে আছেন পানির রাজত্বে পরিণত হওয়া উঠান আর রান্নাঘরের দিকে। খাটের ওপর কোনোভাবে ঠাঁই নিয়েছে তার পরিবার, আর গবাদিপশুগুলোকে রাখা হয়েছে গ্রামের উঁচু সড়কে।

    “আমাদের জীবন এমনই,” বলছিলেন মিলন, “সব সময় নদীর সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়। এবার বর্ষায় মাছও নেই, ঋণ করে দিন পার করছি। এখন তো ঘরে চুলা জ্বালানোর মতোও কিছু নেই। পুকুরে লবণ পানি ঢুকে মাছ মরছে, ক্ষেতের ফসলও গেছে। আমাদের কষ্ট কেউ বোঝে না।”

    আরেক বাসিন্দা মো. রাসেল জানান, সকাল ১০টার পর টানা বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানি একত্র হয়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে যে, মানুষ ঘর থেকে বের হতেও পারছে না। নামার বাজার, বন্দর কিল্লা, ইসলামপুর, মোল্লা গ্রাম—সব জায়গায় জলমগ্ন দশা। “গরুর খাবার নেই, মাছের ঘের ভেসে গেছে। আমরা একেবারে অসহায় হয়ে পড়েছি,” বলেন তিনি।

    দ্বীপের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কেফায়েত হোসেন বলেন, “নিঝুমদ্বীপ এখন যেন জলাবদ্ধতার এক স্থায়ী দ্বীপে পরিণত হয়েছে। বছর ঘুরলেই আমরা এই দুর্যোগে ডুবে যাই। বেড়িবাঁধ নেই, টেকসই ব্যবস্থাও নেই। প্রতিবার আমাদের ঘরবাড়ি, জীবন-জীবিকা সব হারাতে হয়।”

    তিনি আরও বলেন, “কবে নাগাদ এই মানুষগুলো নিরাপদে, একটু নিশ্চিন্তে বাঁচবে? সেই প্রশ্নই যেন জোয়ারের পানির মতো আমাদের গ্রাস করে চলেছে।”

    হাতিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলাউদ্দিন বলেন, “প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করেই হাতিয়ার মানুষকে বাঁচতে হয়। আমরা সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। জোয়ারের পানি নামতে শুরু করেছে, তবে রাতে আরেক দফা জোয়ার হতে পারে। কোথাও ক্ষয়ক্ষতি হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

    বর্তমানে নিঝুমদ্বীপ যেন এক শ্বাসরুদ্ধকর বাস্তবতার নাম—যেখানে প্রতিদিন প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ, আর প্রতিবারই পরাজিত হয় মানুষের স্বপ্ন।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    নিঝুমদ্বীপ পানিতে নিমজ্জিত: জোয়ারে ঘর-বাড়ি প্লাবিত, ৫০ হাজার মানুষ খাদ্য সংকটে

    আপডেট সময় ০৬:২২:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

    বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে শনিবার (২৬ জুলাই) সকাল থেকে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপে হঠাৎ করে ভয়াবহ জোয়ার দেখা দেয়। এর জেরে দ্বীপের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি ঢুকে পড়েছে বাড়িঘর, দোকানপাট ও কাঁচা সড়কে। মাছের ঘের, ফসলের ক্ষেত এবং গবাদিপশুর খামার সবই পানির নিচে। এতে করে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যসংকটে পড়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।

    নিঝুমদ্বীপের ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. মিলন দাঁড়িয়ে আছেন তার পানিতে ডুবে যাওয়া বসতঘরের সামনে। স্তব্ধ চোখে তাকিয়ে আছেন পানির রাজত্বে পরিণত হওয়া উঠান আর রান্নাঘরের দিকে। খাটের ওপর কোনোভাবে ঠাঁই নিয়েছে তার পরিবার, আর গবাদিপশুগুলোকে রাখা হয়েছে গ্রামের উঁচু সড়কে।

    “আমাদের জীবন এমনই,” বলছিলেন মিলন, “সব সময় নদীর সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়। এবার বর্ষায় মাছও নেই, ঋণ করে দিন পার করছি। এখন তো ঘরে চুলা জ্বালানোর মতোও কিছু নেই। পুকুরে লবণ পানি ঢুকে মাছ মরছে, ক্ষেতের ফসলও গেছে। আমাদের কষ্ট কেউ বোঝে না।”

    আরেক বাসিন্দা মো. রাসেল জানান, সকাল ১০টার পর টানা বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানি একত্র হয়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে যে, মানুষ ঘর থেকে বের হতেও পারছে না। নামার বাজার, বন্দর কিল্লা, ইসলামপুর, মোল্লা গ্রাম—সব জায়গায় জলমগ্ন দশা। “গরুর খাবার নেই, মাছের ঘের ভেসে গেছে। আমরা একেবারে অসহায় হয়ে পড়েছি,” বলেন তিনি।

    দ্বীপের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কেফায়েত হোসেন বলেন, “নিঝুমদ্বীপ এখন যেন জলাবদ্ধতার এক স্থায়ী দ্বীপে পরিণত হয়েছে। বছর ঘুরলেই আমরা এই দুর্যোগে ডুবে যাই। বেড়িবাঁধ নেই, টেকসই ব্যবস্থাও নেই। প্রতিবার আমাদের ঘরবাড়ি, জীবন-জীবিকা সব হারাতে হয়।”

    তিনি আরও বলেন, “কবে নাগাদ এই মানুষগুলো নিরাপদে, একটু নিশ্চিন্তে বাঁচবে? সেই প্রশ্নই যেন জোয়ারের পানির মতো আমাদের গ্রাস করে চলেছে।”

    হাতিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলাউদ্দিন বলেন, “প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করেই হাতিয়ার মানুষকে বাঁচতে হয়। আমরা সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। জোয়ারের পানি নামতে শুরু করেছে, তবে রাতে আরেক দফা জোয়ার হতে পারে। কোথাও ক্ষয়ক্ষতি হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

    বর্তমানে নিঝুমদ্বীপ যেন এক শ্বাসরুদ্ধকর বাস্তবতার নাম—যেখানে প্রতিদিন প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ, আর প্রতিবারই পরাজিত হয় মানুষের স্বপ্ন।