বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের মধ্যে তিন বছরের মানবাধিকার মিশন স্থাপনে সমঝোতা স্মারক সই

- আপডেট সময় ০৭:০৮:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫
- / ২৬৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (OHCHR)-এর মধ্যে তিন বছরের একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) সই হয়েছে, যার মাধ্যমে দেশে মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি বিশেষ মানবাধিকার মিশন গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই মিশনের মূল লক্ষ্য হবে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি সংগঠনগুলোকে প্রশিক্ষণ এবং কারিগরি সহায়তা প্রদান করা, যাতে মানবাধিকারের মানোন্নয়নে টেকসই অগ্রগতি সাধিত হয়।
শনিবার (১৯ জুলাই) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, এই মিশনের কার্যক্রমের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হবে বাংলাদেশকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা পালনে সহায়তা করা। সেই লক্ষ্যে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ, আইনগত সহায়তা প্রদান এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর কার্যক্রম চালানো হবে।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষাপটে জবাবদিহি ও কাঠামোগত সংস্কার নিশ্চিত করতেই সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। এতে আরও বলা হয়, দেশের অভ্যন্তরে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কিছু গোষ্ঠী উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কারণ, বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ও দৃঢ় ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। তাই আন্তর্জাতিক যেকোনো অংশীদারিত্বকে অবশ্যই এই মূল্যবোধগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
এই প্রেক্ষাপটেই স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে, OHCHR-এর এই মিশন শুধুমাত্র গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিরোধ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতেই কাজ করবে—বিশেষ করে পূর্ববর্তী সরকারের আমলে সংঘটিত অপরাধের তদন্ত এবং নথিভুক্তিকরণের ক্ষেত্রে। মিশন দেশের বিদ্যমান আইনি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোর বাইরে কোনো সামাজিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে না বলেও নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতিসংঘ বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বাস্তবতার প্রতি সম্মান দেখিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। একইসঙ্গে আশা প্রকাশ করা হয়েছে, মিশন সবসময় স্বচ্ছতা বজায় রাখবে এবং স্থানীয় অংশীজনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করে কাজ করবে।
সরকারের পক্ষ থেকে আরও স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে, এই অংশীদারিত্ব যদি ভবিষ্যতে জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে পড়ে, তবে সার্বভৌম কর্তৃত্ব অনুযায়ী বাংলাদেশ যেকোনো সময় এই চুক্তি থেকে সরে আসার অধিকার রাখে।
বিজ্ঞপ্তিতে একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়—যদি পূর্ববর্তী সরকারের আমলে এমন একটি মানবাধিকার মিশন থাকত, তাহলে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও প্রকাশ্য গণহত্যার মতো অপরাধগুলো সঠিকভাবে তদন্ত ও বিচারের আওতায় আনা যেত।
বিজ্ঞপ্তির শেষাংশে বলা হয়, মানবাধিকারের প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার কেবল আদর্শিক নয়, বরং ন্যায়ের ভিত্তিতে গঠিত। সরকার এই নতুন অংশীদারিত্বকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে, যার মাধ্যমে দেশের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো আরও শক্তিশালী হবে এবং আইনের শাসন ও নাগরিক অধিকার রক্ষায় সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। এটি পরিচালিত হবে বাংলাদেশের নিজস্ব মূল্যবোধ, আইন ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার ভিত্তিতে।