শাহবাগে গণঅধিকার সমাবেশে ৩০ দলের জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি

- আপডেট সময় ০২:১৫:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৫৪ বার পড়া হয়েছে
জাতীয় পার্টির কার্যক্রম নিষিদ্ধসহ তিন দফা দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে সংহতি সমাবেশ করেছে গণঅধিকার পরিষদ। শুক্রবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি, খেলাফত মজলিসসহ অন্তত ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দল অংশ নেয় এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্যের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।
সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোট নিষিদ্ধের দাবি জানান। তাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে এবং এর সহযোগী জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচারে রূপান্তর করতে সহায়তা করেছে। তারা বলেন, “ফ্যাসিবাদ ফেরাতে জাতীয় পার্টি আবার সক্রিয় হচ্ছে। এত অপরাধের পরও তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের দোসর ও ভারতীয় এজেন্ট জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করতে হবে। ১৪ দলীয় জোটও নিষিদ্ধ করতে হবে।”
সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ নেতা-কর্মীদের ওপর সাম্প্রতিক হামলার বিচার, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের নিবন্ধন বাতিল ও রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ এবং ব্যর্থতার দায়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিও জানানো হয়। যদিও তিন দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছিল, অধিকাংশ বক্তাই জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের বিষয়টিকে সবচেয়ে জোরালোভাবে তুলে ধরেন। বিকাল ৩টায় সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও দুপুর থেকেই গণঅধিকার পরিষদ ও সহযোগী দলের নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। ফ্যাসিবাদ বিরোধী বিভিন্ন দলের নেতারা একই মঞ্চে বসে নিজেদের মধ্যে ঐক্য দৃঢ় করার আহ্বান জানান।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল বলেন, “গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার পালিয়েছে। এখন নূরকে রক্তাক্ত করছে কারা? আমরা বারবার বলেছি অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে হাসিনার অনুগামীরা রয়ে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা যথেষ্ট নয়, অস্ত্রোপচার করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “অনেকে স্বপ্ন দেখছেন জাপা দিয়ে আবার আপা ফিরে আসবে। কিন্তু শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে চ্যাপ্টার ক্লোজড। তিনি মৃত অধ্যায়।”
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, “নুরের ওপর হামলা শুধু একটি দলের ওপর হামলা নয়, এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ওপর হামলা। আমরা ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদ বিদায় দিয়েছি, কিন্তু জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল এখনো আছে। তাদের আর রাজনীতি করার সুযোগ নেই।”
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, “নুরের ওপর হামলায় সেনা ও পুলিশের যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নুর এখনো হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন, অথচ কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। অবিলম্বে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ করতে হবে, না হলে সচিবালয় ঘেরাও করা হবে। বাংলাদেশে জাতীয় পার্টিকে আর রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না।”
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মোহাম্মদ আতাউল্লাহ বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থান সফল হয়েছিল আমাদের ঐক্যের কারণে। কিন্তু বিভক্তি তৈরি করার পাঁয়তারা চলছে। আমরা যেনতেন নির্বাচন হতে দেব না, তবে সংস্কার করে নভেম্বরে নির্বাচন হলে আমরা অংশ নেব।”
ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ বলেন, “নুরুল হক নুরের মতো বিপ্লবী নেতার ওপর হামলার নিন্দা জানাই। জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং আর কোনো ফ্যাসিস্ট যেন জন্ম নিতে না পারে সে জন্য আমরা অতন্দ্র প্রহরী হব।”
হেফাজতে ইসলামের নেতা ও খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন বলেন, “নুরের ওপর হামলা মানে আন্দোলনকারী সবার ওপর হামলা। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়েছে। এখন জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলকেও নিষিদ্ধ করতে হবে।”
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, “আমরা সংস্কার চাই, বিচার চাই এবং ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন চাই। অন্তর্বর্তী সরকার কতটা সংস্কার করেছে তা জনতা জানতে চায়। আমরা জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ চাই।”
এছাড়া আরও বক্তব্য দেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির শিকদার হারুন মাহমুদ, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুসা বিন ইযহার, গণসংহতি আন্দোলনের বাচ্চু ভূঁইয়া, এবি পার্টির আনোয়ার সাদাত টুটুল, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারম্যান ফিরোজ মোহাম্মদ লিটন, জাগপার রাশেদ প্রধান, এনডিএম-এর মোমিনুল আমিন, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির ক্বারী আবু তাহের, খেলাফত মজলিসের মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু মূসা মোহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টির আবুল কাশেম মজুমদার, কল্যাণ পার্টির মো. শামসুদ্দিন পারভেজ, ডেমোক্রেটিক লীগের খোকন চন্দ্র দাস, এনডিপি’র আরেক অংশের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ-আল-হারুন এবং জনতার অধিকার পার্টির তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া।
সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে আরও শক্তিশালী ঐক্যের ডাক দেন।