২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা : তারেক-বাবরের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি চলছে

- আপডেট সময় ১২:০২:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
- / ২৬৩ বার পড়া হয়েছে
বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামির খালাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের দায়ের করা আপিলের শুনানি দ্বিতীয় দিনের মতো শুরু হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চে এই শুনানি চলছে। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি পরিচালনা করছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ মাসুদ।
আদালতে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন ও অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান রায়হান বিশ্বাস। এর আগে গত ১৭ জুলাই এ মামলার আপিলের শুনানি শুরু হয়।
চলতি বছরের ১ জুন, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সব আসামির খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি দেয় আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এই মামলার বিচারিক ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, ২০২৪ সালের ১২ জানুয়ারি, হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের বেঞ্চ এক ঐতিহাসিক রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমান এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামিকে খালাস দেন। সেই রায়ে আদালত মত প্রকাশ করেন যে, মামলাটির বিচার ছিল আইনবহির্ভূত এবং যে চার্জশিটের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতে বিচার সম্পন্ন হয়েছিল, তা আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণযোগ্য ছিল না। হাইকোর্টের এমন রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল দায়ের করে, যার শুনানি এখন চলছে।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর বিচারিক আদালত একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় রায় দেন। সে রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী ও দলটির সিনিয়র নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ আরও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
নিম্ন আদালতে যাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে ছিলেন: লুৎফুজ্জামান বাবর, আব্দুস সালাম পিন্টু, মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ, জঙ্গি নেতা মাওলানা তাজউদ্দীন, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মাওলানা শেখ ফরিদ, মাওলানা আবু সাইদ, মুফতি মঈনউদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, হাফেজ আবু তাহের, মো. ইউসুফ ভাট ওরফে মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক, মফিজুর রহমান ওরফে মহিবুল্লাহ, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হোসাইন আহমেদ তামিম, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ এবং মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন।
অন্যদিকে যেসব আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল তারা হলেন: শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু ওমর, আবু হোমাইরা ওরফে পীরসাহেব, মাওলানা সাব্বির আহমদ ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, আরিফ হাসান ওরফে সুজন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, আবু বকর ওরফে সেলিম হাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ, মহিবুল মোত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন (পলাতক), আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন (পলাতক), মো. খলিল (পলাতক), জাহাঙ্গীর আলম বদর ওরফে ওস্তাদ জাহাঙ্গীর (পলাতক), মো. ইকবাল (পলাতক), লিটন ওরফে মাওলানা লিটন (পলাতক), তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়া (পলাতক), হারিছ চৌধুরী (পলাতক), কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ (পলাতক), মুফতি শফিকুর রহমান (পলাতক), মুফতি আবদুল হাই (পলাতক) এবং রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে বাবু ওরফে রাতুল বাবু (পলাতক)।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এই হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা প্রাণে রক্ষা পেলেও গুরুতর আহত হন। ওই হামলায় আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতা-কর্মীও আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেন।
এই মামলার বিচার, রায়, এবং পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া দীর্ঘ সময়জুড়ে দেশের রাজনৈতিক ও বিচারিক প্রেক্ষাপটে অন্যতম আলোচিত ঘটনা হয়ে আছে। এখন আপিল বিভাগের ওপর নির্ভর করছে মামলার ভবিষ্যৎ গতি ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।