অযৌক্তিক আন্দোলন বন্ধ না হলে হস্তক্ষেপ করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী-স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

- আপডেট সময় ০৬:৩৮:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫
- / ২৫২ বার পড়া হয়েছে
স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে চলা আন্দোলনের কারণে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসনে বুধবার বরিশালে গিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. আবু জাফর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, অযৌক্তিক আন্দোলন বন্ধ না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হস্তক্ষেপ করবে।
তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে এই আন্দোলনে তৃতীয় কোনো শক্তির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন ১৬তম দিনে গড়িয়েছে এবং ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক আজও অবরোধ করে রেখেছে আন্দোলনকারীরা। মহাপরিচালক বলেন, “শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যখাত সংস্কারে যে তিন দফা দাবি তুলেছে, তার সবগুলোই স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশে রয়েছে।
এগুলো রাতারাতি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যখাত সংস্কার করা হবে। আন্দোলনকারীরা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পড়েনি। উদ্দেশ্যমূলকভাবে স্কুলের শিশুদেরও আন্দোলনে নামানো হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থেকে না সরলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করবে।”
অচলাবস্থা নিরসনে মহাপরিচালকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বুধবার বরিশালে যায়। দুপুর ১২টায় তারা শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে যান। প্রথমে মহাপরিচালক জরুরি বিভাগের গেটে অনশনরত তিনজনের অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা অনশন ভাঙতে অস্বীকৃতি জানান। পরে মহাপরিচালক শেবাচিমের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন।
ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি ডা. কবিরুজ্জামানসহ অনেক চিকিৎসক আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। শিক্ষানবিশ (ইন্টার্ন) চিকিৎসকরা তাদের নিরাপত্তার জন্য ৬ দফা দাবি তুলেছেন এবং তা বাস্তবায়ন না হলে ২৪ ঘণ্টা পর কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
অপরদিকে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা কঠোর অবস্থানে যাওয়ার আগে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার ওপর জোর দেন। আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিলুপ্ত জেলা কমিটির আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন সোহাগ ও শাহাবুদ্দিন মিয়াসহ কয়েকজন বলেন, “আশ্বাস নয়, বাস্তবায়ন দৃশ্যমান না হলে তারা আন্দোলন থেকে সরবেন না।”
দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে সভাকক্ষ কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দুই ঘণ্টার সভা শেষে বেলা ৩টায় মহাপরিচালক তার অবস্থানের কথা জানিয়ে অনশনকারীদের কাছে শেষ অনুরোধ জানাতে যান, কিন্তু তখনও অনশনকারীরা তার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর মহাপরিচালক ঢাকার উদ্দেশ্যে বরিশাল ত্যাগ করেন। এ সময় বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার (চলতি দায়িত্ব) আহসান হাবিবসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, জাতীয়ভাবে স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে গত ২৭ জুলাই থেকে বরিশালে আন্দোলন শুরু হয়েছে। আন্দোলনকারীদের দাবিগুলো হলো- সারাদেশের সরকারি হাসপাতালে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সব হাসপাতালে দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি, দলীয় লেজুড়বৃত্তিক চিকিৎসকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং ডিজিটাল অটোমেশন ও স্বচ্ছ জবাবদিহিমূলক টাস্কফোর্স গঠন করা।