অস্ট্রেলিয়ান প্লোভার পাখি প্রকৃতির সতর্ক প্রহরী

- আপডেট সময় ০২:১৭:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৫৮ বার পড়া হয়েছে
অস্ট্রেলিয়ার খোলা মাঠ, নদীর ধারের চারণভূমি আর শহরতলির পার্ক—এসব জায়গায় যে পাখিটিকে প্রায়ই দেখা যায়, সেটি হলো অস্ট্রেলিয়ান প্লোভার বা Masked Lapwing। অস্ট্রেলিয়ার মানুষের কাছে এটি একদিকে পরিচিত, আবার কখনো কখনো কিছুটা ভীতির কারণও।
জীবনযাপন ও চলাফেরা
অস্ট্রেলিয়ান প্লোভার মূলত মাটিতে হাঁটাহাঁটি করে খাবার সংগ্রহ করে। এরা ঘাসের মাঠ, ভেজা কাদা, এমনকি শহরের খেলার মাঠেও খাবারের সন্ধানে নামে। খাবার হিসেবে এরা পোকামাকড়, ছোট কীটপতঙ্গ ও শামুক খেয়ে থাকে। এদের চলাফেরার বিশেষ ভঙ্গি হলো দ্রুত ছোট ছোট দৌড়, তারপর হঠাৎ থেমে খাবার ঠোঁট দিয়ে কুড়িয়ে খাওয়া।
আয়ুষ্কাল
প্রকৃতিতে এদের গড় আয়ুষ্কাল প্রায় ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত হতে পারে। তবে শহুরে পরিবেশে বিভিন্ন ঝুঁকির কারণে অনেক সময় এরা কম দিন বাঁচে।
কোথায় পাওয়া যায়
অস্ট্রেলিয়ান প্লোভার প্রায় সারা অস্ট্রেলিয়াতেই দেখা যায়। শুধু গ্রামীণ অঞ্চলে নয়, শহুরে এলাকায়—স্কুলের মাঠ, বিমানবন্দর কিংবা পার্কেও এদের দেখা মেলে। এমনকি তাসমানিয়া ও নিউজিল্যান্ডেও কিছু সংখ্যক প্লোভার পাওয়া যায়।
প্রজনন ও ডিম
এরা বছরের বিভিন্ন সময়ে প্রজনন করতে পারে, তবে বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে বেশি সক্রিয় থাকে। অস্ট্রেলিয়ান প্লোভার ঘাসের মাঠের মাটিতেই অগভীর খোঁড়াখুঁড়ি করে বাসা বানায়। স্ত্রী প্লোভার সাধারণত ৩ থেকে ৪টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো বালির বা ঘাসের রঙের মতো হওয়ায় সহজে চোখে পড়ে না। দু’জন অভিভাবকই পালা করে ডিমে তা দেয়। ডিম ফোটার পর ছানারা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হাঁটতে ও খাবার খুঁজতে শুরু করে।
বিশেষত্ব ও ক্ষমতা
অস্ট্রেলিয়ান প্লোভারদের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হলো এদের আক্রমণাত্মক প্রতিরক্ষামূলক আচরণ। কেউ যদি বাসার কাছে যায়, তখন এরা মাথার ডানায় থাকা তীক্ষ্ণ হাড়ের মতো কাঁটা (spur) দিয়ে আক্রমণ করে। এমনকি মানুষের দিকেও ঝাঁপিয়ে পড়তে দ্বিধা করে না। এজন্য অস্ট্রেলিয়ায় এদের nesting season-এ অনেক সময় সতর্ক সাইনবোর্ডও টাঙানো হয়।
এছাড়া শিকারি কাছাকাছি এলে এরা জোরে চিৎকার করে এবং অনেক সময় আহত হওয়ার ভান করে শিকারিকে বাসা থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার এই ক্ষমতা এবং শহুরে জীবনেও বেঁচে থাকার দক্ষতা অস্ট্রেলিয়ান প্লোভারকে বিশেষ করে তুলেছে। এরা শুধু পোকামাকড় খেয়ে পরিবেশ পরিষ্কার রাখে না, বরং প্রকৃতির জীববৈচিত্র্যে এক অনন্য ভারসাম্য রক্ষা করে।