আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ফ্যাসিজম ও গণহত্যার ব্যানার, নেপথ্যে কি?

- আপডেট সময় ১২:০৪:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
- / ২৫৭ বার পড়া হয়েছে
৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর পাল্টে যায় গুলিস্তানের প্রাণকেন্দ্রে থাকা আওয়ামী লীগের ১০তলা কার্যালয়ের চিত্র। ক্ষমতাচ্যুতির পর ভবনটি আগুনে ঝলসে যায়, হয় ভাঙচুর ও লুটপাট। একসময় যেখানে নেতাকর্মীদের ভিড়ে সরগরম থাকত, সেই ভবন দ্রুত পরিণত হয় এক ভুতুড়ে পরিত্যক্ত ভবনে।
তবে সম্প্রতি সেখানে নতুন করে শুরু হয়েছে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। ভবনের প্রবেশমুখে ঝুলছে একটি ব্যানার—“আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট”। কে বা কারা এ কাজ করছে, কে এর নেতৃত্বে, কিংবা ইনস্টিটিউটটির প্রকৃত উদ্দেশ্য কী—এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে চরম ধোঁয়াশা।
যদিও কেউ কেউ ধারণা করছেন, ‘জুলাই যোদ্ধা’দের বিশ্রামকেন্দ্র হিসেবে ভবনটি ব্যবহার করা হতে পারে এবং এর পেছনে থাকতে পারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। কিন্তু সংগঠনগুলো মুখ খুলছে না। এনসিপি নেতারা এ বিষয়ে দায় নিচ্ছেন না, আবার ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও বলছেন, তারা মিডিয়ার মাধ্যমেই ঘটনাটি জানতে পেরেছেন।
ভবনের কাজ তদারক করছেন একজন সাখাওয়াত হোসেন নামের ব্যক্তি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এটি ছিল ফ্যাসিস্টদের আস্তানা। আমরা চাই না এখানে আবার ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠুক। তাই আমরা এ জায়গায় কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি।” তবে তিনি বলেননি, কোন সংগঠনের পক্ষে এ কাজ করছেন বা কারো অনুমতি রয়েছে কি না।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের ডিসি মো. শাহরিয়ার জানিয়েছেন, ভবন পরিষ্কার কিংবা দখলের ব্যাপারে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য নেই, সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো নির্দেশনা আসেনি। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভবনটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় আশপাশে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। এখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। তবে কারা এই কাজ করছে, তা না জানায় সাধারণ মানুষের মনে তৈরি হয়েছে নানামুখী প্রশ্ন।
একজন ব্যবসায়ী মামুনুর রশিদ বলেন, “ব্যানার আছে, কিন্তু কোনো পরিচয় নেই। অনেকে বলছে ছাত্রদের কোনো নতুন দল বা পুরোনো দলের কেউ এ কাজ করছে, আবার কেউ বলছে, আওয়ামী লীগই হয়তো লোক লাগিয়ে কৌশলে তাদের অফিস ফেরত নিচ্ছে। আসলে কোনটা ঠিক তা এখনো পরিষ্কার না।”
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ ১৯৮১ সাল থেকে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ঠিকানায় তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিচালনা করে আসছিল। আট কাঠার জমিটি ৯৯ বছরের জন্য ইজারায় নিয়ে ২০১৬ সালে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই আধুনিক ১০তলা ভবনটি নির্মাণ করা হয়।
দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে আওয়ামী লীগের অফিস বিভিন্ন স্থানে ছিল। ১৯৪৯ সালে দল গঠনের পর প্রথমে নেতাদের বাসায়ই বৈঠক হতো। পরে পুরান ঢাকা, সদরঘাট, পল্টনসহ আটবার অফিস স্থানান্তর হয়। শেষ পর্যন্ত গুলিস্তানের এই কার্যালয়টিই দলের চিহ্ন হয়ে দাঁড়ায়।
বর্তমানে ভবনটির ভবিষ্যৎ নিয়েই উঠছে নানা প্রশ্ন। এটি কী একটি গবেষণা ইনস্টিটিউটে রূপ নেবে, না কি রাজনৈতিক কোনো নতুন শক্তির ঘাঁটি হয়ে উঠবে—সেটি সময়ই বলে দেবে। তবে আপাতত পরিষ্কার একটি বিষয়—গোপনে এবং অজানাভাবে বড় কিছু ঘটছে গুলিস্তানের এই ভবনের ভিতরে।