ঢাকা ০১:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫

    আজ হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কি সহ ইউরোপীয় নেতাদের বৈঠক

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ১১:৪০:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫
    • / ২৫৬ বার পড়া হয়েছে

    মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সোমবার (১৮ আগস্ট) ওয়াশিংটনে যাচ্ছেন। তবে এবারের সফরে তিনি একা নন, বেশ কয়েকজন ইউরোপীয় নেতাও তার সঙ্গে যাচ্ছেন। হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে সবাই উপস্থিত থাকবেন কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছে বিবিসি।

    বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টার্মার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লিয়েনসহ একাধিক নেতা ওয়াশিংটনে যাচ্ছেন। ইউরোপীয় কূটনৈতিক মহলে আশঙ্কা রয়েছে যে ট্রাম্প হয়তো জেলেনস্কিকে কোনো শর্ত মেনে নিতে বাধ্য করতে পারেন। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এই আশঙ্কাকে ‘মিডিয়ার হাস্যকর কল্পনা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

    সম্প্রতি আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ট্রাম্প শুধু যুদ্ধবিরতি নয়, বরং একটি স্থায়ী শান্তিচুক্তির ওপর জোর দেন। যুক্তরাষ্ট্রের এক দূত জানান, আলোচনায় পুতিন ইউক্রেনের জন্য ন্যাটো-সদৃশ নিরাপত্তা চুক্তিতে সম্মত হয়েছেন। ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লিখেছেন, “রাশিয়া নিয়ে বড় অগ্রগতি হয়েছে। অপেক্ষায় থাকুন!”

    রোববার জেলেনস্কি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি-সমর্থিত “কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং“-এর সঙ্গে ভার্চুয়াল সম্মেলনে অংশ নেন। সেখানে ম্যাক্রোঁ সাংবাদিকদের জানান, সোমবার ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় তারা “একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান” উপস্থাপন করবেন।

    সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ জানান, পুতিন ইউক্রেনকে ন্যাটো-সদৃশ সুরক্ষা দিতে সম্মত হয়েছেন, যা গেম-চেঞ্জিং হতে পারে। এই সুরক্ষায় ন্যাটো’র আর্টিকেল-৫-এর মতো বিধান থাকতে পারে, যেখানে কোনো সদস্য আক্রান্ত হলে বাকিরা তাকে রক্ষা করতে বাধ্য থাকে। তবে উইটকফ জানান, রাশিয়া ইউক্রেনের পাঁচটি বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে কিছু ছাড় দিয়েছে। ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের মতে, পুতিন স্পষ্ট করে বলেছেন যে তিনি দনবাসের গুরুত্বপূর্ণ দুটি অঞ্চল—দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক চান।

    অন্যদিকে, রোববার ন্যাটো নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনের সংবিধান অনুযায়ী কোনো ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আলোচনা কেবল ইউক্রেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকেই হতে পারে। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও সতর্ক করে বলেছেন, ইউরোপে ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এই সংঘাতের অবসান দ্রুত হবে বলে আশা করা উচিত নয়। তার মতে, “এখনও অনেকটা পথ বাকি।”

    জেলেনস্কির গত ফেব্রুয়ারির ওয়াশিংটন সফর তিক্ত অভিজ্ঞতায় শেষ হয়েছিল। ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে তর্কের জেরে সেই সফর হঠাৎ করেই শেষ হয়। তখন ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন, জেলেনস্কি “তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন।” এরপর থেকেই ওয়াশিংটন-কিয়েভের সম্পর্ক ভেঙে পড়েছিল। ইউরোপীয় নেতারা এরপর থেকে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা করছেন। জেলেনস্কিকে আলোচনায় ‘চুক্তি-কেন্দ্রিক ভাষা’ ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যা ট্রাম্পের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে। এপ্রিলে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খনিজ সম্পদ সংক্রান্ত চুক্তি করে এবং জুলাইয়ে দুই নেতার মধ্যে একটি টেলিফোনালাপ হয়, যাকে জেলেনস্কি “এখন পর্যন্ত আমাদের সেরা আলোচনা” বলে অভিহিত করেন।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    আজ হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কি সহ ইউরোপীয় নেতাদের বৈঠক

    আপডেট সময় ১১:৪০:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫

    মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সোমবার (১৮ আগস্ট) ওয়াশিংটনে যাচ্ছেন। তবে এবারের সফরে তিনি একা নন, বেশ কয়েকজন ইউরোপীয় নেতাও তার সঙ্গে যাচ্ছেন। হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে সবাই উপস্থিত থাকবেন কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছে বিবিসি।

    বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টার্মার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লিয়েনসহ একাধিক নেতা ওয়াশিংটনে যাচ্ছেন। ইউরোপীয় কূটনৈতিক মহলে আশঙ্কা রয়েছে যে ট্রাম্প হয়তো জেলেনস্কিকে কোনো শর্ত মেনে নিতে বাধ্য করতে পারেন। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এই আশঙ্কাকে ‘মিডিয়ার হাস্যকর কল্পনা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

    সম্প্রতি আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ট্রাম্প শুধু যুদ্ধবিরতি নয়, বরং একটি স্থায়ী শান্তিচুক্তির ওপর জোর দেন। যুক্তরাষ্ট্রের এক দূত জানান, আলোচনায় পুতিন ইউক্রেনের জন্য ন্যাটো-সদৃশ নিরাপত্তা চুক্তিতে সম্মত হয়েছেন। ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লিখেছেন, “রাশিয়া নিয়ে বড় অগ্রগতি হয়েছে। অপেক্ষায় থাকুন!”

    রোববার জেলেনস্কি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি-সমর্থিত “কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং“-এর সঙ্গে ভার্চুয়াল সম্মেলনে অংশ নেন। সেখানে ম্যাক্রোঁ সাংবাদিকদের জানান, সোমবার ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় তারা “একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান” উপস্থাপন করবেন।

    সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ জানান, পুতিন ইউক্রেনকে ন্যাটো-সদৃশ সুরক্ষা দিতে সম্মত হয়েছেন, যা গেম-চেঞ্জিং হতে পারে। এই সুরক্ষায় ন্যাটো’র আর্টিকেল-৫-এর মতো বিধান থাকতে পারে, যেখানে কোনো সদস্য আক্রান্ত হলে বাকিরা তাকে রক্ষা করতে বাধ্য থাকে। তবে উইটকফ জানান, রাশিয়া ইউক্রেনের পাঁচটি বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে কিছু ছাড় দিয়েছে। ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের মতে, পুতিন স্পষ্ট করে বলেছেন যে তিনি দনবাসের গুরুত্বপূর্ণ দুটি অঞ্চল—দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক চান।

    অন্যদিকে, রোববার ন্যাটো নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনের সংবিধান অনুযায়ী কোনো ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আলোচনা কেবল ইউক্রেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকেই হতে পারে। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও সতর্ক করে বলেছেন, ইউরোপে ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এই সংঘাতের অবসান দ্রুত হবে বলে আশা করা উচিত নয়। তার মতে, “এখনও অনেকটা পথ বাকি।”

    জেলেনস্কির গত ফেব্রুয়ারির ওয়াশিংটন সফর তিক্ত অভিজ্ঞতায় শেষ হয়েছিল। ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে তর্কের জেরে সেই সফর হঠাৎ করেই শেষ হয়। তখন ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন, জেলেনস্কি “তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন।” এরপর থেকেই ওয়াশিংটন-কিয়েভের সম্পর্ক ভেঙে পড়েছিল। ইউরোপীয় নেতারা এরপর থেকে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা করছেন। জেলেনস্কিকে আলোচনায় ‘চুক্তি-কেন্দ্রিক ভাষা’ ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যা ট্রাম্পের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে। এপ্রিলে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খনিজ সম্পদ সংক্রান্ত চুক্তি করে এবং জুলাইয়ে দুই নেতার মধ্যে একটি টেলিফোনালাপ হয়, যাকে জেলেনস্কি “এখন পর্যন্ত আমাদের সেরা আলোচনা” বলে অভিহিত করেন।