ঢাকা ১১:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫

    আমার ভিজিট আমরণ ৩০০ টাকাই থাকবে-ডা. এজাজ

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০৭:৪৫:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫
    • / ২৬২ বার পড়া হয়েছে

    নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ শুধু একজন লেখক নন, ছিলেন একাধারে নাট্যকার, গীতিকার, নির্মাতা ও সমাজমনস্ক মানুষ। তার অসামান্য সৃষ্টিকর্ম যেমন সাহিত্যে অমর হয়ে আছে, তেমনি তার নির্মিত নাটক ও চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে বাংলার সমাজ ও মানুষের হৃদয়স্পর্শী চিত্র। তার নির্মাণেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন বহু তারকা, যাদের অন্যতম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা ও চিকিৎসক ডা. এজাজুল ইসলাম।

    হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মৃতিচারণ করেছেন ডা. এজাজ। তিনি বলেন, ১৯৯৮ সালে ‘সবুজ সাথী’ নাটকে একটি ছোট চরিত্রের মাধ্যমে স্যারের সঙ্গে আমার পথচলা শুরু হয়। এরপর থেকে স্যারের প্রায় সব নাটক ও চলচ্চিত্রে আমি কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। ১৯৯৯ সালে ‘শ্রাবণ মেঘের দিনে’ ছবিতে প্রথম বড় চরিত্রে অভিনয় করি, নাম ছিল ‘পরান’।

    একজন নির্মাতা হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন অনন্য। তার নাটকের সংলাপ, আবহ, দৃশ্য—সবকিছু ছিল বাস্তব ও জীবন্ত। তিনি ছিলেন এমন একজন নক্ষত্র, যার অভাব কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। শুধু নির্মাতা নন, মানুষ হিসেবেও ছিলেন দারুণ মানবিক। শুটিংয়ের বাইরে তার ব্যবহার একটুও পরিবর্তন হতো না। তিনি ছিলেন মাটির মানুষ। অনেক সময় শীতে দেখেছি, অন্য কারো গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিচ্ছেন। এসব কখনো প্রচারের জন্য করতেন না, করতেন মনের তাগিদে।

    ডা. এজাজ আরও বলেন, স্যার খুবই নির্লোভ ছিলেন। সামান্য কিছুতেই খুশি হয়ে যেতেন। একবার বৃষ্টির দিনে খাবারে ইলিশ মাছ দেখে তিনি এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে, সেটা আমার কাছে আজও মনে আছে। তার এই সরলতা ও আনন্দ প্রকাশ এখনো হৃদয়ে গেঁথে আছে।

    অভিনয় জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনার কথা তুলে ধরে ডা. এজাজ বলেন, ‘শ্যামল ছায়া’ সিনেমার শুটিংয়ের সময় স্যারের ঠিক করা একটি লোকেশনে গিয়ে দেখি শুটিং সম্ভব নয়। পরিস্থিতি সামাল দিয়ে আমি নিজেই নতুন লোকেশন ঠিক করি। স্যার যখন সেটা দেখলেন, খুব খুশি হয়ে আমাকে বাহবা দেন। বলেছিলেন, “গুড জব ডাক্তার!”—এই একটি বাক্য আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি হয়ে আছে।

    হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে তার লেখা বই ‘আমার হুমায়ূন স্যার’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাঠক এখন আর তার নতুন লেখা পাবেন না। সেই জায়গা থেকেই আমি তাকে নিয়ে লিখতে শুরু করেছি। তার সম্পর্কে মানুষের জানার মতো অনেক অজানা গল্প রয়েছে, যা আমি তুলে ধরতে চাই। ভবিষ্যতে আরও বই লেখার ইচ্ছা আছে, কারণ তাকে নিয়ে এক-দুটা বইয়ে কিছুই শেষ করা যাবে না।

    নিজের চিকিৎসক পরিচয় নিয়ে ডা. এজাজ বলেন, আমাকে অনেকে ‘গরিবের ডাক্তার‘ বলেন। ভালোই লাগে। কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন করেন, আমি কেন এখনও ৩০০ টাকা ফি নিই। আমি বলি, বেশি টাকার পেছনে ছুটে কী হবে? আমি তো ভালো আছি, আমার প্রয়োজন মিটে যাচ্ছে। অপ্রয়োজনীয়ভাবে টাকার পেছনে ছোটা এক ধরনের মানসিক অসুস্থতা বলে মনে করি।

    বর্তমানে অভিনয়ে ব্যস্ততা নিয়ে তিনি বলেন, এখন ‘দেনা পাওনা’ নামে একটি ধারাবাহিকে কাজ করছি। পাশাপাশি কিছু খণ্ডনাটকেও অভিনয় করছি। আগের মতো ব্যস্ততা না থাকলেও অভিনয়ের সঙ্গে আছি, কারণ এটা আমার ভালোবাসা।
    হুমায়ূন আহমেদ শুধু একজন সাহিত্যিক নন, ছিলেন একজন মানবিক বিস্ময়। তার মতো মানুষের সঙ্গে কাজ করা, তার সান্নিধ্যে থাকা, এবং তাকে নিয়ে স্মৃতি ধারণ করা যে কতটা মূল্যবান, তা বোঝা যায় ডা. এজাজের প্রতিটি কথায়। তার স্মৃতিচারণ যেন এক অনবদ্য ভালোবাসার দলিল।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    আমার ভিজিট আমরণ ৩০০ টাকাই থাকবে-ডা. এজাজ

    আপডেট সময় ০৭:৪৫:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫

    নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ শুধু একজন লেখক নন, ছিলেন একাধারে নাট্যকার, গীতিকার, নির্মাতা ও সমাজমনস্ক মানুষ। তার অসামান্য সৃষ্টিকর্ম যেমন সাহিত্যে অমর হয়ে আছে, তেমনি তার নির্মিত নাটক ও চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে বাংলার সমাজ ও মানুষের হৃদয়স্পর্শী চিত্র। তার নির্মাণেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন বহু তারকা, যাদের অন্যতম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা ও চিকিৎসক ডা. এজাজুল ইসলাম।

    হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মৃতিচারণ করেছেন ডা. এজাজ। তিনি বলেন, ১৯৯৮ সালে ‘সবুজ সাথী’ নাটকে একটি ছোট চরিত্রের মাধ্যমে স্যারের সঙ্গে আমার পথচলা শুরু হয়। এরপর থেকে স্যারের প্রায় সব নাটক ও চলচ্চিত্রে আমি কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। ১৯৯৯ সালে ‘শ্রাবণ মেঘের দিনে’ ছবিতে প্রথম বড় চরিত্রে অভিনয় করি, নাম ছিল ‘পরান’।

    একজন নির্মাতা হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন অনন্য। তার নাটকের সংলাপ, আবহ, দৃশ্য—সবকিছু ছিল বাস্তব ও জীবন্ত। তিনি ছিলেন এমন একজন নক্ষত্র, যার অভাব কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। শুধু নির্মাতা নন, মানুষ হিসেবেও ছিলেন দারুণ মানবিক। শুটিংয়ের বাইরে তার ব্যবহার একটুও পরিবর্তন হতো না। তিনি ছিলেন মাটির মানুষ। অনেক সময় শীতে দেখেছি, অন্য কারো গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিচ্ছেন। এসব কখনো প্রচারের জন্য করতেন না, করতেন মনের তাগিদে।

    ডা. এজাজ আরও বলেন, স্যার খুবই নির্লোভ ছিলেন। সামান্য কিছুতেই খুশি হয়ে যেতেন। একবার বৃষ্টির দিনে খাবারে ইলিশ মাছ দেখে তিনি এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে, সেটা আমার কাছে আজও মনে আছে। তার এই সরলতা ও আনন্দ প্রকাশ এখনো হৃদয়ে গেঁথে আছে।

    অভিনয় জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনার কথা তুলে ধরে ডা. এজাজ বলেন, ‘শ্যামল ছায়া’ সিনেমার শুটিংয়ের সময় স্যারের ঠিক করা একটি লোকেশনে গিয়ে দেখি শুটিং সম্ভব নয়। পরিস্থিতি সামাল দিয়ে আমি নিজেই নতুন লোকেশন ঠিক করি। স্যার যখন সেটা দেখলেন, খুব খুশি হয়ে আমাকে বাহবা দেন। বলেছিলেন, “গুড জব ডাক্তার!”—এই একটি বাক্য আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি হয়ে আছে।

    হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে তার লেখা বই ‘আমার হুমায়ূন স্যার’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাঠক এখন আর তার নতুন লেখা পাবেন না। সেই জায়গা থেকেই আমি তাকে নিয়ে লিখতে শুরু করেছি। তার সম্পর্কে মানুষের জানার মতো অনেক অজানা গল্প রয়েছে, যা আমি তুলে ধরতে চাই। ভবিষ্যতে আরও বই লেখার ইচ্ছা আছে, কারণ তাকে নিয়ে এক-দুটা বইয়ে কিছুই শেষ করা যাবে না।

    নিজের চিকিৎসক পরিচয় নিয়ে ডা. এজাজ বলেন, আমাকে অনেকে ‘গরিবের ডাক্তার‘ বলেন। ভালোই লাগে। কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন করেন, আমি কেন এখনও ৩০০ টাকা ফি নিই। আমি বলি, বেশি টাকার পেছনে ছুটে কী হবে? আমি তো ভালো আছি, আমার প্রয়োজন মিটে যাচ্ছে। অপ্রয়োজনীয়ভাবে টাকার পেছনে ছোটা এক ধরনের মানসিক অসুস্থতা বলে মনে করি।

    বর্তমানে অভিনয়ে ব্যস্ততা নিয়ে তিনি বলেন, এখন ‘দেনা পাওনা’ নামে একটি ধারাবাহিকে কাজ করছি। পাশাপাশি কিছু খণ্ডনাটকেও অভিনয় করছি। আগের মতো ব্যস্ততা না থাকলেও অভিনয়ের সঙ্গে আছি, কারণ এটা আমার ভালোবাসা।
    হুমায়ূন আহমেদ শুধু একজন সাহিত্যিক নন, ছিলেন একজন মানবিক বিস্ময়। তার মতো মানুষের সঙ্গে কাজ করা, তার সান্নিধ্যে থাকা, এবং তাকে নিয়ে স্মৃতি ধারণ করা যে কতটা মূল্যবান, তা বোঝা যায় ডা. এজাজের প্রতিটি কথায়। তার স্মৃতিচারণ যেন এক অনবদ্য ভালোবাসার দলিল।