ঢাকা ০৬:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫

    আমেরিকা অন্ধকার সময় পার করছে, রাজনৈতিক সংকট নিয়ে জো বাইডেন

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০৪:১৭:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫
    • / ২৬৪ বার পড়া হয়েছে

    যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দেশটির বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, আমেরিকা এখন এক গভীর অন্ধকার সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে নির্বাহী শাখা, কংগ্রেস এবং সর্বোচ্চ আদালতের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে।

    গত বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) শিকাগোয় জাতীয় বার অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক গালায় ভাষণ দিতে গিয়ে বাইডেন এসব মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে নির্বাহী শাখা যেন দেশের সাংবিধানিক কাঠামো ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা একা নয়, প্রায়শই এক এমন কংগ্রেসের সহায়তায় এটা করছে, যারা একপাশে চুপ করে বসে থাকে। সর্বোচ্চ আদালত যেন এই প্রক্রিয়াকে বৈধতা দেওয়ার কাজে নেমে পড়েছে। তারা যা রায় দিচ্ছে, আমার ঈশ্বর!”

    বাইডেন আরও বলেন, “আমাদের জীবনে কিছু মুহূর্ত আসে, যা আগের সব ইতিহাস থেকে ভবিষ্যৎকে আলাদা করে দেয়। এই মুহূর্তটি তেমনই একটি সময়— যখন সত্য, প্রতিষ্ঠান এবং গণতন্ত্রকে ঘিরে আমাদের কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। নির্বাহী দপ্তরের নির্মম পদক্ষেপ, মৌলিক অধিকার খর্ব, এবং বহু বছরের গড়া আইনি দৃষ্টান্ত বাতিল— সব মিলিয়ে আমরা ইতিহাসের এক বিপজ্জনক বাঁকে এসে দাঁড়িয়েছি।”

    তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে বলেন, “এই লোকটার আমলে আদালত, বিচারক, সংবিধান— এসবের গুরুত্ব আমেরিকানরা নতুন করে উপলব্ধি করছে। দেশ এমন চাপে রয়েছে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি।”
    বাইডেন অভিযোগ করেন, কিছু নামী আইনজীবী প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক চাপের কাছে মাথা নিচু করছে এবং ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে না।

    পাশাপাশি দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর নিরব ভূমিকা নিয়েও তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তার মতে, অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের ‘নির্দয় নীতিকে’ অনেক রাজনীতিক যেমন উল্লাসের সঙ্গে দেখছেন, তা ভয়াবহ এবং গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।

    তিনি বলেন, বর্তমান প্রশাসন যেন তার পূর্বসূরিদের অর্জন মুছে ফেলতে চাইছে। “তারা ইতিহাস গড়তে নয়, ইতিহাস মুছে ফেলতে চায়। তারা সমতা, ন্যায়বিচার— সবকিছুকেই নিশ্চিহ্ন করতে চায়। আমরা যেন এই বাস্তবতাকে গোপন না করি। এটি সত্যি যে, আমরা এক অন্ধকার সময় পার করছি। কিন্তু আমরা সবাই আজ এখানে একসঙ্গে দাঁড়িয়েছি এই কারণে যে, আমাদের ভবিষ্যৎ এখন হুমকির মুখে। তাই আমাদের নির্ভীকভাবে লড়তে হবে।”

    ভাষণের একপর্যায়ে নিজের বয়স নিয়েও রসিকতা করেন বাইডেন। বলেন, “আমি আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে নির্বাচিত হওয়া সিনেটর, আবার সবচেয়ে বেশি বয়সে নির্বাচিত হওয়া প্রেসিডেন্টও! বুঝতেই পারছেন, একই বয়সে দুইবার ৪০ হওয়াটা কেমন!”

    প্রসঙ্গত, বাইডেন বর্তমানে আগ্রাসী প্রকৃতির প্রোস্টেট ক্যানসারের চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর বেশিরভাগ সময় কাটাচ্ছেন ডেলাওয়ারে, তার উইলমিংটন ও রেহোবোথ বিচের বাড়িতে। তিনি জনসমক্ষে খুব কমই আসেন, তবে মাঝে মাঝে বক্তব্য রাখেন এবং একটি নতুন বই নিয়ে কাজ করছেন।

    ভাষণের শেষ অংশে আমেরিকানদের উদ্দেশে বাইডেন ন্যায়ের পক্ষে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। বলেন, “এটা মানে এমন ক্লায়েন্টের পক্ষে দাঁড়ানো, যে বড় চেক লিখতে পারে না, কিন্তু যার মৌলিক অধিকার রক্ষা করা প্রয়োজন। এমন ব্রিফে সই করা, যেটা ক্ষমতাবানদের বিরাগভাজন করতে পারে, কিন্তু আপনি জানেন সেটা ন্যায়ের পক্ষে।

    সংবিধানবিরোধী হুমকির বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে দাঁড়ানো, প্রতিবাদে অংশ নেওয়া, মতপ্রকাশ করা, প্রতিষ্ঠান ও দেশের আত্মার পক্ষে লড়াই করাই এখন আমাদের দায়িত্ব।”

    নিউজটি শেয়ার করুন

    আমেরিকা অন্ধকার সময় পার করছে, রাজনৈতিক সংকট নিয়ে জো বাইডেন

    আপডেট সময় ০৪:১৭:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫

    যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দেশটির বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, আমেরিকা এখন এক গভীর অন্ধকার সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে নির্বাহী শাখা, কংগ্রেস এবং সর্বোচ্চ আদালতের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে।

    গত বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) শিকাগোয় জাতীয় বার অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক গালায় ভাষণ দিতে গিয়ে বাইডেন এসব মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে নির্বাহী শাখা যেন দেশের সাংবিধানিক কাঠামো ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা একা নয়, প্রায়শই এক এমন কংগ্রেসের সহায়তায় এটা করছে, যারা একপাশে চুপ করে বসে থাকে। সর্বোচ্চ আদালত যেন এই প্রক্রিয়াকে বৈধতা দেওয়ার কাজে নেমে পড়েছে। তারা যা রায় দিচ্ছে, আমার ঈশ্বর!”

    বাইডেন আরও বলেন, “আমাদের জীবনে কিছু মুহূর্ত আসে, যা আগের সব ইতিহাস থেকে ভবিষ্যৎকে আলাদা করে দেয়। এই মুহূর্তটি তেমনই একটি সময়— যখন সত্য, প্রতিষ্ঠান এবং গণতন্ত্রকে ঘিরে আমাদের কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। নির্বাহী দপ্তরের নির্মম পদক্ষেপ, মৌলিক অধিকার খর্ব, এবং বহু বছরের গড়া আইনি দৃষ্টান্ত বাতিল— সব মিলিয়ে আমরা ইতিহাসের এক বিপজ্জনক বাঁকে এসে দাঁড়িয়েছি।”

    তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে বলেন, “এই লোকটার আমলে আদালত, বিচারক, সংবিধান— এসবের গুরুত্ব আমেরিকানরা নতুন করে উপলব্ধি করছে। দেশ এমন চাপে রয়েছে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি।”
    বাইডেন অভিযোগ করেন, কিছু নামী আইনজীবী প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক চাপের কাছে মাথা নিচু করছে এবং ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে না।

    পাশাপাশি দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর নিরব ভূমিকা নিয়েও তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তার মতে, অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের ‘নির্দয় নীতিকে’ অনেক রাজনীতিক যেমন উল্লাসের সঙ্গে দেখছেন, তা ভয়াবহ এবং গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।

    তিনি বলেন, বর্তমান প্রশাসন যেন তার পূর্বসূরিদের অর্জন মুছে ফেলতে চাইছে। “তারা ইতিহাস গড়তে নয়, ইতিহাস মুছে ফেলতে চায়। তারা সমতা, ন্যায়বিচার— সবকিছুকেই নিশ্চিহ্ন করতে চায়। আমরা যেন এই বাস্তবতাকে গোপন না করি। এটি সত্যি যে, আমরা এক অন্ধকার সময় পার করছি। কিন্তু আমরা সবাই আজ এখানে একসঙ্গে দাঁড়িয়েছি এই কারণে যে, আমাদের ভবিষ্যৎ এখন হুমকির মুখে। তাই আমাদের নির্ভীকভাবে লড়তে হবে।”

    ভাষণের একপর্যায়ে নিজের বয়স নিয়েও রসিকতা করেন বাইডেন। বলেন, “আমি আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে নির্বাচিত হওয়া সিনেটর, আবার সবচেয়ে বেশি বয়সে নির্বাচিত হওয়া প্রেসিডেন্টও! বুঝতেই পারছেন, একই বয়সে দুইবার ৪০ হওয়াটা কেমন!”

    প্রসঙ্গত, বাইডেন বর্তমানে আগ্রাসী প্রকৃতির প্রোস্টেট ক্যানসারের চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর বেশিরভাগ সময় কাটাচ্ছেন ডেলাওয়ারে, তার উইলমিংটন ও রেহোবোথ বিচের বাড়িতে। তিনি জনসমক্ষে খুব কমই আসেন, তবে মাঝে মাঝে বক্তব্য রাখেন এবং একটি নতুন বই নিয়ে কাজ করছেন।

    ভাষণের শেষ অংশে আমেরিকানদের উদ্দেশে বাইডেন ন্যায়ের পক্ষে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। বলেন, “এটা মানে এমন ক্লায়েন্টের পক্ষে দাঁড়ানো, যে বড় চেক লিখতে পারে না, কিন্তু যার মৌলিক অধিকার রক্ষা করা প্রয়োজন। এমন ব্রিফে সই করা, যেটা ক্ষমতাবানদের বিরাগভাজন করতে পারে, কিন্তু আপনি জানেন সেটা ন্যায়ের পক্ষে।

    সংবিধানবিরোধী হুমকির বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে দাঁড়ানো, প্রতিবাদে অংশ নেওয়া, মতপ্রকাশ করা, প্রতিষ্ঠান ও দেশের আত্মার পক্ষে লড়াই করাই এখন আমাদের দায়িত্ব।”