ইসরায়েলের হামলার জবাব দিতে ইরান প্রস্তুত-সতর্ক বার্তা প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের

- আপডেট সময় ০৮:৩০:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫
- / ২৫৩ বার পড়া হয়েছে
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ইসরায়েলকে কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ার করে বলেছেন, তেহরানের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিলে তা মোকাবিলায় তাঁর দেশ সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, ইরান শুধু আত্মরক্ষার জন্য নয়, প্রয়োজন হলে ইসরায়েলের ভেতরে গভীরভাবে পাল্টা আঘাত হানতেও সক্ষম।
বুধবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরায় প্রচারিত এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ইরানি প্রেসিডেন্ট। গত মাসে ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর এটি ছিল তাঁর অন্যতম প্রথম আন্তর্জাতিক বক্তব্য। সেই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হস্তক্ষেপ করে এবং ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। যদিও আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব হামলায় বাস্তব ক্ষয়ক্ষতি ওয়াশিংটনের দাবি অনুযায়ী তেমন গুরুতর ছিল না।
সাক্ষাৎকারে পেজেশকিয়ান বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতিকে ইরান দীর্ঘস্থায়ী মনে করে না। বরং তিনি এর ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান। তাঁর ভাষায়, “আমরা খুব একটা আশাবাদী নই। কারণ ইসরায়েল অতীতেও শান্তির প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে।” তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েল আমাদের ওপর শক্তিশালী হামলা চালিয়েছে, আমরাও তাদের গভীরে আঘাত হেনেছি। কিন্তু তারা তাদের ক্ষয়ক্ষতি গোপন করছে।”
পেজেশকিয়ান অভিযোগ করেন, ইসরায়েলের সামরিক হামলার উদ্দেশ্য ছিল ইরানের নেতৃত্ব কাঠামোকে ধ্বংস করা এবং দেশটির পরমাণুবিজ্ঞানীদের টার্গেট করে ভয়ভীতির পরিবেশ তৈরি করা। তবে তাঁর দাবি, এসব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে এবং ইরান আরও বেশি প্রস্তুত ও সংগঠিত হয়েছে।
পারমাণবিক ইস্যুতে তিনি বলেন, ইরান আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তির আওতায় থেকেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। তাঁর মতে, ইরানের এই কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে এবং সেটি বিশ্বের কারও জন্য হুমকি নয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় পেজেশকিয়ান বলেন, “ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র থাকা উচিত নয়—আমরাও তা মানি। কারণ, পারমাণবিক অস্ত্র আমরা নীতিগতভাবেই প্রত্যাখ্যান করি। এটি আমাদের রাজনৈতিক, ধর্মীয়, মানবিক এবং কৌশলগত অবস্থানের সঙ্গে যায় না।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইরান কূটনীতিতে বিশ্বাস করে এবং ভবিষ্যতের যেকোনো আলোচনা হবে পারস্পরিক স্বার্থ ও সম্মানের ভিত্তিতে। তাঁর কথায়, “আমরা কোনো হুমকি, চাপ বা জবরদস্তি মেনে নেব না। আমাদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো আপস নেই।”
ইরানের প্রেসিডেন্ট আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল যা-ই দাবি করুক, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এখনও সক্রিয় এবং তা অব্যাহত থাকবে। প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান স্পষ্ট করে বলেন, “আমাদের প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা কোনোভাবেই থেমে থাকবে না, বরং তা আরও শক্তিশালী হবে।”
এই সাক্ষাৎকারে ইরান তার কৌশলগত অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পারমাণবিক পরিকল্পনা নিয়ে যে বার্তা দিয়েছে, তা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নতুন করে উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।