ঢাকা ০৮:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

    উত্তরা মাইলস্টোন কলেজ বিক্ষোভে উত্তাল শিক্ষার্থীরা, উপদেষ্টারা ভবনে অবরুদ্ধ

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০৮:০৩:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
    • / ২৫৪ বার পড়া হয়েছে

    ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। কলেজের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা। তাঁদের বাধার মুখে কলেজ ক্যাম্পাসের ‘একাডেমিক ভবন-৭’-এ আটকা পড়ে আছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।

    সোমবার দুপুরে বিমানবাহিনীর একটি এফটি-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে মাইলস্টোন কলেজের একটি ভবনে পড়ে। ওই দুর্ঘটনায় আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত অন্তত ৩১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং আহত হয়েছেন ১৬৫ জন। এই মর্মান্তিক ঘটনার পর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কলেজ ক্যাম্পাস।

    মঙ্গলবার সকাল ৯টায় কলেজে অবস্থান কর্মসূচির পরিকল্পনা করেছিল শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সকাল সোয়া ৯টার দিকে দিয়াবাড়ি আর্মি ক্যাম্প থেকে মাইকিং করে জানানো হয়, ওই এলাকায় কোনো ধরনের জমায়েত বা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা যাবে না। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা কলেজের বাইরে বিক্ষোভ শুরু করেন।

    সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কলেজ পরিদর্শনে আসেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, সি আর আবরার এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তাঁদের গাড়িবহর কলেজ থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা ঘিরে ধরে বিক্ষোভ শুরু করে। পরিস্থিতির অবনতি হলে উপদেষ্টারা কলেজের ৫ নম্বর ভবনে ফিরে যান এবং সেখানকার কনফারেন্স কক্ষে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন।

    শিক্ষার্থীরা ছয়টি দাবি তুলে ধরেন, যার মধ্যে নিহতদের সঠিক পরিচয় প্রকাশ, আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা, ক্ষতিপূরণ প্রদান, পুরনো যুদ্ধবিমান বাতিল, প্রশিক্ষণ পদ্ধতির সংস্কার এবং শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলার ঘটনায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি রয়েছে।

    আলোচনা শেষে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে জানান, তাঁদের সব দাবি যৌক্তিক এবং সরকার প্রতিটি দাবি পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা আছে। আমরা অভিভাবক হিসেবেই এখানে এসেছি।”

    এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং থেকেও এক বিবৃতিতে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের সব দাবি যৌক্তিক এবং সেগুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে। তবে আশ্বাসের পরও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে, যার ফলে উপদেষ্টারা আবার ভবনে ফিরে যান।

    বিকেল ৫টা ৫২ মিনিটে উপদেষ্টাদের গাড়িবহর কলেজ থেকে বের হয়ে দিয়াবাড়ি মোড়ে পৌঁছালে সেখানে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পড়ে। এরপর তাঁদের গাড়ি ঘুরিয়ে আবার কলেজ ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। বর্তমানে দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিব কলেজের ‘একাডেমিক ভবন-৭’-এর দ্বিতীয় তলায় অবস্থান করছেন। ভবনের সামনে পুলিশ, র‍্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে।

    যদিও কলেজের ভেতরে পরিস্থিতি আপাতত স্বাভাবিক রয়েছে, বাইরে এখনো আন্দোলন চলছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সরকার ও প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা—সবমিলিয়ে উত্তরা মাইলস্টোন কলেজ এখন উত্তেজনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    উত্তরা মাইলস্টোন কলেজ বিক্ষোভে উত্তাল শিক্ষার্থীরা, উপদেষ্টারা ভবনে অবরুদ্ধ

    আপডেট সময় ০৮:০৩:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

    ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। কলেজের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা। তাঁদের বাধার মুখে কলেজ ক্যাম্পাসের ‘একাডেমিক ভবন-৭’-এ আটকা পড়ে আছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।

    সোমবার দুপুরে বিমানবাহিনীর একটি এফটি-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে মাইলস্টোন কলেজের একটি ভবনে পড়ে। ওই দুর্ঘটনায় আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত অন্তত ৩১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং আহত হয়েছেন ১৬৫ জন। এই মর্মান্তিক ঘটনার পর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কলেজ ক্যাম্পাস।

    মঙ্গলবার সকাল ৯টায় কলেজে অবস্থান কর্মসূচির পরিকল্পনা করেছিল শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সকাল সোয়া ৯টার দিকে দিয়াবাড়ি আর্মি ক্যাম্প থেকে মাইকিং করে জানানো হয়, ওই এলাকায় কোনো ধরনের জমায়েত বা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা যাবে না। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা কলেজের বাইরে বিক্ষোভ শুরু করেন।

    সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কলেজ পরিদর্শনে আসেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, সি আর আবরার এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তাঁদের গাড়িবহর কলেজ থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা ঘিরে ধরে বিক্ষোভ শুরু করে। পরিস্থিতির অবনতি হলে উপদেষ্টারা কলেজের ৫ নম্বর ভবনে ফিরে যান এবং সেখানকার কনফারেন্স কক্ষে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন।

    শিক্ষার্থীরা ছয়টি দাবি তুলে ধরেন, যার মধ্যে নিহতদের সঠিক পরিচয় প্রকাশ, আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা, ক্ষতিপূরণ প্রদান, পুরনো যুদ্ধবিমান বাতিল, প্রশিক্ষণ পদ্ধতির সংস্কার এবং শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলার ঘটনায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি রয়েছে।

    আলোচনা শেষে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে জানান, তাঁদের সব দাবি যৌক্তিক এবং সরকার প্রতিটি দাবি পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা আছে। আমরা অভিভাবক হিসেবেই এখানে এসেছি।”

    এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং থেকেও এক বিবৃতিতে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের সব দাবি যৌক্তিক এবং সেগুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে। তবে আশ্বাসের পরও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে, যার ফলে উপদেষ্টারা আবার ভবনে ফিরে যান।

    বিকেল ৫টা ৫২ মিনিটে উপদেষ্টাদের গাড়িবহর কলেজ থেকে বের হয়ে দিয়াবাড়ি মোড়ে পৌঁছালে সেখানে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পড়ে। এরপর তাঁদের গাড়ি ঘুরিয়ে আবার কলেজ ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। বর্তমানে দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিব কলেজের ‘একাডেমিক ভবন-৭’-এর দ্বিতীয় তলায় অবস্থান করছেন। ভবনের সামনে পুলিশ, র‍্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে।

    যদিও কলেজের ভেতরে পরিস্থিতি আপাতত স্বাভাবিক রয়েছে, বাইরে এখনো আন্দোলন চলছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সরকার ও প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা—সবমিলিয়ে উত্তরা মাইলস্টোন কলেজ এখন উত্তেজনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।