ঢাকা ১০:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

    এক রাতে ইউক্রেনে রাশিয়ার নজিরবিহীন ৮০০ ড্রোন হামলা

    ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক
    • আপডেট সময় ০৫:১৬:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
    • / ২৫৫ বার পড়া হয়েছে

    ইউক্রেনজুড়ে আবারও ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। শনিবার রাতভর চালানো এ হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে আট শতাধিক ড্রোন এবং ১৩টি ক্ষেপণাস্ত্র। এর মধ্যে চারটি ছিল ব্যালিস্টিক মিসাইল, বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

    কিয়েভসহ বিভিন্ন এলাকায় রাতভর এ নজিরবিহীন হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩২ বছর বয়সী এক নারী এবং তাঁর মাত্র দুই মাস বয়সী শিশু। ইউক্রেনের পুলিশ জানায়, রাজধানীর স্ভ্যাতোশিনস্কি এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে হামলার পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মা ও সন্তানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই ভবনের একাংশ ধসে পড়ে এবং সেখানে ভয়াবহ আগুন ধরে যায়। আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের ভবন, গাড়ি ও একটি গুদামে। এ ঘটনায় কেবল কিয়েভেই আহত হয়েছেন অন্তত ১৬ জন।

    ইউক্রেনের আঞ্চলিক প্রশাসনের প্রধান ইভান ফেদোরভ জানান, রাশিয়ার এ হামলায় জাপোরিঝঝিয়া শহরে ১৭ জন আহত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৬টি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক, ১২টি ব্যক্তিমালিকানাধীন বাড়ি, একটি কিন্ডারগার্টেন এবং বেশ কিছু কারখানা। শহরের বাইরে নোভোপাভলিভকা গ্রামে ‘গ্লাইড বোমা’ হামলায় এক নারী নিহত হয়েছেন, আরেকজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

    এই হামলার পর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় জেলেনস্কি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্যারিস বৈঠকে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিয়ে যেসব সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়েছে, তার সবগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি বলেন, “যখন কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে, তখন এ ধরনের হত্যাকাণ্ড কেবল ইচ্ছাকৃত অপরাধ নয়, বরং যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা।”

    গত বৃহস্পতিবার প্যারিসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’-এর সদস্য দেশগুলো ইউক্রেনকে যুদ্ধ-পরবর্তী নিরাপত্তা নিশ্চয়তার আশ্বাস দেয়। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রন জানান, ২৬টি দেশ এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনে আন্তর্জাতিক সেনা মোতায়েন এবং দেশটির স্থল, সমুদ্র ও আকাশসীমায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সরাসরি তদারকি। তবে এই ঘোষণা দেওয়ার পরদিনই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইউক্রেনে মোতায়েন করা যেকোনো পশ্চিমা সেনা মস্কোর বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে।

    রোববার নিজের বার্তায় জেলেনস্কি লেখেন, “বিশ্ব চাইলে ক্রেমলিনের অপরাধীদের হত্যাযজ্ঞ থামাতে বাধ্য করতে পারে। প্রয়োজন শুধু রাজনৈতিক সদিচ্ছার।

    অন্যদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ইউক্রেনের ছোড়া অন্তত ৬৯টি ড্রোন তারা ভূপাতিত করেছে। এর মধ্যে ২১টি ধ্বংস করা হয়েছে ক্রাসনোদার ক্রাই অঞ্চলে, ১৩টি ভোরোনেজে এবং ১০টি বেলগোরোদ অঞ্চলে। বাকি ড্রোনগুলো ধ্বংস করা হয়েছে আরও কয়েকটি অঞ্চলে।

    রাতভর এই হামলা এবং প্রতিহত করার লড়াইয়ে আবারও প্রমাণ হলো, ইউক্রেন যুদ্ধ এখনো অচলাবস্থায় থাকলেও ধ্বংসযজ্ঞ ও মানবিক বিপর্যয় ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    এক রাতে ইউক্রেনে রাশিয়ার নজিরবিহীন ৮০০ ড্রোন হামলা

    আপডেট সময় ০৫:১৬:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

    ইউক্রেনজুড়ে আবারও ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। শনিবার রাতভর চালানো এ হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে আট শতাধিক ড্রোন এবং ১৩টি ক্ষেপণাস্ত্র। এর মধ্যে চারটি ছিল ব্যালিস্টিক মিসাইল, বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

    কিয়েভসহ বিভিন্ন এলাকায় রাতভর এ নজিরবিহীন হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩২ বছর বয়সী এক নারী এবং তাঁর মাত্র দুই মাস বয়সী শিশু। ইউক্রেনের পুলিশ জানায়, রাজধানীর স্ভ্যাতোশিনস্কি এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে হামলার পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মা ও সন্তানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই ভবনের একাংশ ধসে পড়ে এবং সেখানে ভয়াবহ আগুন ধরে যায়। আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের ভবন, গাড়ি ও একটি গুদামে। এ ঘটনায় কেবল কিয়েভেই আহত হয়েছেন অন্তত ১৬ জন।

    ইউক্রেনের আঞ্চলিক প্রশাসনের প্রধান ইভান ফেদোরভ জানান, রাশিয়ার এ হামলায় জাপোরিঝঝিয়া শহরে ১৭ জন আহত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৬টি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক, ১২টি ব্যক্তিমালিকানাধীন বাড়ি, একটি কিন্ডারগার্টেন এবং বেশ কিছু কারখানা। শহরের বাইরে নোভোপাভলিভকা গ্রামে ‘গ্লাইড বোমা’ হামলায় এক নারী নিহত হয়েছেন, আরেকজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

    এই হামলার পর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় জেলেনস্কি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্যারিস বৈঠকে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিয়ে যেসব সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়েছে, তার সবগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি বলেন, “যখন কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে, তখন এ ধরনের হত্যাকাণ্ড কেবল ইচ্ছাকৃত অপরাধ নয়, বরং যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা।”

    গত বৃহস্পতিবার প্যারিসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’-এর সদস্য দেশগুলো ইউক্রেনকে যুদ্ধ-পরবর্তী নিরাপত্তা নিশ্চয়তার আশ্বাস দেয়। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রন জানান, ২৬টি দেশ এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনে আন্তর্জাতিক সেনা মোতায়েন এবং দেশটির স্থল, সমুদ্র ও আকাশসীমায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সরাসরি তদারকি। তবে এই ঘোষণা দেওয়ার পরদিনই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইউক্রেনে মোতায়েন করা যেকোনো পশ্চিমা সেনা মস্কোর বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে।

    রোববার নিজের বার্তায় জেলেনস্কি লেখেন, “বিশ্ব চাইলে ক্রেমলিনের অপরাধীদের হত্যাযজ্ঞ থামাতে বাধ্য করতে পারে। প্রয়োজন শুধু রাজনৈতিক সদিচ্ছার।

    অন্যদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ইউক্রেনের ছোড়া অন্তত ৬৯টি ড্রোন তারা ভূপাতিত করেছে। এর মধ্যে ২১টি ধ্বংস করা হয়েছে ক্রাসনোদার ক্রাই অঞ্চলে, ১৩টি ভোরোনেজে এবং ১০টি বেলগোরোদ অঞ্চলে। বাকি ড্রোনগুলো ধ্বংস করা হয়েছে আরও কয়েকটি অঞ্চলে।

    রাতভর এই হামলা এবং প্রতিহত করার লড়াইয়ে আবারও প্রমাণ হলো, ইউক্রেন যুদ্ধ এখনো অচলাবস্থায় থাকলেও ধ্বংসযজ্ঞ ও মানবিক বিপর্যয় ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।