ঢাকা ১০:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

    এবার যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ অভিবাসীদেরও বহিষ্কার শুরু করল ট্রাম্প প্রশাসন , বাতিল হচ্ছে টিপিএস সুরক্ষা

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ১২:৫৯:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
    • / ২৬৩ বার পড়া হয়েছে

    যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে শুরু হওয়া নতুন দমন অভিযানে বৈধভাবে বসবাসকারী অভিবাসীরাও এখন বহিষ্কারের মুখে পড়ছেন। এবার তার নজরে পড়েছে সেই ১২ লাখ অভিবাসী, যাদের অস্থায়ী সুরক্ষা বা টেম্পোরারি প্রোটেকটেড স্ট্যাটাস (টিপিএস) দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

    টিপিএস মূলত যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত দেশ থেকে পালিয়ে আসা নাগরিকদের জন্য সাময়িক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, যাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ মাস পর্যন্ত বৈধভাবে অবস্থান ও কাজ করতে পারেন। এই অনুমতিপত্র নবায়নযোগ্য হলেও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সচিব ক্রিস্টি নোম ৭ লাখের বেশি টিপিএসধারী অভিবাসীর সুরক্ষা বাতিল করেছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস।

    সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হাইতির ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮৭ জন নাগরিক, যাঁরা সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়ে দেশটি থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। একইভাবে দমন-পীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা ৩ লাখ ৪৮ হাজার ভেনেজুয়েলান এবং ১১ হাজার ৭০০ আফগান নাগরিকও এই সিদ্ধান্তে প্রভাবিত হচ্ছেন।

    টিপিএস প্রাপ্ত এক হাইতিয়ান নাগরিক বলেন, “আমি কখনো অবৈধভাবে এখানে আসিনি বা অবস্থান করিনি। আমি অপরাধী নই। যদি আমাকে হাইতিতে ফিরতে হয়, তাহলে শুধু প্রার্থনা করব যেন গুলি খেয়ে মরতে না হয়।” এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়েছে ৫২ হাজার হন্ডুরাসের নাগরিক এবং ৩ হাজার নিকারাগুয়ানদের ওপরও, যারা ১৯৯৯ সাল থেকে টিপিএস সুবিধা পাচ্ছিলেন। হন্ডুরাসে যুক্তরাষ্ট্রের উপদূত লিওনার্দো ভালেনজুয়েলা নেদা বলেন, “হন্ডুরাস এখনও এত বিশাল সংখ্যক অভিবাসী ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়।”

    এছাড়া ট্রাম্প প্রশাসনের নজরে পড়েছে বাইডেন সরকারের দেওয়া ‘মানবিক প্যারোল’ সুবিধাপ্রাপ্ত অভিবাসীরাও। এই প্যারোলের আওতায় থাকা অভিবাসীরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে থাকার ও কাজ করার অনুমতি পেলেও, বর্তমানে তাদের মামলার শুনানি বাতিল করছে অভিবাসন আদালত। অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এজেন্টরা এসব অভিবাসীকে এখন কোনো ধরনের শুনানি ছাড়াই আটক করে দ্রুত বহিষ্কারের ব্যবস্থা নিচ্ছে। অধিকারকর্মীরা এ ধরনের পদক্ষেপকে আখ্যা দিয়েছেন ‘রিমুভালপালুজা’ বা ‘বহিষ্কার উৎসব’ নামে।

    ট্রাম্প প্রশাসনের আরেকটি নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, যেসব অভিবাসী অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন, তারা এখন আর আদালতে বহিষ্কারের প্রক্রিয়া চলাকালীন জামিনের আবেদন করতে পারবেন না। ৮ জুলাই আইসিই-এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টড লায়ন্স এক স্মারকে জানিয়েছেন, আদালতের পুরো প্রক্রিয়া চলাকালীন অভিবাসীদের আটক রাখা যাবে। এই প্রক্রিয়া বহু মাস, এমনকি বছরের পর বছরও চলতে পারে এবং এটি লক্ষাধিক নতুন অভিবাসীর ওপর প্রযোজ্য হতে পারে।

    এই বহিষ্কার অভিযান বাস্তবায়নের জন্য সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেস ৪৫ বিলিয়ন ডলারের একটি বাজেট অনুমোদন করেছে, যা চার বছর মেয়াদে অবৈধ অভিবাসী আটকের জন্য ব্যয় করা হবে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র অ্যাবিগেইল জ্যাকসন বলেন, “টিপিএস প্রোগ্রাম কোনোদিনই স্থায়ী নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বসবাসের পথ হিসেবে তৈরি করা হয়নি।” তিনি আরও বলেন, “বাইডেন প্রশাসন এই প্রোগ্রামের অপব্যবহার করেছে।”

    সব মিলিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কৌশল এখন একেবারেই স্পষ্ট: বৈধ বা অবৈধ, উভয় ধরনের অভিবাসীর বিরুদ্ধেই শুরু হয়েছে কঠোর পদক্ষেপ। এটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে এক নতুন ও কড়া দিকচিহ্ন তৈরি করছে, যা দেশটির অভিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য এক গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    এবার যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ অভিবাসীদেরও বহিষ্কার শুরু করল ট্রাম্প প্রশাসন , বাতিল হচ্ছে টিপিএস সুরক্ষা

    আপডেট সময় ১২:৫৯:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

    যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে শুরু হওয়া নতুন দমন অভিযানে বৈধভাবে বসবাসকারী অভিবাসীরাও এখন বহিষ্কারের মুখে পড়ছেন। এবার তার নজরে পড়েছে সেই ১২ লাখ অভিবাসী, যাদের অস্থায়ী সুরক্ষা বা টেম্পোরারি প্রোটেকটেড স্ট্যাটাস (টিপিএস) দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

    টিপিএস মূলত যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত দেশ থেকে পালিয়ে আসা নাগরিকদের জন্য সাময়িক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, যাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ মাস পর্যন্ত বৈধভাবে অবস্থান ও কাজ করতে পারেন। এই অনুমতিপত্র নবায়নযোগ্য হলেও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সচিব ক্রিস্টি নোম ৭ লাখের বেশি টিপিএসধারী অভিবাসীর সুরক্ষা বাতিল করেছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস।

    সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হাইতির ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮৭ জন নাগরিক, যাঁরা সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়ে দেশটি থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। একইভাবে দমন-পীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা ৩ লাখ ৪৮ হাজার ভেনেজুয়েলান এবং ১১ হাজার ৭০০ আফগান নাগরিকও এই সিদ্ধান্তে প্রভাবিত হচ্ছেন।

    টিপিএস প্রাপ্ত এক হাইতিয়ান নাগরিক বলেন, “আমি কখনো অবৈধভাবে এখানে আসিনি বা অবস্থান করিনি। আমি অপরাধী নই। যদি আমাকে হাইতিতে ফিরতে হয়, তাহলে শুধু প্রার্থনা করব যেন গুলি খেয়ে মরতে না হয়।” এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়েছে ৫২ হাজার হন্ডুরাসের নাগরিক এবং ৩ হাজার নিকারাগুয়ানদের ওপরও, যারা ১৯৯৯ সাল থেকে টিপিএস সুবিধা পাচ্ছিলেন। হন্ডুরাসে যুক্তরাষ্ট্রের উপদূত লিওনার্দো ভালেনজুয়েলা নেদা বলেন, “হন্ডুরাস এখনও এত বিশাল সংখ্যক অভিবাসী ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়।”

    এছাড়া ট্রাম্প প্রশাসনের নজরে পড়েছে বাইডেন সরকারের দেওয়া ‘মানবিক প্যারোল’ সুবিধাপ্রাপ্ত অভিবাসীরাও। এই প্যারোলের আওতায় থাকা অভিবাসীরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে থাকার ও কাজ করার অনুমতি পেলেও, বর্তমানে তাদের মামলার শুনানি বাতিল করছে অভিবাসন আদালত। অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এজেন্টরা এসব অভিবাসীকে এখন কোনো ধরনের শুনানি ছাড়াই আটক করে দ্রুত বহিষ্কারের ব্যবস্থা নিচ্ছে। অধিকারকর্মীরা এ ধরনের পদক্ষেপকে আখ্যা দিয়েছেন ‘রিমুভালপালুজা’ বা ‘বহিষ্কার উৎসব’ নামে।

    ট্রাম্প প্রশাসনের আরেকটি নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, যেসব অভিবাসী অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন, তারা এখন আর আদালতে বহিষ্কারের প্রক্রিয়া চলাকালীন জামিনের আবেদন করতে পারবেন না। ৮ জুলাই আইসিই-এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টড লায়ন্স এক স্মারকে জানিয়েছেন, আদালতের পুরো প্রক্রিয়া চলাকালীন অভিবাসীদের আটক রাখা যাবে। এই প্রক্রিয়া বহু মাস, এমনকি বছরের পর বছরও চলতে পারে এবং এটি লক্ষাধিক নতুন অভিবাসীর ওপর প্রযোজ্য হতে পারে।

    এই বহিষ্কার অভিযান বাস্তবায়নের জন্য সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেস ৪৫ বিলিয়ন ডলারের একটি বাজেট অনুমোদন করেছে, যা চার বছর মেয়াদে অবৈধ অভিবাসী আটকের জন্য ব্যয় করা হবে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র অ্যাবিগেইল জ্যাকসন বলেন, “টিপিএস প্রোগ্রাম কোনোদিনই স্থায়ী নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বসবাসের পথ হিসেবে তৈরি করা হয়নি।” তিনি আরও বলেন, “বাইডেন প্রশাসন এই প্রোগ্রামের অপব্যবহার করেছে।”

    সব মিলিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কৌশল এখন একেবারেই স্পষ্ট: বৈধ বা অবৈধ, উভয় ধরনের অভিবাসীর বিরুদ্ধেই শুরু হয়েছে কঠোর পদক্ষেপ। এটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে এক নতুন ও কড়া দিকচিহ্ন তৈরি করছে, যা দেশটির অভিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য এক গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।