ঐতিহাসিক সাফল্যের নায়িকা ঋতুপর্ণারা, এশিয়া থেকে লক্ষ্য এবার বিশ্বমঞ্চ

- আপডেট সময় ০৪:৪৮:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫
- / ২৬১ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের জন্য রোববার রাতটি ছিল এক ইতিহাসগড়া মুহূর্ত। প্রথমবারের মতো এএফসি নারী এশিয়ান কাপের মূলপর্বে জায়গা করে নেওয়ার আনন্দে রাজধানীর হাতিরঝিলে আয়োজিত হয় মধ্যরাতের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। সেখানে ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করা হয় দলের খেলোয়াড়দের।
এই ঐতিহাসিক অর্জনের অন্যতম নায়িকা ছিলেন ফরোয়ার্ড ঋতুপর্ণা চাকমা। তিনটি ম্যাচে পাঁচটি গোল করে তিনি দলের সাফল্যে রেখেছেন বড় ভূমিকা। বাহরাইন, মিয়ানমার ও তুর্কেমেনিস্তানের বিপক্ষে মাঠে দাপুটে পারফরম্যান্সের পাশাপাশি গোল করিয়েছেন সতীর্থদের দিয়েও। এমন পারফরম্যান্সের পর হাতিরঝিলের মঞ্চে দাঁড়িয়ে ঋতুপর্ণা জানান, তাদের লক্ষ্য শুধু এশিয়াতেই সীমাবদ্ধ নয়, তারা বিশ্ব ফুটবলেও বাংলাদেশের পতাকা ওড়াতে চান।
ঋতুপর্ণা চাকমা বলেন, “প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই আমাদের দর্শকদের, যারা এত রাতে এসে আমাদের বরণ করে নিয়েছেন। এই সাফল্য একক কারও নয়, এটি দলীয় প্রচেষ্টার ফল। ফুটবল কখনোই ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের খেলা নয়। আমরা কঠিন পরিস্থিতিতে কিভাবে লড়াই করতে হয়, তা জানি। আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখুন, আমরা বাংলাদেশকে আরও বড় মঞ্চে পৌঁছে দেব।”
দলের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গেই রোববার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে ঋতুপর্ণা এবং অধিনায়ক আফিদা খন্দকার মিয়ানমার থেকে থাইল্যান্ড হয়ে ঢাকায় পৌঁছান। সেখান থেকে সরাসরি যান হাতিরঝিলে। রাত ৩টা ১৫ মিনিটে সংবর্ধনাস্থলে পৌঁছালে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাহী কমিটির সদস্যরা তাদের ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
সংবর্ধনায় দলের অধিনায়ক আফিদা খন্দকার বলেন, “এই সাফল্য একদিনে আসেনি। আমরা অনেক দিন ধরে কঠোর পরিশ্রম করেছি। আজকের এই মুহূর্ত আমাদের জন্য অনেক আবেগের, যা কোনোদিন ভুলবো না। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেন আমরা আরও ভালো কিছু করতে পারি। শুধু দক্ষিণ এশিয়া কিংবা এশিয়ায় নয়, আমরা বিশ্বমঞ্চেও বাংলাদেশের নাম তুলে ধরতে চাই।”
মেয়েদের এই সাফল্যের পেছনে দলীয় প্রচেষ্টা ও কোচিংয়ের ভূমিকা তুলে ধরেন কোচ পিটার বাটলার। তিনি বলেন, “গত সপ্তাহটি শুধু কঠিনই ছিল না, বরং গত ৯ থেকে ১২ সপ্তাহ আমরা অসাধারণ কঠোর পরিশ্রম করেছি। এর শুরু আরও অনেক আগে। এই সময়ে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। মেয়েরা সেই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করেছে বলেই আজ আমরা এই অবস্থানে। আমি এই দল, খেলোয়াড় এবং টিম স্টাফদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।”
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ, বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালসহ অনেকে। বক্তারা নারী ফুটবলারদের এই অসামান্য অর্জনে দেশের মানুষের গর্ব, উচ্ছ্বাস এবং নতুন আশার কথা তুলে ধরেন। ঋতুপর্ণা ও তার দল যেভাবে দেশের ফুটবলে ইতিহাস গড়েছে, তাতে নতুন প্রজন্মের জন্য ফুটবল কেবল খেলাই নয়, হয়ে উঠেছে আত্মবিশ্বাস ও স্বপ্নের প্রতীক। এখন তাদের লক্ষ্য বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা—সেটিই পরবর্তী চ্যালেঞ্জ।