গণঅভ্যুত্থান হত্যা মামলা, শেখ হাসিনাসহ ১১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল

- আপডেট সময় ০৭:০১:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৫১ বার পড়া হয়েছে
২০২৪ সালের ফ্যাসিবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আশুলিয়া এবং সাভার মডেল থানায় দায়ের করা তিনটি মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে। ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহীনুর কবীর নিশ্চিত করেছেন, প্রায় এক বছরের তদন্ত শেষে গত বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদনগুলো জমা দেওয়া হয়।
তিনটি মামলার মধ্যে একটি সাভার মডেল থানায় এবং দুটি আশুলিয়া থানায় দায়ের করা হয়েছিল। সাভার মডেল থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় শহীদ নবী নুর মোড়লের স্ত্রী আকলিমা বেগম ১২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। তদন্ত শেষে ১১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে, যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এবং সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানসহ শীর্ষস্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম রয়েছে। মামলার এজাহারভুক্ত ১৮ জন আসামির বিরুদ্ধে প্রমাণ না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আশুলিয়া থানায় দায়ের করা দুটি মামলার মধ্যে একটির বাদী শহীদ মামুন খন্দকারের স্ত্রী মোসাম্মৎ সাথী। তিনি ৩৩ জনকে আসামি করে মামলা করেছিলেন, তবে তদন্তে আরও ১৯ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় মোট ৪৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। এই চার্জশিটে সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম, আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কবির সরকার, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নূরুল ইসলাম এবং ঢাকা জেলার সাবেক পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামানসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর নাম এসেছে। এই মামলায় এজাহারভুক্ত ৭ জন এবং এজাহার বহির্ভূত ১ জনের বিরুদ্ধে প্রমাণ না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়।
আশুলিয়া থানার অপর মামলাটি শহীদ রমজান আলীর বাবা নজরুল ইসলাম ৬০ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করেছিলেন। তদন্তের পর ৪৯ জন আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এই মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক এমপি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে। এছাড়াও সাবেক চেয়ারম্যান মো. পারভেজ দেওয়ান, সুমন ভূঁইয়া এবং কবির সরকারসহ ৪৯ জনের নাম চার্জশিটে রয়েছে। এই মামলায় ১৭ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, আন্দোলনের সময় দায়ের করা ৮১টি মামলার কয়েক হাজার আসামির মধ্যে প্রায় ১ হাজার ১০০ জনকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। জুলাই বিপ্লবে সাভারে ৭১ জন শহীদ হয়েছিলেন এবং এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বাকি ৭৯টি মামলার যাচাই-বাছাই কাজও চলছে।
অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতা, যেমন সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব এবং সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান, গোপনে দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখান থেকে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। এছাড়াও, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম এবং ঢাকার সাবেক পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামানসহ অনেক পুলিশ সদস্যও দেশ ছেড়েছেন। সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।