গাজা ও সিরিয়ায় ইসরায়েলের হামলায় বিস্মিত ট্রাম্প, নেতানিয়াহুকে ফোনে ক্ষোভ প্রকাশ

- আপডেট সময় ০২:৩৯:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫
- / ২৬০ বার পড়া হয়েছে
গাজা এবং সিরিয়ায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযানে প্রকাশ্যভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, উভয় ঘটনার পরই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ফোন করে বিষয়টি ‘সংশোধনের’ আহ্বান জানান তিনি। এই ঘটনাগুলো দুই নেতার মধ্যকার সম্পর্ককে আরও উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
গাজায় একমাত্র ক্যাথলিক গির্জায় ইসরায়েলি হামলার খবর পাওয়ার পরপরই নেতানিয়াহুকে ফোন করে ট্রাম্প এ হামলাকে ‘ভুল’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি চান, প্রধানমন্ত্রী যেন এই বিষয়ে একটি প্রকাশ্য বিবৃতি দেন। একইভাবে, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে সরকারি স্থাপনায় ইসরায়েলের বিমান হামলার খবরেও ট্রাম্প বিস্ময় প্রকাশ করেন। ওই সময় ট্রাম্প প্রশাসন যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়াকে পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলাইন লেভিট বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহুর পেশাদার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের এবং তারা নিয়মিত যোগাযোগ করেন। তবে গাজা ও সিরিয়ায় সংঘটিত সাম্প্রতিক হামলাগুলো প্রেসিডেন্টকে বিস্মিত করেছে। তিনি দ্রুত নেতানিয়াহুকে ফোন করে তাঁর অসন্তোষ জানান এবং পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রেস সচিব লেভিট আরও জানান, সিরিয়ায় উত্তেজনা প্রশমনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেখানে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সরকারকে সমর্থন দিচ্ছেন।
এদিকে, চলতি মাসের শুরুতে হোয়াইট হাউসে নেতানিয়াহুর সঙ্গে নৈশভোজে দেখা করেছিলেন ট্রাম্প। সেই সময় নেতানিয়াহু তাঁকে একটি চিঠি দেন, যেখানে ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়ার কথা জানানো হয়। অনেকের ধারণা ছিল, এর মাধ্যমে দুই নেতার মধ্যে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। ট্রাম্পও আশা করেছিলেন, নেতানিয়াহুর চার দিনের সফরে গাজায় যুদ্ধবিরতির অগ্রগতি হবে এবং বন্দিমুক্তির পথে পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।
কিন্তু সফর শেষে নেতানিয়াহু কোনো সমঝোতার ঘোষণা না দিয়েই যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করেন। যুদ্ধবিরতি ও বন্দিমুক্তির বিষয়ে সর্বশেষ প্রস্তাব হামাসের কাছে পাঠানো হয়েছে প্রায় এক সপ্তাহ আগে, তবে তারা এখনো চূড়ান্ত জবাব দেয়নি। সিএনএনের দুটি সূত্র জানিয়েছে, হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং বন্দিমুক্তির জন্য ‘দিনরাত নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছে।’
এই প্রেক্ষাপটে গাজায় চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও নৃশংস রূপ নিচ্ছে। বিশেষ করে গির্জায় সাম্প্রতিক বিস্ফোরণে তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনা ট্রাম্পকে গভীরভাবে চিন্তিত করেছে। প্রেস সচিব লেভিট বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যের এ সংঘাত বহুদিন ধরে চলমান এবং তা সাম্প্রতিক সময় আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট কখনোই এমন মৃত্যু দেখতে চান না। তিনি চান, এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হোক।”
তিনি আরও বলেন, গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে যুক্তরাষ্ট্র যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। যদিও পশ্চিমা বিশ্বের ২৫টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা অভিযোগ করেছেন, ইসরায়েল কেবল ‘ফোঁটায় ফোঁটায় ত্রাণ প্রবেশের’ অনুমতি দিচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, মে মাসের শেষ দিক থেকে এখন পর্যন্ত এক হাজারের বেশি মানুষ ইসরায়েলি গুলিতে নিহত হয়েছেন, যাঁরা মানবিক সহায়তার খোঁজে ত্রাণকেন্দ্রে গিয়েছিলেন।
লেভিট বলেন, “এই প্রেসিডেন্টের কারণে গাজায় কিছুটা হলেও ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। তিনি চান, পুরো বিষয়টি যেন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় এবং আর কোনো প্রাণহানি না ঘটে।”