ঢাকা ০৩:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

    গোপালগঞ্জে এনসিপি সমাবেশে রক্তক্ষয়ী হামলা, গুলিতে নিহত ৩

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০৮:২০:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
    • / ২৫৫ বার পড়া হয়েছে

    গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় রক্ত ঝরেছে। বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেলে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন। নিহতদের পরিবার ও হাসপাতাল সূত্রে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

    নিহত তিনজন হলেন—গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন রোডের দীপ্ত সাহা (২৫), কোটালীপাড়ার রমজান কাজী (১৮) এবং টুঙ্গীপাড়ার সোহেল মোল্লা (৪১)। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জীবিতেষ বিশ্বাস জানান, তিনজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মৃত এনে ভর্তি করা হয়। তাঁদের শরীরে গুলির চিহ্ন ছিল। তিনি আরও জানান, আহত অবস্থায় আরও ৯ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং তাদের অস্ত্রোপচার চলছে। নিহত দীপ্ত সাহার চাচা জানান, দুপুরে খাবার খেয়ে দোকানে যাওয়ার পথে চৌরঙ্গী এলাকায় তার পেটে গুলি লাগে।

    নিহত রমজান কাজীর বাবা কামরুল কাজী বলেন, “আমার ছেলেটা তো কোনো দোষ করেনি, ওকে কেন মারল?” নিহত সোহেল মোল্লার পরিচয় নিশ্চিত করেন কেরামত আলী প্লাজার মোবাইল ব্যবসায়ী জনি খান, যিনি তাঁর সহকর্মী ছিলেন।

    গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান এবং জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হননি। এর আগে বেলা পৌনে ২টার দিকে গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশ শুরু হওয়ার আগে ২০০ থেকে ৩০০ জন লাঠিসোঁটা নিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে সেখানে হাজির হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঞ্চে তখনো এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত হননি।

    পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকলে পুলিশ মঞ্চের পাশ থেকে সরে গিয়ে আদালত ভবনে আশ্রয় নেয়। এনসিপির নেতাকর্মীরাও দ্রুত ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। হামলাকারীরা ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে, চেয়ার ভাঙচুর করে এবং এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে। বেলা ২টা ৫ মিনিটে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশে উপস্থিত হন এবং বক্তব্য দেন।

    সমাবেশ শেষে নেতাকর্মীরা যখন গাড়ি বহর নিয়ে স্থান ত্যাগ করছিলেন, তখন আবারও তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলায় গুলি ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে, যার ফলেই প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটে। এর আগে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কংশুরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়িবহরেও হামলা হয়। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেখা যায় গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. পিয়াল লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন।

    পাশে একজনকে বলতে শোনা যায়, “আমরা পিয়াল ভাইয়ের সাথে আছি।” এই ঘটনায় এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী অভিযোগ করেন, “সমাবেশের আগে আমাদের বলা হয়েছিল সব কিছু নিয়ন্ত্রণে আছে, কিন্তু বাস্তবে ছিল না। আওয়ামী লীগের লোকজন আমাদের ঘিরে হামলা চালিয়েছে, পুলিশ ও সেনাবাহিনী তখন নিষ্ক্রিয় ছিল।”

    সহিংসতার পর গোপালগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন এবং পরে রাত ৮টা থেকে কারফিউ ঘোষণা করা হয়, যা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এই ঘটনার পর সারাদেশেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে চরম ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি এখনো থমথমে, রাজনীতি অস্থিরতার দিকেই এগোচ্ছে।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    গোপালগঞ্জে এনসিপি সমাবেশে রক্তক্ষয়ী হামলা, গুলিতে নিহত ৩

    আপডেট সময় ০৮:২০:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

    গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় রক্ত ঝরেছে। বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেলে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন। নিহতদের পরিবার ও হাসপাতাল সূত্রে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

    নিহত তিনজন হলেন—গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন রোডের দীপ্ত সাহা (২৫), কোটালীপাড়ার রমজান কাজী (১৮) এবং টুঙ্গীপাড়ার সোহেল মোল্লা (৪১)। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জীবিতেষ বিশ্বাস জানান, তিনজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মৃত এনে ভর্তি করা হয়। তাঁদের শরীরে গুলির চিহ্ন ছিল। তিনি আরও জানান, আহত অবস্থায় আরও ৯ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং তাদের অস্ত্রোপচার চলছে। নিহত দীপ্ত সাহার চাচা জানান, দুপুরে খাবার খেয়ে দোকানে যাওয়ার পথে চৌরঙ্গী এলাকায় তার পেটে গুলি লাগে।

    নিহত রমজান কাজীর বাবা কামরুল কাজী বলেন, “আমার ছেলেটা তো কোনো দোষ করেনি, ওকে কেন মারল?” নিহত সোহেল মোল্লার পরিচয় নিশ্চিত করেন কেরামত আলী প্লাজার মোবাইল ব্যবসায়ী জনি খান, যিনি তাঁর সহকর্মী ছিলেন।

    গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান এবং জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হননি। এর আগে বেলা পৌনে ২টার দিকে গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশ শুরু হওয়ার আগে ২০০ থেকে ৩০০ জন লাঠিসোঁটা নিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে সেখানে হাজির হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঞ্চে তখনো এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত হননি।

    পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকলে পুলিশ মঞ্চের পাশ থেকে সরে গিয়ে আদালত ভবনে আশ্রয় নেয়। এনসিপির নেতাকর্মীরাও দ্রুত ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। হামলাকারীরা ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে, চেয়ার ভাঙচুর করে এবং এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে। বেলা ২টা ৫ মিনিটে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশে উপস্থিত হন এবং বক্তব্য দেন।

    সমাবেশ শেষে নেতাকর্মীরা যখন গাড়ি বহর নিয়ে স্থান ত্যাগ করছিলেন, তখন আবারও তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলায় গুলি ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে, যার ফলেই প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটে। এর আগে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কংশুরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়িবহরেও হামলা হয়। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেখা যায় গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. পিয়াল লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন।

    পাশে একজনকে বলতে শোনা যায়, “আমরা পিয়াল ভাইয়ের সাথে আছি।” এই ঘটনায় এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী অভিযোগ করেন, “সমাবেশের আগে আমাদের বলা হয়েছিল সব কিছু নিয়ন্ত্রণে আছে, কিন্তু বাস্তবে ছিল না। আওয়ামী লীগের লোকজন আমাদের ঘিরে হামলা চালিয়েছে, পুলিশ ও সেনাবাহিনী তখন নিষ্ক্রিয় ছিল।”

    সহিংসতার পর গোপালগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন এবং পরে রাত ৮টা থেকে কারফিউ ঘোষণা করা হয়, যা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এই ঘটনার পর সারাদেশেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে চরম ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি এখনো থমথমে, রাজনীতি অস্থিরতার দিকেই এগোচ্ছে।