ঢাকা ০৭:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

    জাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের ৮ দফা ইশতেহার ঘোষণা

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০৭:০৩:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
    • / ২৫৪ বার পড়া হয়েছে

    জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদল মনোনীত ‘সাদী-বৈশাখী-সাজ্জাদ-ইকরা পরিষদ’ ইশতেহার ঘোষণা করেছে। শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় নির্মিত ‘অদম্য-২৪’ স্মৃতিস্তম্ভের পাদদেশে প্যানেলের সদস্যরা তাঁদের ইশতেহার প্রকাশ করেন।

    ‘প্রতিশ্রুতি নয়, পরিবর্তনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ’—এই স্লোগানকে সামনে রেখে ইশতেহারে আটটি মূল অঙ্গীকার ঘোষণা করা হয়। সেখানে শিক্ষা ও গবেষণাকে প্রাধান্য দিয়ে আধুনিক, নারীবান্ধব ও নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা হয়।
    ইশতেহারে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম নির্দিষ্ট অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে। ক্লাস, পরীক্ষা ও ফলাফল সবকিছুই এই ক্যালেন্ডারের আওতায় চলবে।

    নিয়মিত জাকসু নির্বাচনও ওই ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কোর্স কারিকুলামকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার পাশাপাশি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য বুনিয়াদী ইংরেজি কোর্স চালু করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানের ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। অপ্রয়োজনীয় কোনো বিভাগ চালু না করে রাষ্ট্র, সমাজ ও সময়ের প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন বিভাগ খোলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

    এ ছাড়া অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম চালু করে শিক্ষার্থীদের জন্য রেকর্ডেড লেকচার সহজলভ্য করা, ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুযোগ সৃষ্টি, ইন্টারন্যাশনাল অফিসকে গতিশীল করা, শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপের সুযোগ তৈরি এবং ক্যাম্পাসে পার্টটাইম চাকরির ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষকদের পারফরম্যান্স মূল্যায়নের ব্যবস্থার কথাও উল্লেখ করা হয়।

    নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ইশতেহারের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার হিসেবে স্থান পেয়েছে। সেখানে বলা হয়, নারী নিপীড়ন, ইভটিজিং ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কোনোদিন আপস করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না। নারী হলগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত সীমানা প্রাচীর ও অ্যাপ্রোচ রোড সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। নতুন হলগুলোতে করিডরের পাশে লোহার গ্রিল ও সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। পড়াশোনা ও মাতৃত্বের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চাইল্ড কেয়ার সেন্টার স্থাপন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

    নারী শিক্ষার্থীদের জন্য খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের এই সেন্টারে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনাও ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়কে নারী রাজনীতিবান্ধব ক্যাম্পাসে রূপান্তরিত করা, যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল সংস্কার করে আরও কার্যকর করা, অনলাইনে হেনস্তার ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ এবং অ্যান্টি হ্যারাসমেন্ট সেল গঠন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

    মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার অঙ্গীকার হিসেবে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রকে আধুনিকায়ন করা হবে। অবকাঠামো উন্নয়ন, সার্বক্ষণিক চিকিৎসক ও নার্সের উপস্থিতি, অ্যাম্বুলেন্স ও ফার্মেসি সেবা নিশ্চিত করা হবে। জরুরি ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে এবং চিকিৎসাকেন্দ্রকে ২০ শয্যার একটি আধুনিক হাসপাতালে রূপান্তরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা ও উদ্যোগ নেওয়া হবে।

    ইশতেহার ঘোষণার সময় ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী মো. শেখ সাদী হাসান বলেন, “আমরা গুম-খুন, নিপীড়ন ও রাষ্ট্রীয় নিষ্পেষণ মোকাবিলা করে দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য—একটি শিক্ষাবান্ধব, নিরাপদ ও আধুনিক জাহাঙ্গীরনগর গড়ে তোলা এবং নিয়মিত জাকসু নির্বাচন নিশ্চিত করা।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, শাখা ছাত্রদল ইতিমধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীকে হেপাটাইটিস-বি ভ্যাক্সিনের আওতায় এনেছে। ভবিষ্যতে একটি ২০ শয্যাবিশিষ্ট মেডিকেল সেন্টার প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁদের।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    জাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের ৮ দফা ইশতেহার ঘোষণা

    আপডেট সময় ০৭:০৩:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

    জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদল মনোনীত ‘সাদী-বৈশাখী-সাজ্জাদ-ইকরা পরিষদ’ ইশতেহার ঘোষণা করেছে। শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় নির্মিত ‘অদম্য-২৪’ স্মৃতিস্তম্ভের পাদদেশে প্যানেলের সদস্যরা তাঁদের ইশতেহার প্রকাশ করেন।

    ‘প্রতিশ্রুতি নয়, পরিবর্তনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ’—এই স্লোগানকে সামনে রেখে ইশতেহারে আটটি মূল অঙ্গীকার ঘোষণা করা হয়। সেখানে শিক্ষা ও গবেষণাকে প্রাধান্য দিয়ে আধুনিক, নারীবান্ধব ও নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা হয়।
    ইশতেহারে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম নির্দিষ্ট অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে। ক্লাস, পরীক্ষা ও ফলাফল সবকিছুই এই ক্যালেন্ডারের আওতায় চলবে।

    নিয়মিত জাকসু নির্বাচনও ওই ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কোর্স কারিকুলামকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার পাশাপাশি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য বুনিয়াদী ইংরেজি কোর্স চালু করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানের ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। অপ্রয়োজনীয় কোনো বিভাগ চালু না করে রাষ্ট্র, সমাজ ও সময়ের প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন বিভাগ খোলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

    এ ছাড়া অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম চালু করে শিক্ষার্থীদের জন্য রেকর্ডেড লেকচার সহজলভ্য করা, ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুযোগ সৃষ্টি, ইন্টারন্যাশনাল অফিসকে গতিশীল করা, শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপের সুযোগ তৈরি এবং ক্যাম্পাসে পার্টটাইম চাকরির ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষকদের পারফরম্যান্স মূল্যায়নের ব্যবস্থার কথাও উল্লেখ করা হয়।

    নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ইশতেহারের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার হিসেবে স্থান পেয়েছে। সেখানে বলা হয়, নারী নিপীড়ন, ইভটিজিং ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কোনোদিন আপস করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না। নারী হলগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত সীমানা প্রাচীর ও অ্যাপ্রোচ রোড সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। নতুন হলগুলোতে করিডরের পাশে লোহার গ্রিল ও সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। পড়াশোনা ও মাতৃত্বের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চাইল্ড কেয়ার সেন্টার স্থাপন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

    নারী শিক্ষার্থীদের জন্য খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের এই সেন্টারে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনাও ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়কে নারী রাজনীতিবান্ধব ক্যাম্পাসে রূপান্তরিত করা, যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল সংস্কার করে আরও কার্যকর করা, অনলাইনে হেনস্তার ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ এবং অ্যান্টি হ্যারাসমেন্ট সেল গঠন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

    মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার অঙ্গীকার হিসেবে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রকে আধুনিকায়ন করা হবে। অবকাঠামো উন্নয়ন, সার্বক্ষণিক চিকিৎসক ও নার্সের উপস্থিতি, অ্যাম্বুলেন্স ও ফার্মেসি সেবা নিশ্চিত করা হবে। জরুরি ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে এবং চিকিৎসাকেন্দ্রকে ২০ শয্যার একটি আধুনিক হাসপাতালে রূপান্তরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা ও উদ্যোগ নেওয়া হবে।

    ইশতেহার ঘোষণার সময় ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী মো. শেখ সাদী হাসান বলেন, “আমরা গুম-খুন, নিপীড়ন ও রাষ্ট্রীয় নিষ্পেষণ মোকাবিলা করে দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য—একটি শিক্ষাবান্ধব, নিরাপদ ও আধুনিক জাহাঙ্গীরনগর গড়ে তোলা এবং নিয়মিত জাকসু নির্বাচন নিশ্চিত করা।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, শাখা ছাত্রদল ইতিমধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীকে হেপাটাইটিস-বি ভ্যাক্সিনের আওতায় এনেছে। ভবিষ্যতে একটি ২০ শয্যাবিশিষ্ট মেডিকেল সেন্টার প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁদের।