জুলাই দিবসে এনসিপি নেতাদের কক্সবাজার সফর ঘিরে জল্পনা

- আপডেট সময় ০৫:১৭:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫
- / ২৬৩ বার পড়া হয়েছে
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকীর দিনেই জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–এর পাঁচ শীর্ষ নেতা হঠাৎ করে কক্সবাজার সফরে যাওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রশ্ন ও গুঞ্জনের জন্ম দিয়েছে। আজ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তাঁরা কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান।
এই সফরে অংশ নেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা এবং তাঁর স্বামী, যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ। বিমান থেকে নামার পর তাঁরা কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ইনানী সৈকতের পাঁচ তারকা হোটেল ‘সী-পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’-তে যান, যা আগে রয়েল টিউলিপ নামে পরিচিত ছিল।
স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, এনসিপির এই সফর সম্পর্কে আগে থেকে কোনো ধরনের তথ্য তাঁদের জানানো হয়নি। হঠাৎ করে শীর্ষ নেতাদের আগমন, তাও আবার ৫ আগস্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিনে, অনেককে অবাক করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা চলছে, এনসিপি নেতারা কী কোনো গুরুত্বপূর্ণ গোপন বৈঠকের উদ্দেশ্যে কক্সবাজারে গেছেন?
বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক বাংলাদেশস্থ রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে তাঁদের বৈঠকের সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে, যা জল্পনাকে আরও উসকে দিয়েছে। বিএনপির কক্সবাজার জেলা সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী মন্তব্য করেছেন, এই সফর এবং নেতাদের শহর থেকে দূরে পাঁচ তারকা হোটেলে অবস্থান নিঃসন্দেহে সন্দেহজনক। যদিও তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি পিটার হাস সত্যিই সেখানে আছেন কিনা।
এদিকে সী-পার্ল হোটেলের একজন কর্মকর্তা, যিনি নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলে পরিচয় দেন, জানিয়েছেন যে, পিটার হাস বা তাঁর মতো কেউ সেদিন হোটেলে আসেননি। এনসিপির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহও এক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, তাঁরা কেবল ঘুরতে কক্সবাজার গিয়েছেন, এবং পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের গুজব পুরোপুরি ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীও এক সাক্ষাৎকারে একই বক্তব্য পুনর্ব্যক্ত করেন।
একই সময় ঢাকায় চলছে “৩৬ জুলাই উদ্যাপন” শীর্ষক অনুষ্ঠানের নানা আয়োজন। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সকাল থেকে শুরু হওয়া এই আয়োজনে রয়েছে ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের আয়োজন। বিকেল পাঁচটায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সেই ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন।
ঠিক এই সময় এনসিপির নেতারা রাজধানীর অনুষ্ঠানস্থলে না গিয়ে কক্সবাজারে অবস্থান করায় রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে কৌতূহল ও নানা গুঞ্জনের জন্ম দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—এত বড় দিনে এনসিপির এই বিচ্ছিন্ন অবস্থান কী বার্তা বহন করে? জাহাঙ্গীর আলম নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “আজ এত বড় দিনে তাঁরা কক্সবাজার কেন?”
এনসিপি নেতাদের এই সফর প্রকৃতপক্ষে নিছক ব্যক্তিগত অবকাশযাপন, না কি এর পেছনে রয়েছে বড় কোনো কূটনৈতিক পরিকল্পনা—তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় তুলতে এটি যথেষ্ট হয়েছে।