জুলাই হত্যা তদন্তে শেখ হাসিনার নির্দেশনার অনুসন্ধান : পলক, টুকু ও সৈকতের ফোনে ফরেনসিক পরীক্ষা চলছে

- আপডেট সময় ১২:১২:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫
- / ২৬০ বার পড়া হয়েছে
ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার জুলাই আন্দোলন দমনে সংঘটিত বর্বর হত্যাকাণ্ডের পেছনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল—এমন অভিযোগ এখন মামলার তদন্তের কেন্দ্রে অবস্থান করছে। অভিযোগ উঠেছে, আন্দোলন দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা, যার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের পথ প্রশস্ত হয়।
এই অভিযোগের সূত্র ধরে সাবেক ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা তানভীর হাসান সৈকতের ব্যবহৃত সাতটি মোবাইল ফোনসেট ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সরকার পতনের পর আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার হন এই তিনজন। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের কাছ থেকে ফোনসেটগুলো উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। পরে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে আবেদন করে ফরেনসিক পরীক্ষার অনুমতি নেন।
ফরেনসিকে পাঠানো ফোনগুলোর মধ্যে রয়েছে পলকের একটি আইফোন ১৫ প্রো এবং দুটি স্যামসাং এস২৪ আল্ট্রা, টুকুর একটি নোকিয়া বাটন ফোন ও একটি স্যামসাং গ্যালাক্সি এম১৪, সৈকতের একটি আইফোন ও একটি ডোকোমো ৫জি ফোন। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা ফোনগুলোর ফরেনসিক রিপোর্ট সম্পর্কে এখনও মুখ খুলছেন না।
উল্লেখ্য, ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে মোবাইল ফোনসহ যেকোনো ডিজিটাল ডিভাইস থেকে মুছে ফেলা ছবি, ভিডিও, বার্তা ও অন্যান্য তথ্য পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। ২০২২ সালের প্রণীত এভিডেন্স অ্যাক্ট অনুযায়ী এইসব তথ্য আদালতে গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল প্রমাণ হিসেবে গৃহীত হয়।
মামলার নথিপত্র অনুসারে, গত বছর ২০ জুলাই ঢাকার পল্টন থানায় দায়ের হওয়া রিকশাচালক কামাল মিয়া হত্যা মামলায় এই ফোনসেটগুলো জব্দ করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি ইন্সপেক্টর আব্দুল্লাহেল বাকী আদালতে আবেদন করে জানান, আসামিরা সরকার ও দলীয় নীতিনির্ধারক ছিলেন। তাদের ব্যবহৃত ফোনে থাকা তথ্য হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতাদের শনাক্ত করতে সহায়ক হতে পারে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জুলাই মাসজুড়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন যখন চূড়ান্ত রূপ নেয়, তখন শেখ হাসিনা বিশেষভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তিনি মন্ত্রী-এমপি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের একাধিকবার ফোন করে আন্দোলন দমনের পরিকল্পনা করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে একপর্যায়ে দেশজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ করে ব্লকরেইড পরিচালনার নির্দেশ দেন, যা শেষ পর্যন্ত নির্বিচারে গুলির মাধ্যমে রূপ নেয়।
জানা গেছে, শেখ হাসিনা সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলককে একাধিকবার ফোন করে ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশনা দেন। একই সময়ে তিনি ডেপুটি স্পিকার টুকু ও ছাত্রলীগ নেতা সৈকতের মোবাইলেও হোয়াটসঅ্যাপ, সিগন্যাল, টেলিগ্রাম ও ভাইবারের মতো অ্যাপে বার্তা পাঠান। এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আসামিরা তাদের ফোন থেকে সব ধরনের তথ্য মুছে ফেলেন এবং অ্যাপসগুলো আনইনস্টল করে দেন।
ফলে ফোনে তেমন তথ্য পাওয়া যায়নি। এরপরই আদালতের অনুমতি নিয়ে ফোনগুলো ফরেনসিকে পাঠানো হয়। ডিবি ইন্সপেক্টর আব্দুল্লাহেল বাকী বলেন, “বিষয়টি গোপনীয়। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ফরেনসিক পরীক্ষা চলছে। রিপোর্ট হাতে এলে চার্জশিটে তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে।”
এই বিষয়ে আইনজীবী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত বিশেষ প্রসিকিউটরিয়াল টিমের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজি বলেন, “জুলাই হত্যা মামলায় ডিজিটাল ডিভাইসের তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি তা মামলার প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে, তবে আদালত সেগুলো ম্যাটেরিয়াল ফ্যাক্ট হিসেবে বিবেচনা করবেন।” তদন্তের অগ্রগতি ও ফরেনসিক রিপোর্টের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে, শেখ হাসিনাসহ সাবেক ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে এই মামলার ভবিষ্যৎ গতিপথ।