ঢাকা ০২:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫

    গাজার যুদ্ধপরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে টনি ব্লেয়ারের বৈঠক

    ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক
    • আপডেট সময় ১২:১৫:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
    • / ২৫৪ বার পড়া হয়েছে

    সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। এই বৈঠকে গাজা যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বিবিসি নিশ্চিত করেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি এই তথ্য জানায়।

    মার্কিন মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ জানিয়েছেন, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরের দিনগুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র একটি “খুব বিস্তৃত” পরিকল্পনা তৈরি করছে। তবে বৈঠক সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করা হয়নি।
    বিবিসি বলছে, ২০০৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ছাড়ার পর টনি ব্লেয়ার কয়েক বছর মধ্যপ্রাচ্য দূত হিসেবে কাজ করেছেন। সে সময় তিনি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পরিবেশ তৈরির ওপর গুরুত্ব দেন। তবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সাআর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের কোনো পরিকল্পনা নেই

    এই বৈঠক এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে যখন ইসরায়েলি সেনারা ফিলিস্তিনিদের গাজা সিটি খালি করার জন্য সতর্ক করছে। এরই মধ্যে ইসরায়েলি ট্যাংক শহরের নতুন এলাকায় প্রবেশ করে বাড়িঘর ধ্বংস করেছে, যার ফলে বহু বাসিন্দা পালাতে বাধ্য হয়েছেন। গাজায় প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনি এখনো বসবাস করেন এবং হাজার হাজার মানুষ ইতোমধ্যে শহরের বিভিন্ন অংশে চলে গেছেন। চলতি আগস্টের শুরুতে ইসরায়েল পুরো গাজা দখলের পরিকল্পনা ঘোষণা করে এবং গাজা সিটিকে হামাসের শেষ ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত করে।

    জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা সতর্ক করেছে যে, গাজা সিটিতে সামরিক অভিযান একটি ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে। গত সপ্তাহেই সেখানে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা (যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া) এক বিবৃতিতে গাজার দুর্ভিক্ষকে “মানব-সৃষ্ট সংকট” আখ্যা দিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা মানবিক সহায়তার ওপর থেকে সব ধরনের বাধা অবিলম্বে ও শর্তহীনভাবে তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, কারণ আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ‘ক্ষুধাকে’ ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।

    ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্টিভ উইটকফ বলেন, তিনি মনে করেন গাজার যুদ্ধ আগামী চার মাসের মধ্যে, অর্থাৎ এই বছরের মধ্যেই শেষ হতে পারে। যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা একটি অত্যন্ত বিস্তৃত পরিকল্পনা সাজাচ্ছি। অনেকেই দেখবেন, এটি কতটা শক্তিশালী ও সুপরিকল্পিত এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মানবিক অভিপ্রায়কে প্রতিফলিত করে।”

    হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুদ্ধের অবসান চান এবং এই অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি দেখতে চান। তবে গাজা যুদ্ধোত্তর প্রস্তাব নিয়ে এখনো কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প বলেছিলেন, গাজার জনগণকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসিত করা যেতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্র ওই ভূখণ্ড নিয়ে “মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা” গড়ে তুলতে পারে।

    মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈঠকে ট্রাম্পের জামাতা ও সাবেক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনারও উপস্থিত ছিলেন।

    উল্লেখ্য, প্রায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে গাজার বেশিরভাগ মানুষ একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ৯০ শতাংশেরও বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে এবং স্বাস্থ্য, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। জাতিসংঘ সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন যে গাজা সিটিতে দুর্ভিক্ষ চলছে।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    গাজার যুদ্ধপরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে টনি ব্লেয়ারের বৈঠক

    আপডেট সময় ১২:১৫:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫

    সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। এই বৈঠকে গাজা যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বিবিসি নিশ্চিত করেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি এই তথ্য জানায়।

    মার্কিন মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ জানিয়েছেন, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরের দিনগুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র একটি “খুব বিস্তৃত” পরিকল্পনা তৈরি করছে। তবে বৈঠক সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করা হয়নি।
    বিবিসি বলছে, ২০০৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ছাড়ার পর টনি ব্লেয়ার কয়েক বছর মধ্যপ্রাচ্য দূত হিসেবে কাজ করেছেন। সে সময় তিনি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পরিবেশ তৈরির ওপর গুরুত্ব দেন। তবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সাআর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের কোনো পরিকল্পনা নেই

    এই বৈঠক এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে যখন ইসরায়েলি সেনারা ফিলিস্তিনিদের গাজা সিটি খালি করার জন্য সতর্ক করছে। এরই মধ্যে ইসরায়েলি ট্যাংক শহরের নতুন এলাকায় প্রবেশ করে বাড়িঘর ধ্বংস করেছে, যার ফলে বহু বাসিন্দা পালাতে বাধ্য হয়েছেন। গাজায় প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনি এখনো বসবাস করেন এবং হাজার হাজার মানুষ ইতোমধ্যে শহরের বিভিন্ন অংশে চলে গেছেন। চলতি আগস্টের শুরুতে ইসরায়েল পুরো গাজা দখলের পরিকল্পনা ঘোষণা করে এবং গাজা সিটিকে হামাসের শেষ ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত করে।

    জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা সতর্ক করেছে যে, গাজা সিটিতে সামরিক অভিযান একটি ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে। গত সপ্তাহেই সেখানে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা (যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া) এক বিবৃতিতে গাজার দুর্ভিক্ষকে “মানব-সৃষ্ট সংকট” আখ্যা দিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা মানবিক সহায়তার ওপর থেকে সব ধরনের বাধা অবিলম্বে ও শর্তহীনভাবে তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, কারণ আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ‘ক্ষুধাকে’ ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।

    ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্টিভ উইটকফ বলেন, তিনি মনে করেন গাজার যুদ্ধ আগামী চার মাসের মধ্যে, অর্থাৎ এই বছরের মধ্যেই শেষ হতে পারে। যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা একটি অত্যন্ত বিস্তৃত পরিকল্পনা সাজাচ্ছি। অনেকেই দেখবেন, এটি কতটা শক্তিশালী ও সুপরিকল্পিত এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মানবিক অভিপ্রায়কে প্রতিফলিত করে।”

    হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুদ্ধের অবসান চান এবং এই অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি দেখতে চান। তবে গাজা যুদ্ধোত্তর প্রস্তাব নিয়ে এখনো কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প বলেছিলেন, গাজার জনগণকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসিত করা যেতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্র ওই ভূখণ্ড নিয়ে “মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা” গড়ে তুলতে পারে।

    মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈঠকে ট্রাম্পের জামাতা ও সাবেক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনারও উপস্থিত ছিলেন।

    উল্লেখ্য, প্রায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে গাজার বেশিরভাগ মানুষ একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ৯০ শতাংশেরও বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে এবং স্বাস্থ্য, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। জাতিসংঘ সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন যে গাজা সিটিতে দুর্ভিক্ষ চলছে।