ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের প্রতিবাদে ভারতে মার্কিন পণ্য বর্জনের ডাক

- আপডেট সময় ০৬:৩৮:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫
- / ২৫৬ বার পড়া হয়েছে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের প্রতিবাদে ভারতে ম্যাকডোনাল্ডস, কোকা-কোলা, অ্যামাজন ও অ্যাপলের মতো যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বয়কটের মুখে পড়েছে। দেশটির ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমর্থকরাও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রতিবাদে মার্কিনবিরোধী এই মনোভাবে উসকানি দিচ্ছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সর্বাধিক জনসংখ্যার দেশ ভারতে দ্রুত বেড়ে চলা সচ্ছল ভোক্তা শ্রেণিকে লক্ষ্য করে আমেরিকান ব্র্যান্ডের একটি বড় বাজার তৈরি হয়েছে। দেশটিতে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের ব্যবহারকে অনেকে উন্নতির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করেন। যেমন, মেটার হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যার দিক থেকে ভারত শীর্ষে। ভারতে অন্য যেকোনো ব্র্যান্ডের চেয়ে ডমিনোজের রেস্টুরেন্ট বেশি।
প্রায়ই দোকানের তাক দখল করে রাখে পেপসি ও কোকা-কোলা। যদিও মার্কিন পণ্য বয়কটের ডাকে কোম্পানিগুলোর বিক্রিতে তাৎক্ষণিক কোনো প্রভাব পড়ার ইঙ্গিত মেলেনি, তবুও ভারতের পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অফলাইনে দেশীয় পণ্য কেনা ও মার্কিন পণ্য বর্জনের ডাক জোরদার হচ্ছে। এর ফলে রপ্তানিকারকদের মাঝে উদ্বেগ এবং দিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ওয়াও স্কিন সায়েন্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মনীশ চৌধুরী লিংকডইনে এক ভিডিও বার্তায় দেশের কৃষক ও স্টার্টআপগুলোকে সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’কে বিশ্বজুড়ে আবেগের পণ্যে পরিণত করতে হবে। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার উদাহরণ টেনে বলেন, দেশটির খাদ্য ও সৌন্দর্যবর্ধনের সব পণ্য সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। মনীশ বলেন, “আমরা হাজার হাজার মাইল দূরের পণ্যের জন্য লাইন ধরেছি।
বিদেশি ব্র্যান্ডের পেছনে গর্ব করে অর্থ খরচ করেছি। অথচ আমাদের প্রস্তুতকারকরা নিজেদের দেশে মনোযোগ পাওয়ার জন্য রীতিমতো লড়াই করছেন।” ভারতের ‘ড্রাইভ ইউ’ নামের ড্রাইভার সার্ভিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাহম শাস্ত্রী লিংকডইনে লিখেছেন, “ভারতের নিজস্ব টুইটার, গুগল, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক থাকা উচিত, যেমন চীনের আছে।”
রোববার বেঙ্গালুরুতে এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নাগরিকদের ‘আত্মনির্ভর’ হওয়ার বিশেষ আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ভারতীয় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো বিশ্ববাজারের জন্য পণ্য তৈরি করে, কিন্তু এখন ভারতের প্রয়োজনকে আরও অগ্রাধিকার দেওয়ার সময় এসেছে। তবে তিনি তার বক্তৃতায় কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির নাম উল্লেখ করেননি।
অন্যদিকে, নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সমর্থিত স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ রোববার ভারতে ছোট ছোট জনসভা করে মার্কিন ব্র্যান্ড বয়কটের আহ্বান জানিয়েছে। সংগঠনটির সহ-সমন্বয়ক অশ্বিনী মহাজন বলেন, “মানুষ এখন ভারতীয় পণ্যের দিকে নজর দিচ্ছে। এটি কার্যকর হতে কিছুটা সময় লাগবে। এটি জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের ডাক।” তিনি হোয়াটসঅ্যাপে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের পণ্যের একটি তালিকাও প্রচার করছেন।
মার্কিন পণ্যবিরোধী প্রতিবাদ চললেও সোমবার নয়াদিল্লিতে দ্বিতীয় শোরুম উদ্বোধন করেছে টেসলা। ইলন মাস্কের মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানের শোরুম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। লখনউ শহরে ম্যাকডোনাল্ডসের কফি খাচ্ছিলেন ৩৭ বছর বয়সী রজত গুপ্ত। তিনি বলেন, শুল্কবৃদ্ধির প্রতিবাদ নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন নন এবং তার ৪৯ রুপির কফিকে দারুণ সাশ্রয়ী বলে মনে করেন। তিনি বলেন, “শুল্ক কূটনীতির বিষয়, আর আমার ম্যাকপাফ আর কফিকে এতে টেনে আনা উচিত নয়।”