ঢাকা ০৭:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

    অন্তর্বর্তী সরকার কি পথ হারিয়েছে, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ১২:২১:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
    • / ২৫৬ বার পড়া হয়েছে

    চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নানা গুজবের কারণে বাংলাদেশের জনগণ এখন গভীর অনিশ্চয়তায় ভুগছে। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে দৃশ্যমান সমন্বয়হীনতা এবং বিভিন্ন উপদেষ্টার পরস্পরবিরোধী মন্তব্য জনমনে অস্থিরতা আরও বাড়াচ্ছে। নুরের ওপর হামলার পর একজন উপদেষ্টা এর নিন্দা জানিয়ে বিচার দাবি করেন, অন্যদিকে আরেকজন বলেন, এর দায় সরকারকে নিতে হবে। এমন পরিস্থিতি দেশের সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে এবং প্রশ্ন তুলছে, পর্দার আড়ালে আসলে কী ঘটছে?

    দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন তুলেছেন, “অন্তর্বর্তী সরকার কি পথ হারিয়েছে?” তিনি বলেন, “রাজনৈতিক ঘটনাবলি ও নির্বাচনি প্রক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে সংস্কার কমিটির প্রস্তাব মাঝপথ থেকে এগোতে পারছে না। এটা কি আকাঙ্ক্ষার অভাব, সক্ষমতার অভাব, নাকি বড় ধরনের স্বার্থের সংঘাত লুকিয়ে ছিল?”

    শুক্রবার রাতে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ফেসবুক পোস্টে এই হামলার তীব্র নিন্দা জানান। তার পোস্টে এক মন্তব্যে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, “প্রতিবাদের কাজ আপনার? ভণ্ডামি বাদ দেন স্যার। যেই জন্য বসানো হয়েছে, সেটা না করে কী কী করছেন।”

    অন্যদিকে, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নুরকে দেখতে গিয়ে বলেন, “নুরের ওপর হামলার দায়দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে। সরকারকে এটার সমাধান করতে হবে।” তিনি বলেন, “একটি নিবন্ধিত দলের কর্মসূচিকে কীভাবে ‘মব’ (গণহিংসা) বলা যায়?” এই মন্তব্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ‘মব ভায়োলেন্স’ মন্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

    বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, নুরের ওপর হামলার পেছনে নির্বাচনকে পেছানো বা ব্যাহত করার একটি পরিকল্পিত উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তারা ইতোমধ্যে বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থির করার জন্য একটি মহল কাজ করছে। গণঅধিকার পরিষদ এই হামলার দায় স্বীকার করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে বলেছে।

    নাহিদ ইসলাম, এনসিপি’র আহ্বায়ক, অন্তর্বর্তী সরকার ও সেনাবাহিনী কাদের নির্দেশে পরিচালিত হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী নুরের ওপর হামলার ঘটনাকে ‘মব ভায়োলেন্স’ আখ্যা দিয়ে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি দ্রুত এই বিবৃতি প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান।

    এদিকে, সেনাপ্রধান সোমবার রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার বাহিনীর কাজ সুনির্দিষ্ট করে দেওয়ার কথা বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা পুনর্ব্যক্ত করলে সেনাপ্রধান অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, “গণ-অভ্যুত্থানের পর সবাই যদি দায়িত্বশীল আচরণ না করে, তাহলে একটি অরাজনৈতিক সরকারের পক্ষে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা খুবই কঠিন।” তিনি বলেন, বিভিন্ন মহল থেকে সরকারের ওপর এজেন্ডাভিত্তিক চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে, যার ফল এখন সাধারণ মানুষকে ভোগ করতে হচ্ছে। জুলাই বিপ্লবের পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে ফাটল ধরায় এ পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।

    ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “বাংলাদেশের ওপর দিয়ে এ মুহূর্তে একটি ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এই ঝড়ের আঘাত অর্থনীতি, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও সামাজিক জীবনসহ সব ক্ষেত্রে অনুভূত হচ্ছে। এখন সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো জুলাই অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে যে বৈষম্যবিরোধী চেতনা পেয়েছি, সেটা রক্ষা করা।”

    নিউজটি শেয়ার করুন

    অন্তর্বর্তী সরকার কি পথ হারিয়েছে, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

    আপডেট সময় ১২:২১:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

    চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নানা গুজবের কারণে বাংলাদেশের জনগণ এখন গভীর অনিশ্চয়তায় ভুগছে। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে দৃশ্যমান সমন্বয়হীনতা এবং বিভিন্ন উপদেষ্টার পরস্পরবিরোধী মন্তব্য জনমনে অস্থিরতা আরও বাড়াচ্ছে। নুরের ওপর হামলার পর একজন উপদেষ্টা এর নিন্দা জানিয়ে বিচার দাবি করেন, অন্যদিকে আরেকজন বলেন, এর দায় সরকারকে নিতে হবে। এমন পরিস্থিতি দেশের সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে এবং প্রশ্ন তুলছে, পর্দার আড়ালে আসলে কী ঘটছে?

    দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন তুলেছেন, “অন্তর্বর্তী সরকার কি পথ হারিয়েছে?” তিনি বলেন, “রাজনৈতিক ঘটনাবলি ও নির্বাচনি প্রক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে সংস্কার কমিটির প্রস্তাব মাঝপথ থেকে এগোতে পারছে না। এটা কি আকাঙ্ক্ষার অভাব, সক্ষমতার অভাব, নাকি বড় ধরনের স্বার্থের সংঘাত লুকিয়ে ছিল?”

    শুক্রবার রাতে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ফেসবুক পোস্টে এই হামলার তীব্র নিন্দা জানান। তার পোস্টে এক মন্তব্যে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, “প্রতিবাদের কাজ আপনার? ভণ্ডামি বাদ দেন স্যার। যেই জন্য বসানো হয়েছে, সেটা না করে কী কী করছেন।”

    অন্যদিকে, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নুরকে দেখতে গিয়ে বলেন, “নুরের ওপর হামলার দায়দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে। সরকারকে এটার সমাধান করতে হবে।” তিনি বলেন, “একটি নিবন্ধিত দলের কর্মসূচিকে কীভাবে ‘মব’ (গণহিংসা) বলা যায়?” এই মন্তব্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ‘মব ভায়োলেন্স’ মন্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

    বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, নুরের ওপর হামলার পেছনে নির্বাচনকে পেছানো বা ব্যাহত করার একটি পরিকল্পিত উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তারা ইতোমধ্যে বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থির করার জন্য একটি মহল কাজ করছে। গণঅধিকার পরিষদ এই হামলার দায় স্বীকার করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে বলেছে।

    নাহিদ ইসলাম, এনসিপি’র আহ্বায়ক, অন্তর্বর্তী সরকার ও সেনাবাহিনী কাদের নির্দেশে পরিচালিত হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী নুরের ওপর হামলার ঘটনাকে ‘মব ভায়োলেন্স’ আখ্যা দিয়ে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি দ্রুত এই বিবৃতি প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান।

    এদিকে, সেনাপ্রধান সোমবার রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার বাহিনীর কাজ সুনির্দিষ্ট করে দেওয়ার কথা বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা পুনর্ব্যক্ত করলে সেনাপ্রধান অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, “গণ-অভ্যুত্থানের পর সবাই যদি দায়িত্বশীল আচরণ না করে, তাহলে একটি অরাজনৈতিক সরকারের পক্ষে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা খুবই কঠিন।” তিনি বলেন, বিভিন্ন মহল থেকে সরকারের ওপর এজেন্ডাভিত্তিক চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে, যার ফল এখন সাধারণ মানুষকে ভোগ করতে হচ্ছে। জুলাই বিপ্লবের পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে ফাটল ধরায় এ পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।

    ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “বাংলাদেশের ওপর দিয়ে এ মুহূর্তে একটি ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এই ঝড়ের আঘাত অর্থনীতি, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও সামাজিক জীবনসহ সব ক্ষেত্রে অনুভূত হচ্ছে। এখন সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো জুলাই অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে যে বৈষম্যবিরোধী চেতনা পেয়েছি, সেটা রক্ষা করা।”