দ্রুত নির্বাচনই বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ-মির্জা ফখরুল

- আপডেট সময় ০৭:৫৩:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫
- / ২৫৫ বার পড়া হয়েছে
চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে দ্রুত একটি অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বর্তমান অস্থিরতা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের দ্রুত প্রতিষ্ঠা।
বুধবার দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী দলের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ কথা বলেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য ডেকেছিলেন এবং বিএনপি সেখানে অংশ নিয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব—সেটাই আবার জানিয়ে দিয়েছি। একই সঙ্গে আমরা নির্বাচনের সময়সূচি দ্রুত ঘোষণার ওপর জোর দিয়েছি।”
বিএনপি মহাসচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সে বিষয়ে তারা আশাবাদী। তবে এ নিয়ে আর কোনো ধোঁয়াশা না রেখে প্রধান উপদেষ্টার উচিত একটি স্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া। “আমরা তাঁকে অনুরোধ করেছি, তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে তিনি বিষয়টি বিবেচনা করবেন,” বলেন ফখরুল। তিনি আরও বলেন, “রাজনৈতিক সরকার না থাকলে দেশের সংকট আরও বাড়তে থাকে, সে কথাটিও আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছি।”
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মঙ্গলবার রাতে অনুষ্ঠিত বৈঠক প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “সংকট দেখা দিলে তিনি আমাদের ডাকেন, আমরা যাই। তবে আমি মনে করি, এই বৈঠকগুলো ঘন ঘন হলে আরও ভালো হতো, তাহলে হয়তো অনেক জটিলতা এড়ানো যেত।” তিনি যোগ করেন, “ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্যই এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। আমরা তাঁকে জানিয়ে দিয়েছি যে, সরকারের প্রতি আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।”
ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক ঐক্য অটুট রয়েছে। মিডিয়ায় রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে কথার লড়াই দেখা গেলেও তা রাজনীতিরই অংশ। “গণতন্ত্র মানেই হচ্ছে শত ফুল ফুটতে দিতে হবে, সবার মত প্রকাশের অধিকার থাকতে হবে,” বলেন বিএনপি মহাসচিব।
সম্প্রতি উত্তরা এলাকায় ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনা এবং তার প্রভাব প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “সেই দুর্ঘটনায় অনেক কচি প্রাণ ঝরে গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিবকে অবরুদ্ধ করে এবং পরীক্ষাসংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে সচিবালয়ে ঢুকে পড়ে। এটি একটি প্রশাসনিক ব্যর্থতা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি।”
গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের সহিংসতার প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, “সেখানে একটি রেইন অব টেরর সৃষ্টি করা হয়েছিল। এটি যে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত এবং একটি ষড়যন্ত্রের অংশ, তা আমরা মনে করি। সচিবালয়ে যারা প্রবেশ করেছিল, তাদের মধ্যে ফ্যাসিস্টদের লোক ছিল বলেই আমাদের ধারণা।” তিনি আরও বলেন, “তবে জনগণ এসব চক্রান্ত প্রতিহত করবে—এই বিশ্বাস আমাদের আছে।”
বিমান বিধ্বস্তের পর সরকারের পদক্ষেপ যথাযথ ছিল কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, “কিছু কিছু জায়গায় অভিজ্ঞতার অভাবে ঘাটতি ছিল। এ সরকারের সবচেয়ে বড় সমস্যাই হলো অভিজ্ঞতার অভাব। সরকারের ভেতরে অনেক অনভিজ্ঞ মানুষ রয়েছে, আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইগো কাজ করে। রাজনৈতিক দল হিসেবে, বিশেষ করে যারা অতীতে সরকারে ছিল, যেমন আমরা, তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে চললে ভালো হতো। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে একটু পিছিয়ে আছে।”
মির্জা ফখরুলের মতে, একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারই পারে এ ধরনের দুর্যোগ এবং সংকট সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলা করতে। এজন্য অবিলম্বে নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করার দাবি জানান তিনি।