ঢাকা ০১:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

    নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের জন্য বাসা খোঁজার প্রক্রিয়া শুরু

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০১:০৮:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫
    • / ২৬০ বার পড়া হয়েছে

    আগামী জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঘোষিত না হলেও সম্ভাব্য নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের জন্য রাজধানীতে বাসা খোঁজার কাজ শুরু করেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। নিরাপত্তা ও নাগরিক সুবিধার দিক বিবেচনায় সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী বাসভবনের জন্য হেয়ার রোডকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

    ৭ জুলাই গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় একটি ছয় সদস্যের উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন একজন অতিরিক্ত সচিব। তারা রাজধানীর বিভিন্ন সম্ভাব্য এলাকা পরিদর্শন শেষে ২০ জুলাই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কমিটির একজন সদস্য জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

    নির্বাচনের পর নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের বাসস্থানের বিষয়টি নির্ধারণ জরুরি হয়ে উঠেছে। কারণ টানা তিন মেয়াদে গণভবনে বসবাসকারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সেখানে বর্তমানে জাদুঘর নির্মাণকাজ চলছে এবং ৫ আগস্ট আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে কোনো প্রধানমন্ত্রী আর গণভবনে বসবাস করতে পারবেন না।

    প্রধানমন্ত্রীর নতুন বাসভবনের জন্য হেয়ার রোডে যমুনা ও আশপাশের বাংলোগুলো প্রস্তাব
    কমিটির প্রতিবেদনে হেয়ার রোডের ২৪ ও ২৫ নম্বর বাংলো এবং রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনা’কে সমন্বিতভাবে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হিসেবে বিবেচনার সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমানে যমুনা ভবনটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

    যমুনা ভবন ও আশপাশের জমির আয়তন প্রায় সোয়া তিন একর (৫০২ কাঠা)। ২৪ ও ২৫ নম্বর বাংলোতে বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবস্থান করছেন। এ ছাড়া শেরেবাংলা নগরের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার পুরাতন স্থানে নতুন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখেছে কমিটি, তবে তারা সেই জায়গায় ভবন নির্মাণের পক্ষে সুপারিশ দেয়নি।

    কারণ, এটি মার্কিন স্থপতি লুই আই কানের পরিকল্পিত এলাকার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সেখানে বড় কোনো স্থাপনা নির্মাণ সময়সাপেক্ষ এবং নকশাগতভাবে জটিল হতে পারে।

    মন্ত্রীদের বাসভবন সংকট: ফ্ল্যাট দখলে বিচারপতি ও উচ্চপদস্থ আমলারা
    বর্তমানে রাজধানীর মিন্টো রোড ও হেয়ার রোডে মন্ত্রীদের জন্য ১৫টি বাংলো এবং বেইলি রোডে ‘মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্ট’ নামে তিনটি ভবনে ৩০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন প্রায় ৫ হাজার বর্গফুট। তবে বর্তমানে ৩০টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ১২টিতে বসবাস করছেন সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিরা।

    অবশিষ্ট ১৮টির মধ্যে ১৪টিতে অবস্থান করছেন প্রধান উপদেষ্টার চারজন বিশেষ সহকারী, নির্বাচন কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশনের দুইজন কমিশনারসহ সরকারের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা। যদিও বিচারপতি ও আমলাদের জন্য আলাদা সরকারি বাসস্থান রয়েছে এবং সেগুলোর অনেকগুলোই খালি, তবু তাঁরা মন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্টে থাকছেন।

    এটি আইনি না হলেও অনৈতিক বলে মত দিয়েছেন একজন সাবেক বিচারপতি। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের জন্য কাকরাইলে নির্মিত একটি ২০ তলা ভবনে ৭৬টি ফ্ল্যাট থাকলেও বর্তমানে ২৪টি ফ্ল্যাট খালি। সচিবদের জন্য ইস্কাটনে নির্মিত ফ্ল্যাটেও খালি জায়গা রয়েছে।

    আগাম প্রস্তুতি: নতুন ভবনের সুপারিশ

    কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিন্টো রোডের ৩৩ ও ৩৪ নম্বর বাংলো (আয়তন যথাক্রমে ৯০ ও ৯৭ কাঠা) ভেঙে ছয়তলা ভবন নির্মাণ করে অন্তত ১২ জন মন্ত্রীর থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বর্তমানে এই দুটি বাংলো বরাদ্দ আছে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারের নামে।

    একইভাবে বেইলি রোডের ২০ ও ২১ নম্বর বাংলো (আয়তন ১২১ কাঠা) ভেঙে আধুনিক ভবন নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে কমিটি। এই দুটি বাংলো বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান এবং খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের দখলে।

    তবে ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন এসব বাংলোবাড়ি ভেঙে ফেলার বিষয়ে সংশয় রয়েছে। স্থাপত্য অধিদপ্তর ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মতামত নিয়েই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পরিত্যক্ত সম্পত্তিও ব্যবহারের প্রস্তাব গুলশান ও ধানমন্ডির দুটি পরিত্যক্ত সরকারি বাড়িকে মন্ত্রীদের বাসভবনের জন্য ব্যবহারের সুপারিশও করেছে কমিটি।

    এর মধ্যে ধানমন্ডির ২ নম্বর সড়কের ১২০ নম্বর বাড়িটি ২০ কাঠা এবং গুলশানের ১১৩ নম্বর সড়কের ২০ নম্বর বাড়িটি ২১ কাঠা আয়তনের। কমিটির প্রধান ও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফারুক আহম্মেদ বলেন, “নির্বাচিত নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের আবাসনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এখন সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার।”

    নিউজটি শেয়ার করুন

    নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের জন্য বাসা খোঁজার প্রক্রিয়া শুরু

    আপডেট সময় ০১:০৮:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫

    আগামী জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঘোষিত না হলেও সম্ভাব্য নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের জন্য রাজধানীতে বাসা খোঁজার কাজ শুরু করেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। নিরাপত্তা ও নাগরিক সুবিধার দিক বিবেচনায় সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী বাসভবনের জন্য হেয়ার রোডকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

    ৭ জুলাই গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় একটি ছয় সদস্যের উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন একজন অতিরিক্ত সচিব। তারা রাজধানীর বিভিন্ন সম্ভাব্য এলাকা পরিদর্শন শেষে ২০ জুলাই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কমিটির একজন সদস্য জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

    নির্বাচনের পর নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের বাসস্থানের বিষয়টি নির্ধারণ জরুরি হয়ে উঠেছে। কারণ টানা তিন মেয়াদে গণভবনে বসবাসকারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সেখানে বর্তমানে জাদুঘর নির্মাণকাজ চলছে এবং ৫ আগস্ট আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে কোনো প্রধানমন্ত্রী আর গণভবনে বসবাস করতে পারবেন না।

    প্রধানমন্ত্রীর নতুন বাসভবনের জন্য হেয়ার রোডে যমুনা ও আশপাশের বাংলোগুলো প্রস্তাব
    কমিটির প্রতিবেদনে হেয়ার রোডের ২৪ ও ২৫ নম্বর বাংলো এবং রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনা’কে সমন্বিতভাবে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হিসেবে বিবেচনার সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমানে যমুনা ভবনটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

    যমুনা ভবন ও আশপাশের জমির আয়তন প্রায় সোয়া তিন একর (৫০২ কাঠা)। ২৪ ও ২৫ নম্বর বাংলোতে বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবস্থান করছেন। এ ছাড়া শেরেবাংলা নগরের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার পুরাতন স্থানে নতুন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখেছে কমিটি, তবে তারা সেই জায়গায় ভবন নির্মাণের পক্ষে সুপারিশ দেয়নি।

    কারণ, এটি মার্কিন স্থপতি লুই আই কানের পরিকল্পিত এলাকার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সেখানে বড় কোনো স্থাপনা নির্মাণ সময়সাপেক্ষ এবং নকশাগতভাবে জটিল হতে পারে।

    মন্ত্রীদের বাসভবন সংকট: ফ্ল্যাট দখলে বিচারপতি ও উচ্চপদস্থ আমলারা
    বর্তমানে রাজধানীর মিন্টো রোড ও হেয়ার রোডে মন্ত্রীদের জন্য ১৫টি বাংলো এবং বেইলি রোডে ‘মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্ট’ নামে তিনটি ভবনে ৩০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন প্রায় ৫ হাজার বর্গফুট। তবে বর্তমানে ৩০টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ১২টিতে বসবাস করছেন সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিরা।

    অবশিষ্ট ১৮টির মধ্যে ১৪টিতে অবস্থান করছেন প্রধান উপদেষ্টার চারজন বিশেষ সহকারী, নির্বাচন কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশনের দুইজন কমিশনারসহ সরকারের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা। যদিও বিচারপতি ও আমলাদের জন্য আলাদা সরকারি বাসস্থান রয়েছে এবং সেগুলোর অনেকগুলোই খালি, তবু তাঁরা মন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্টে থাকছেন।

    এটি আইনি না হলেও অনৈতিক বলে মত দিয়েছেন একজন সাবেক বিচারপতি। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের জন্য কাকরাইলে নির্মিত একটি ২০ তলা ভবনে ৭৬টি ফ্ল্যাট থাকলেও বর্তমানে ২৪টি ফ্ল্যাট খালি। সচিবদের জন্য ইস্কাটনে নির্মিত ফ্ল্যাটেও খালি জায়গা রয়েছে।

    আগাম প্রস্তুতি: নতুন ভবনের সুপারিশ

    কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিন্টো রোডের ৩৩ ও ৩৪ নম্বর বাংলো (আয়তন যথাক্রমে ৯০ ও ৯৭ কাঠা) ভেঙে ছয়তলা ভবন নির্মাণ করে অন্তত ১২ জন মন্ত্রীর থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বর্তমানে এই দুটি বাংলো বরাদ্দ আছে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারের নামে।

    একইভাবে বেইলি রোডের ২০ ও ২১ নম্বর বাংলো (আয়তন ১২১ কাঠা) ভেঙে আধুনিক ভবন নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে কমিটি। এই দুটি বাংলো বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান এবং খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের দখলে।

    তবে ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন এসব বাংলোবাড়ি ভেঙে ফেলার বিষয়ে সংশয় রয়েছে। স্থাপত্য অধিদপ্তর ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মতামত নিয়েই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পরিত্যক্ত সম্পত্তিও ব্যবহারের প্রস্তাব গুলশান ও ধানমন্ডির দুটি পরিত্যক্ত সরকারি বাড়িকে মন্ত্রীদের বাসভবনের জন্য ব্যবহারের সুপারিশও করেছে কমিটি।

    এর মধ্যে ধানমন্ডির ২ নম্বর সড়কের ১২০ নম্বর বাড়িটি ২০ কাঠা এবং গুলশানের ১১৩ নম্বর সড়কের ২০ নম্বর বাড়িটি ২১ কাঠা আয়তনের। কমিটির প্রধান ও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফারুক আহম্মেদ বলেন, “নির্বাচিত নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের আবাসনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এখন সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার।”