ঢাকা ১১:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

    নতুন নিবন্ধন চাওয়া ১৪৪টি রাজনৈতিক দল ইসির বাছাইয়ে ‘ফেল’

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০৫:৩০:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫
    • / ২৫৭ বার পড়া হয়েছে

    নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা নতুন ১৪৪টি রাজনৈতিক দলের কোনো দলই প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এসব দলের আবেদনে নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি পাওয়ায় কমিশন সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে তা সংশোধনের জন্য চিঠি দিচ্ছে।

    মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) এ তথ্য নিশ্চিত করেন ইসির অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী নেওয়াজ। তিনি জানান, প্রথম ধাপে ৬২টি দলকে চিঠি পাঠানো হচ্ছে এবং দ্বিতীয় ধাপে বাকি দলগুলোকেও চিঠি দেওয়া হবে। চিঠি পাওয়ার পর ১৫ দিনের মধ্যে যেসব ঘাটতি রয়েছে তা পূরণ করতে হবে।

    গত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধনের আবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। পরে কিছু দলের আবেদনের প্রেক্ষিতে সময় বাড়িয়ে তা ২২ জুন পর্যন্ত করা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৪৪টি দল ১৪৭টি আবেদন জমা দেয়। তবে প্রাথমিক যাচাইয়ে কোনো দলই ইসির নির্ধারিত মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি।

    আইন অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে হলে দলকে একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কমিটি, এক-তৃতীয়াংশ জেলায় এবং অন্তত ১০০টি উপজেলায় কার্যকর কমিটি গঠনের পাশাপাশি প্রতিটি কমিটিতে কমপক্ষে ২০০ ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত সমর্থনের প্রমাণ দিতে হয়। কেউ পূর্বে সংসদ সদস্য থাকলে কিংবা জাতীয় নির্বাচনে কমপক্ষে পাঁচ শতাংশ ভোট পেলে সেটিও নিবন্ধনের একটি যোগ্যতা বিবেচিত হয়।

    এ সব মানদণ্ডের পাশাপাশি দাপ্তরিক নিয়ম-কানুন অনুসরণ করে সঠিক কাগজপত্র দাখিলের বিষয়টিও নিবন্ধনের প্রাথমিক বাছাইয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়। কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দলগুলোর সিংহভাগই এ মানদণ্ডগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

    প্রাথমিক বাছাইয়ের পর কমিশন দলগুলোর কাগজপত্র যাচাই করে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত পরিচালনা করে। এরপর দাবিদাওয়া ও আপত্তি জানাতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। সেখানে আপত্তি এলে শুনানি শেষে তা নিষ্পত্তি করা হয়। আপত্তি না থাকলে সংশ্লিষ্ট দলকে নিবন্ধনের সনদ দেয় কমিশন।

    নিবন্ধন ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল নিজস্ব প্রতীক ব্যবহার করে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫১টি। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এরপর ৫৫টি দল নিবন্ধন পেলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শর্ত না মানা, আদালতের নির্দেশ এবং ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামি ও জাগপার নিবন্ধন আদালতের নির্দেশে ফেরত দেওয়া হলেও ইসি কেবল জামায়াতকে পুনরায় নিবন্ধন দিয়েছে।

    নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা দলগুলোর মধ্যে রয়েছে: বাংলাদেশ সংগ্রামী ভোটার পার্টি, মুসলিম জনতা পার্টি, নতুন প্রজন্ম পার্টি, ওয়ার্ল্ড মুসলিম কমিউনিটি, ন্যাশনাল ফ্রিডম পার্টি, নতুন বাংলাদেশ পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি, কোয়ালিশন ন্যাশনাল পার্টি, বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি, বাংলাদেশ নাগরিক দল, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি, স্বাধীন বাংলা পার্টি, বাংলাদেশ আজাদী পার্টি, বাংলাদেশ গ্রীন পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), ন্যাশনাল লেবার পার্টি, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি-মার্কসবাদী), বাংলাদেশ ইসলামী ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় ভূমিহীন পার্টি, ইউনাইটেড বাংলাদেশ পার্টি, নিউক্লিয়াস পার্টি, বাংলাদেশ মাতৃভূমি দল, বাংলাদেশ বেকার সমাজ, সাধারণ জনতা পার্টি, মুসলিম সেভ ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলন, ভাসানী শক্তি পার্টি, বাংলাদেশ জাস্টিস মুভমেন্ট, খেলাফত ইসলাম, বাংলাদেশ সল্যুশন পার্টি, বাংলাদেশ শান্তির দল, বাংলাদেশ জনমত পার্টি, অহিংস গণআন্দোলন, বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণময় পার্টি, এবং আরও অনেক।

    ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব দল যথাসময়ে ঘাটতি পূরণ করতে পারবে, তাদের আবেদন পরবর্তী ধাপে বিবেচনা করা হবে। তবে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ত্রুটি সংশোধন না হলে দলগুলোর আবেদন বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
    রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশে ক্রমাগত নতুন দল গঠনের প্রবণতা দেখা গেলেও সঠিক সাংগঠনিক কাঠামো ও গ্রহণযোগ্যতা ছাড়া নিবন্ধন পাওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে। ফলে ইসির কঠোর যাচাই-বাছাই এই প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করছে।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    নতুন নিবন্ধন চাওয়া ১৪৪টি রাজনৈতিক দল ইসির বাছাইয়ে ‘ফেল’

    আপডেট সময় ০৫:৩০:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

    নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা নতুন ১৪৪টি রাজনৈতিক দলের কোনো দলই প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এসব দলের আবেদনে নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি পাওয়ায় কমিশন সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে তা সংশোধনের জন্য চিঠি দিচ্ছে।

    মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) এ তথ্য নিশ্চিত করেন ইসির অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী নেওয়াজ। তিনি জানান, প্রথম ধাপে ৬২টি দলকে চিঠি পাঠানো হচ্ছে এবং দ্বিতীয় ধাপে বাকি দলগুলোকেও চিঠি দেওয়া হবে। চিঠি পাওয়ার পর ১৫ দিনের মধ্যে যেসব ঘাটতি রয়েছে তা পূরণ করতে হবে।

    গত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধনের আবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। পরে কিছু দলের আবেদনের প্রেক্ষিতে সময় বাড়িয়ে তা ২২ জুন পর্যন্ত করা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৪৪টি দল ১৪৭টি আবেদন জমা দেয়। তবে প্রাথমিক যাচাইয়ে কোনো দলই ইসির নির্ধারিত মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি।

    আইন অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে হলে দলকে একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কমিটি, এক-তৃতীয়াংশ জেলায় এবং অন্তত ১০০টি উপজেলায় কার্যকর কমিটি গঠনের পাশাপাশি প্রতিটি কমিটিতে কমপক্ষে ২০০ ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত সমর্থনের প্রমাণ দিতে হয়। কেউ পূর্বে সংসদ সদস্য থাকলে কিংবা জাতীয় নির্বাচনে কমপক্ষে পাঁচ শতাংশ ভোট পেলে সেটিও নিবন্ধনের একটি যোগ্যতা বিবেচিত হয়।

    এ সব মানদণ্ডের পাশাপাশি দাপ্তরিক নিয়ম-কানুন অনুসরণ করে সঠিক কাগজপত্র দাখিলের বিষয়টিও নিবন্ধনের প্রাথমিক বাছাইয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়। কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দলগুলোর সিংহভাগই এ মানদণ্ডগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

    প্রাথমিক বাছাইয়ের পর কমিশন দলগুলোর কাগজপত্র যাচাই করে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত পরিচালনা করে। এরপর দাবিদাওয়া ও আপত্তি জানাতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। সেখানে আপত্তি এলে শুনানি শেষে তা নিষ্পত্তি করা হয়। আপত্তি না থাকলে সংশ্লিষ্ট দলকে নিবন্ধনের সনদ দেয় কমিশন।

    নিবন্ধন ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল নিজস্ব প্রতীক ব্যবহার করে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫১টি। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এরপর ৫৫টি দল নিবন্ধন পেলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শর্ত না মানা, আদালতের নির্দেশ এবং ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামি ও জাগপার নিবন্ধন আদালতের নির্দেশে ফেরত দেওয়া হলেও ইসি কেবল জামায়াতকে পুনরায় নিবন্ধন দিয়েছে।

    নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা দলগুলোর মধ্যে রয়েছে: বাংলাদেশ সংগ্রামী ভোটার পার্টি, মুসলিম জনতা পার্টি, নতুন প্রজন্ম পার্টি, ওয়ার্ল্ড মুসলিম কমিউনিটি, ন্যাশনাল ফ্রিডম পার্টি, নতুন বাংলাদেশ পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি, কোয়ালিশন ন্যাশনাল পার্টি, বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি, বাংলাদেশ নাগরিক দল, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি, স্বাধীন বাংলা পার্টি, বাংলাদেশ আজাদী পার্টি, বাংলাদেশ গ্রীন পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), ন্যাশনাল লেবার পার্টি, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি-মার্কসবাদী), বাংলাদেশ ইসলামী ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় ভূমিহীন পার্টি, ইউনাইটেড বাংলাদেশ পার্টি, নিউক্লিয়াস পার্টি, বাংলাদেশ মাতৃভূমি দল, বাংলাদেশ বেকার সমাজ, সাধারণ জনতা পার্টি, মুসলিম সেভ ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলন, ভাসানী শক্তি পার্টি, বাংলাদেশ জাস্টিস মুভমেন্ট, খেলাফত ইসলাম, বাংলাদেশ সল্যুশন পার্টি, বাংলাদেশ শান্তির দল, বাংলাদেশ জনমত পার্টি, অহিংস গণআন্দোলন, বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণময় পার্টি, এবং আরও অনেক।

    ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব দল যথাসময়ে ঘাটতি পূরণ করতে পারবে, তাদের আবেদন পরবর্তী ধাপে বিবেচনা করা হবে। তবে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ত্রুটি সংশোধন না হলে দলগুলোর আবেদন বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
    রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশে ক্রমাগত নতুন দল গঠনের প্রবণতা দেখা গেলেও সঠিক সাংগঠনিক কাঠামো ও গ্রহণযোগ্যতা ছাড়া নিবন্ধন পাওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে। ফলে ইসির কঠোর যাচাই-বাছাই এই প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করছে।