নির্বাচন কমিশন গঠনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি চায় বিএনপি, সিলেকশন কমিটি গঠনের প্রস্তাব চূড়ান্ত

- আপডেট সময় ০৬:৪৮:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫
- / ২৫৭ বার পড়া হয়েছে
নির্বাচন কমিশন গঠনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, প্রতিটি সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য সংবিধানে আলাদা করে নিয়ম না এনে, সংশ্লিষ্ট আইনের মাধ্যমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং আচরণবিধি নিশ্চিত করা উচিত। তবে নির্বাচন কমিশনের বিষয়টি সংবিধানে আলাদাভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে বলে দলটি একমত।
বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে চলমান সংলাপের দ্বিতীয় ধাপের ১৮তম দিনের আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি। আলোচনায় বিএনপির পক্ষ থেকে কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, কেবল সংবিধানে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করলেই চলবে না; একটি উপযুক্ত এবং বিশ্বাসযোগ্য নিয়োগপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রস্তাবিত নিয়োগের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর।
তিনি জানান, আলোচনা থেকে উঠে আসা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট সিলেকশন কমিটি গঠনের প্রস্তাব চূড়ান্ত হয়েছে। এই কমিটিতে থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার (সভাপতি), বিরোধী দলের মনোনীত ডেপুটি স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা এবং প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি। এই কমিটি একটি অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচন করবে, যেখানে সিভিল সোসাইটি, রাজনৈতিক দল ও সাধারণ নাগরিকরাও নাম প্রস্তাব করতে পারবেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও জানান, এই অনুসন্ধান বা ‘সার্চ কমিটি’ প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত যাচাই-বাছাই করে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করবে এবং তা সিলেকশন কমিটির কাছে পেশ করবে। সিলেকশন কমিটি চাইলে এই তালিকা থেকে বা নতুন প্রার্থী বিবেচনায় নিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। উল্লেখযোগ্যভাবে, আগের প্রস্তাবে প্রতিটি পদের জন্য দুটি করে নাম সুপারিশের কথা থাকলেও এখন প্রতিটি পদের জন্য একটি করে নামই রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে।
এছাড়া সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের উপধারায় একটি নতুন সংযোজনের প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, সংসদ কমিশনের সদস্যদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়ন করবে এবং তাদের জন্য একটি আচরণবিধি নির্ধারণ করবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, “আমরা এমন একটি নির্বাচন কমিশন চাই, যারা কার্যত স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে। তাই তাদের নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকে কার্যক্রম পর্যন্ত সবখানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকতে হবে।” তিনি উল্লেখ করেন, অতীতে একাধিকবার নির্বাচন কমিশন গঠন হলেও তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। জাতি আজ ঐক্যবদ্ধভাবে সে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। এখন শুধু আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া বাকি। আমরা ধরে নিচ্ছি, পরবর্তী নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোকে তাঁর বাসভবন ‘যমুনা’য় জরুরি আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানোর ফলে আজ দিনের পুরো সময় আলোচনা হয়নি। অর্ধদিন চলা এই বৈঠকে আলোচনার সমাপ্তি ঘটে।
বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান এবং আইয়ুব মিয়া।