পাঁচ ব্যাংক একীভূত করার আলোচনা চলছে: গভর্নর আহসান এইচ মনসুর

- আপডেট সময় ০৮:২৮:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫
- / ২৫৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, দেশের ছয়টি ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা পর্যালোচনা করে পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে একীভূতকরণের আগে প্রতিটি ব্যাংকের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করা হবে। যদি কোনো ব্যাংক যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে পারে, তবে তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে। তবে গভর্নরের মতে, এসব ব্যাংকের পক্ষে একীভূত না হওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরা সম্ভব হবে না।
সোমবার (৭ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান গভর্নর। এর আগে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এবং পরে বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামী ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি ব্যবস্থা (Risk-Based Supervision – RBS) চালু করা হবে। এই ব্যবস্থায় বিদ্যমান তদারকি কাঠামো ভেঙে ১২টি বিভাগে ভাগ করে ব্যাংকগুলোকে সার্বক্ষণিক তদারকির আওতায় আনা হবে। এর মাধ্যমে আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।
রাজনৈতিক ঝুঁকি রোধে এই ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন করলে গভর্নর বলেন, ঝুঁকিভিত্তিক তদারকির মাধ্যমে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ঠেকানো যাবে না। রাজনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হলে রাজনীতিকেই পরিশুদ্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংককে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা চলছে।
তিনি আরও বলেন, রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন না হলে শুধু তদারকি কাঠামো দিয়ে ব্যাংক খাতের ঝুঁকি কমানো সম্ভব নয়। যে রাজনৈতিক দল ব্যাংক খাতকে দুর্বল করেছে, তারা নিজেদের পরিণতি দেখে গেছে। সাময়িক সুবিধা মিললেও রাজনৈতিক দলের জন্য সেটা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর। তাই রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ব্যাংক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে।
গভর্নর আরও জানান, ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদে ৫০ শতাংশ স্বতন্ত্র পরিচালক থাকতে হবে। তারা যেন প্রকৃত অর্থে যোগ্য হন, তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্যানেল তৈরি করবে। সেই প্যানেল থেকেই স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিতে হবে।
পর্ষদ পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, “সব ব্যাংক এখন আমাদের নিবিড় তদারকির মধ্যে রয়েছে। কার্যক্রম মূল্যায়ন করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও পরিবর্তন আনা হবে। ব্যাংক আমানতকারীদের আশ্বস্ত করে গভর্নর বলেন, ছোট আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সব আমানত সুরক্ষিত রয়েছে।
এছাড়া যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হচ্ছে, সেগুলোর বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। গভর্নর স্পষ্ট করে বলেন, সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান টিকে থাকবে—এমন নয়। এই ঘোষণাগুলো দেশের ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্রিয় পদক্ষেপেরই অংশ বলে মনে করা হচ্ছে।