পানিবণ্টন চুক্তি, আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতের রায় ভারতের বিপক্ষে

- আপডেট সময় ১১:৪৫:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫
- / ২৫৬ বার পড়া হয়েছে
নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরভিত্তিক আন্তর্জাতিক সালিশ আদালত (পার্মানেন্ট কোর্ট অব আরবিট্রেশন-পিসিএ) ভারতকে সিন্ধু নদের পানিবণ্টন চুক্তির ওপর থেকে স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। গত ৮ আগস্ট এই ঘোষণা দিয়েছেন পিসিএ। আদালত আরও বলেছেন, চুক্তির মূল নথির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন কোনো স্থাপনাও সিন্ধু নদ কিংবা সিন্ধুর সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো নদ-নদীতে স্থাপন করা যাবে না।
গত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে এক ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে ভারত। এই হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছিল পাকিস্তানি কাশ্মিরভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’।
চুক্তি স্থগিতের ফলে পাকিস্তানের তিন নদী সিন্ধু, চেনাব এবং ঝিলামের পানি প্রবাহ ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়, যা দেশটির কৃষি উৎপাদনকে গুরুতর ঝুঁকির মুখে ফেলে। ভারত চুক্তি স্থগিত করার পর আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতে মামলা করে পাকিস্তান এবং গত ৮ আগস্ট আদালত সেই মামলার রায় দেন।
পিসিএ-এর রায়ে বলা হয়েছে, “সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তির মূল শর্ত হলো সিন্ধু অববাহিকার পশ্চিমাঞ্চলীয় তিনটি নদী, যেগুলো পাকিস্তানের ভূখণ্ডে পড়েছে—সেগুলোতে পানির প্রবাহ বাধামুক্ত রাখবে ভারত। পিসিএ ভারতকে চুক্তির মূল শর্তে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।”
সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করার পর ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন যে, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এই নদের ভারতীয় অংশের ওপর বাঁধ নির্মাণ করা হবে। আদালত এ বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছেন, “ভারত যদি সিন্ধু নদের ওপর বাঁধ বা এ জাতীয় কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে চায়, তাহলে অবশ্যই চুক্তির শর্ত মেনে এবং চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সেটি নির্মাণ করতে হবে।”
আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতের এই রায়কে পাকিস্তান স্বাভাবিকভাবেই স্বাগত জানিয়েছে। গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জানায়, “গত ৮ আগস্ট আন্তর্জাতিক সালিশ আদালত সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি ইস্যুতে যে রায় দিয়েছেন, তাকে স্বাগত জানাচ্ছে পাকিস্তান। আদালত ভারতকে সিন্ধু নদের পানি ‘বয়ে যেতে দেওয়ার’ নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি এই নদের ওপর বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে মূল চুক্তির শর্ত স্মরণে রাখারও আহ্বান জানিয়েছেন।” ভারত এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
সিন্ধু ও এর উপনদীগুলোর পানি ব্যবহার নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। এই বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় এ চুক্তি হয় এবং দুই দেশ তাতে স্বাক্ষর করে। চুক্তিটির মাধ্যমে সিন্ধু অববাহিকার পূর্বাঞ্চলীয় তিনটি নদী ইরাবতী, বিপাশা ও শতদ্রুর পানি ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয় ভারতকে। আর পাকিস্তানকে পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি নদ-নদী সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাবের অধিকাংশ পানি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। চুক্তিটিতে কোনো দেশ একতরফাভাবে এটি স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে না এবং এতে সুস্পষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রয়েছে।