ঢাকা ০৯:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫

    পার্বত্য অঞ্চলে দীর্ঘদিনের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র-ঐক্যের ডাক সালাহউদ্দিন আহমদের

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০৮:১৯:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫
    • / ২৫৪ বার পড়া হয়েছে

    পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি সতর্ক করে বলেন, এই ষড়যন্ত্র যাতে সফল না হয়, সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। অখণ্ড বাংলাদেশ এবং সবাই বাংলাদেশি এই পরিচয়কে ধারণ করার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

    শনিবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আদিবাসী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী প্রসঙ্গ ও জাতীয় নিরাপত্তা ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকের আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক গবেষণা সংস্থা সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশন।

    সালাহউদ্দিন আহমদ অভিযোগ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাণিজ্য ও রাজনৈতিককরণের মাধ্যমে দেশে বিভক্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। “বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে-বিপক্ষে এই ধরনের বক্তব্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধ জাতিকে বিভক্ত করা আমাদের কাম্য হতে পারে না। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও কেউ এটি কামনা করতে পারে না,” তিনি বলেন।

    তিনি আরও উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিভক্তির মানসিকতা বহুবার দেখা গেছে। “স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ বিভাজন তৈরি করে মানুষের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রি করতে করতে যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে, সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে,” বলেন তিনি।

    বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, বাংলাদেশের সব মানুষ মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেছে। “মুক্তিযুদ্ধে সবাই সশস্ত্রভাবে না থাকলেও মানসিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল। স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল বলে যাদের আমরা আলাদা করে দেখতে চাই, স্বাধীনতার পর তাদের মধ্যে কেউ প্রকাশ্যে স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেনি। কেউ ভিন্নমত পোষণ করলেও স্বাধীনতাকে অস্বীকার করার মতো কোনো বিভাজনমূলক বক্তব্য আমরা দেখিনি,” তিনি মন্তব্য করেন।

    পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই অঞ্চলের বিষয়ে বহু আগেই একটি আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা চালু হয়েছে। সাম্প্রতিক কুকিচিন ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “যা আমরা চোখে দেখছি, এর পেছনেও অজানা কারণ আছে। পার্বত্য অঞ্চল, ভারতের কিছু অংশ ও মিয়ানমারের কিছু অংশ নিয়ে বৈশ্বিক কিছু শক্তির পরিকল্পনা থাকতে পারে। হয়তো এই ভূখণ্ডকে তারা অন্যভাবে সাজাতে চায়। এর বেশি আমি আজ বলব না। তবে আমাদের সজাগ থাকতে হবে, যাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো ষড়যন্ত্র সফল না হয়।”

    বাংলাদেশে বসবাসকারী সবার পরিচয় ‘বাংলাদেশি’ হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। “আমাদের সব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী, উপজাতি ও আধা উপজাতি—সবাইকে ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশি জাতি গঠনের অংশ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ জাতি, সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণের জন্যই আমরা একাত্তরের পর চব্বিশে আবার রক্ত দিয়েছি,” বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

    বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) নাঈম আশফাক চৌধুরী। সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর, জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান ইরান ও আমজনতার দলের সদস্যসচিব তারেক রহমান।

    অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মোহাম্মদ আব্দুর রব, ওসমানী সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ স্টাডিজের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুফি মুস্তাফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ বরকত আলী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ তারেক ফজল, প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহ আল ইউসুফ, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বাবু রুইথি কার্বারি এবং অ্যাকটিভিস্ট থোয়াই চিং মং শাক প্রমুখ।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    পার্বত্য অঞ্চলে দীর্ঘদিনের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র-ঐক্যের ডাক সালাহউদ্দিন আহমদের

    আপডেট সময় ০৮:১৯:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫

    পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি সতর্ক করে বলেন, এই ষড়যন্ত্র যাতে সফল না হয়, সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। অখণ্ড বাংলাদেশ এবং সবাই বাংলাদেশি এই পরিচয়কে ধারণ করার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

    শনিবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আদিবাসী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী প্রসঙ্গ ও জাতীয় নিরাপত্তা ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকের আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক গবেষণা সংস্থা সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশন।

    সালাহউদ্দিন আহমদ অভিযোগ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাণিজ্য ও রাজনৈতিককরণের মাধ্যমে দেশে বিভক্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। “বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে-বিপক্ষে এই ধরনের বক্তব্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধ জাতিকে বিভক্ত করা আমাদের কাম্য হতে পারে না। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও কেউ এটি কামনা করতে পারে না,” তিনি বলেন।

    তিনি আরও উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিভক্তির মানসিকতা বহুবার দেখা গেছে। “স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ বিভাজন তৈরি করে মানুষের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রি করতে করতে যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে, সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে,” বলেন তিনি।

    বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, বাংলাদেশের সব মানুষ মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেছে। “মুক্তিযুদ্ধে সবাই সশস্ত্রভাবে না থাকলেও মানসিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল। স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল বলে যাদের আমরা আলাদা করে দেখতে চাই, স্বাধীনতার পর তাদের মধ্যে কেউ প্রকাশ্যে স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেনি। কেউ ভিন্নমত পোষণ করলেও স্বাধীনতাকে অস্বীকার করার মতো কোনো বিভাজনমূলক বক্তব্য আমরা দেখিনি,” তিনি মন্তব্য করেন।

    পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই অঞ্চলের বিষয়ে বহু আগেই একটি আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা চালু হয়েছে। সাম্প্রতিক কুকিচিন ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “যা আমরা চোখে দেখছি, এর পেছনেও অজানা কারণ আছে। পার্বত্য অঞ্চল, ভারতের কিছু অংশ ও মিয়ানমারের কিছু অংশ নিয়ে বৈশ্বিক কিছু শক্তির পরিকল্পনা থাকতে পারে। হয়তো এই ভূখণ্ডকে তারা অন্যভাবে সাজাতে চায়। এর বেশি আমি আজ বলব না। তবে আমাদের সজাগ থাকতে হবে, যাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো ষড়যন্ত্র সফল না হয়।”

    বাংলাদেশে বসবাসকারী সবার পরিচয় ‘বাংলাদেশি’ হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। “আমাদের সব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী, উপজাতি ও আধা উপজাতি—সবাইকে ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশি জাতি গঠনের অংশ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ জাতি, সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণের জন্যই আমরা একাত্তরের পর চব্বিশে আবার রক্ত দিয়েছি,” বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

    বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) নাঈম আশফাক চৌধুরী। সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর, জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান ইরান ও আমজনতার দলের সদস্যসচিব তারেক রহমান।

    অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মোহাম্মদ আব্দুর রব, ওসমানী সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ স্টাডিজের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুফি মুস্তাফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ বরকত আলী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ তারেক ফজল, প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহ আল ইউসুফ, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বাবু রুইথি কার্বারি এবং অ্যাকটিভিস্ট থোয়াই চিং মং শাক প্রমুখ।