বাংলাদেশি পর্যটক না থাকায়, কলকাতায় ক্ষতি ছাড়িয়েছে হাজার কোটি রুপি

- আপডেট সময় ০৪:৪১:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫
- / ২৬৪ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশি পর্যটকদের অনুপস্থিতিতে গত এক বছর ধরে টিকে থাকার জন্য লড়াই করছেন কলকাতার ব্যবসায়ীরা। রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে ঢাকায় পরিস্থিতি বদলানোর পর থেকেই কলকাতার নিউ মার্কেট, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট এবং মারকুইস স্ট্রিটে বাংলাদেশি পর্যটকনির্ভর বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বহু ব্যবসায়ী এখন আশায় বুক বাঁধছেন, পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে হয়তো আবার পুরনো চেহারায় ফিরবে এ অঞ্চল।
সোমবার প্রকাশিত টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি পর্যটকদের কারণে কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকা একসময় “মিনি বাংলাদেশ” নামে পরিচিত ছিল। এখন সেই এলাকাগুলো নিস্তব্ধ। ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, গত এক বছরে ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়েছে এক হাজার কোটি রুপি। কেউ কেউ এই ক্ষতির অঙ্ক আরও বেশি বলে মনে করছেন।
ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী খান বলেন, এই এলাকায় প্রতিদিন গড়ে তিন কোটি রুপির ব্যবসা হতো, যার মধ্যে রয়েছে হোটেল, রেস্তোরাঁ, ট্রাভেল এজেন্সি, মানি এক্সচেঞ্জ, চিকিৎসাসেবা ও পরিবহন খাত। নিউ মার্কেট ও বুররাবাজার এলাকা ধরলে মোট ক্ষতি দাঁড়ায় প্রায় পাঁচ হাজার কোটি রুপি।
অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু হোটেল ও দোকান টিকে থাকার জন্য স্থানীয় ক্রেতাদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে। মারকুইস স্ট্রিটের একটি ট্রাভেল কোম্পানির ব্যবস্থাপক প্রবীর বিশ্বাস বলেন, “এক বছর আগেও পর্যটকের ভিড়ে গাড়ি পার্ক করার জায়গা পাওয়া যেত না, আর এখন টানা কয়েক দিন পার হলেও কেউ আসে না।”
সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মানি এক্সচেঞ্জ খাতে। বাংলাদেশি টাকায় লেনদেন করা প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। মারকুইস স্ট্রিট মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইনতেজার বলেন, “আমরা পুরোপুরি বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম, এখন বেঁচে থাকার লড়াই করছি।”
রেস্তোরাঁ খাতেও বিপর্যয় নেমে এসেছে। ব্যবসায়ীদের মতে, ছোট ও মাঝারি প্রায় ৪০ শতাংশ রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে। বাকিগুলো সীমিত বাজেটে কোনোভাবে টিকে আছে। রাধুনি রেস্তোরাঁর মালিক এনসি ভৌমিক বলেন, “আমরা কেবল অপেক্ষা করছি, কখন আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।”
করোনাকালের ধাক্কা সামলে অনেকে নতুন করে বিনিয়োগ করেছিলেন, কিন্তু গত বছরের আগস্ট থেকে বাংলাদেশি পর্যটকদের অনুপস্থিতি তাদের দ্বিতীয়বারের মতো গভীর সংকটে ফেলেছে। বিশেষ করে যাঁরা ঋণ নিয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছিলেন, তাদের এখন দিশেহারা অবস্থা।
পর্যটকনির্ভর অন্যান্য খাত যেমন হোমস্টে, রান্না করা খাবার সরবরাহকারী, ট্যুর গাইড সেবা সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়েছে। এলিয়ট রোডের বাসিন্দা ফারহান রসুল বলেন, “করোনার পর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আমি দুটি বাণিজ্যিক গাড়ি কিনেছিলাম। তখন এত কাজ ছিল যে অনেক সময় কাস্টমার ফিরিয়ে দিতে হতো। এখন মাসে পাঁচ-ছয়টি বুকিংও মেলে না।”
কলকাতার এই চিরচেনা পর্যটন এলাকা এখন যেন থমকে দাঁড়ানো এক শহর, যে অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশি পর্যটকদের ফেরার দিনটির জন্য।