ঢাকা ১২:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

    বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, চ্যালেঞ্জ ও প্রত্যাশার সন্ধিক্ষণে দল

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ১১:১৮:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
    • / ২৫৭ বার পড়া হয়েছে

    দীর্ঘ ১৮ বছরের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এক নতুন রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে নেতাকর্মীরা কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেলেও, নির্বাচন নিয়ে দলের শঙ্কা এখনও কাটেনি। পুরোনো মিত্রদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, এমনকি নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গেও তাদের সম্পর্ক এখনও সুদৃঢ় হয়নি। এছাড়াও, ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে দলের কিছু নেতাকর্মীর বিতর্কিত কর্মকাণ্ড দলটিকে বিব্রত করছে এবং সমালোচনার জন্ম দিচ্ছে।

    এসব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বিএনপি নেতারা দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে দেশকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনতে মনোযোগ দিচ্ছেন। তবে সমালোচকরা মনে করছেন, বিএনপি ক্ষমতা লাভের জন্য উন্মুখ, তাই সংস্কারের বিষয়ে তারা বড় ছাড় দিতে রাজি নয়। ক্ষমতা কাছে এসেও দূরে থাকা এবং নির্বাচন নিয়ে নানা গুজবের কারণে দলটির নেতারা এক ধরনের স্নায়ুচাপে ভুগছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

    বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, সফল অভ্যুত্থানের পর নির্বাচন, সংস্কার ও বিচারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে গণঅভ্যুত্থানের শক্তির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। সবাই নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ায় গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাধা তৈরি হচ্ছে।

    বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার সফল অভ্যুত্থানের পর মানুষ গুণগত পরিবর্তনের ব্যাপারে আশান্বিত হয়েছিল, যা রাজনীতি, রাজনৈতিক কাঠামো ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত। বিএনপি সেই গুণগত পরিবর্তনকে ধারণ করছে। তিনি আরও বলেন, দেশে এখন নির্বাচনের আবহ তৈরি হয়েছে, যদিও একটি গোষ্ঠী তা বানচালের চেষ্টা করছে।

    এমন পরিস্থিতিতেই আজ ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে দলটি এক সপ্তাহের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। গঠন করা হয়েছে ১৬ সদস্যবিশিষ্ট ‘জাতীয় উদযাপন’ কমিটি।
    ১৯৭৮ সালের এই দিনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তার ছেলে তারেক রহমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে লন্ডন থেকে দল পরিচালনা করছেন। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, তার সক্রিয় উপস্থিতির শূন্যতা পূরণ হচ্ছে না।

    মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের কাজগুলো এগিয়ে নিচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা চাই, যত দ্রুত সম্ভব সব রাজনৈতিক দল অন্তত একটি বিষয়ে একমত হোক এবং নির্বাচন দ্রুত সম্পন্ন করে সংসদ তৈরি হোক।

    বিএনপি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেনি। তবে দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর এই কর্মযজ্ঞ শুরু হবে। এরই মধ্যে অনেক আসনে দলের প্রার্থীদের সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। দলের হাইকমান্ড তরুণ নেতৃত্বের প্রতি জনগণের আগ্রহকে গুরুত্ব দিচ্ছে এবং দলীয় মনোনয়নে তার প্রভাব পড়তে পারে।

    বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তার দল গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, যেখানে মেধার মূল্য থাকবে, মানুষ বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারবে এবং ভোটের অধিকারসহ সব ধরনের অধিকার নিশ্চিত হবে।

    • ১ সেপ্টেম্বর: ভোরে ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। বেলা ১১টায় শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন। সারাদেশের সব মহানগর ও জেলায় আলোচনা সভা ও র‍্যালি।
    • ২ সেপ্টেম্বর: দুপুর ২টায় নয়াপল্টনের সামনে থেকে ঢাকায় একটি বর্ণাঢ্য র‍্যালি অনুষ্ঠিত হবে।
    • ৩ সেপ্টেম্বর: দেশের সব উপজেলা ও পৌর এলাকায় আলোচনা সভা ও র‍্যালি।
    • ৪ সেপ্টেম্বর: সব মহানগর, জেলা-উপজেলায় বৃক্ষরোপণ, মৎস্য অবমুক্তকরণ, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা।
    • ৫ সেপ্টেম্বর: ঢাকায় একটি গোলটেবিল আলোচনা হবে।

    প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং বিএনপির পক্ষ থেকে পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, চ্যালেঞ্জ ও প্রত্যাশার সন্ধিক্ষণে দল

    আপডেট সময় ১১:১৮:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

    দীর্ঘ ১৮ বছরের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এক নতুন রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে নেতাকর্মীরা কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেলেও, নির্বাচন নিয়ে দলের শঙ্কা এখনও কাটেনি। পুরোনো মিত্রদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, এমনকি নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গেও তাদের সম্পর্ক এখনও সুদৃঢ় হয়নি। এছাড়াও, ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে দলের কিছু নেতাকর্মীর বিতর্কিত কর্মকাণ্ড দলটিকে বিব্রত করছে এবং সমালোচনার জন্ম দিচ্ছে।

    এসব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বিএনপি নেতারা দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে দেশকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনতে মনোযোগ দিচ্ছেন। তবে সমালোচকরা মনে করছেন, বিএনপি ক্ষমতা লাভের জন্য উন্মুখ, তাই সংস্কারের বিষয়ে তারা বড় ছাড় দিতে রাজি নয়। ক্ষমতা কাছে এসেও দূরে থাকা এবং নির্বাচন নিয়ে নানা গুজবের কারণে দলটির নেতারা এক ধরনের স্নায়ুচাপে ভুগছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

    বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, সফল অভ্যুত্থানের পর নির্বাচন, সংস্কার ও বিচারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে গণঅভ্যুত্থানের শক্তির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। সবাই নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ায় গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাধা তৈরি হচ্ছে।

    বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার সফল অভ্যুত্থানের পর মানুষ গুণগত পরিবর্তনের ব্যাপারে আশান্বিত হয়েছিল, যা রাজনীতি, রাজনৈতিক কাঠামো ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত। বিএনপি সেই গুণগত পরিবর্তনকে ধারণ করছে। তিনি আরও বলেন, দেশে এখন নির্বাচনের আবহ তৈরি হয়েছে, যদিও একটি গোষ্ঠী তা বানচালের চেষ্টা করছে।

    এমন পরিস্থিতিতেই আজ ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে দলটি এক সপ্তাহের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। গঠন করা হয়েছে ১৬ সদস্যবিশিষ্ট ‘জাতীয় উদযাপন’ কমিটি।
    ১৯৭৮ সালের এই দিনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তার ছেলে তারেক রহমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে লন্ডন থেকে দল পরিচালনা করছেন। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, তার সক্রিয় উপস্থিতির শূন্যতা পূরণ হচ্ছে না।

    মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের কাজগুলো এগিয়ে নিচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা চাই, যত দ্রুত সম্ভব সব রাজনৈতিক দল অন্তত একটি বিষয়ে একমত হোক এবং নির্বাচন দ্রুত সম্পন্ন করে সংসদ তৈরি হোক।

    বিএনপি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেনি। তবে দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর এই কর্মযজ্ঞ শুরু হবে। এরই মধ্যে অনেক আসনে দলের প্রার্থীদের সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। দলের হাইকমান্ড তরুণ নেতৃত্বের প্রতি জনগণের আগ্রহকে গুরুত্ব দিচ্ছে এবং দলীয় মনোনয়নে তার প্রভাব পড়তে পারে।

    বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তার দল গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, যেখানে মেধার মূল্য থাকবে, মানুষ বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারবে এবং ভোটের অধিকারসহ সব ধরনের অধিকার নিশ্চিত হবে।

    • ১ সেপ্টেম্বর: ভোরে ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। বেলা ১১টায় শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন। সারাদেশের সব মহানগর ও জেলায় আলোচনা সভা ও র‍্যালি।
    • ২ সেপ্টেম্বর: দুপুর ২টায় নয়াপল্টনের সামনে থেকে ঢাকায় একটি বর্ণাঢ্য র‍্যালি অনুষ্ঠিত হবে।
    • ৩ সেপ্টেম্বর: দেশের সব উপজেলা ও পৌর এলাকায় আলোচনা সভা ও র‍্যালি।
    • ৪ সেপ্টেম্বর: সব মহানগর, জেলা-উপজেলায় বৃক্ষরোপণ, মৎস্য অবমুক্তকরণ, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা।
    • ৫ সেপ্টেম্বর: ঢাকায় একটি গোলটেবিল আলোচনা হবে।

    প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং বিএনপির পক্ষ থেকে পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে।