বিশ্বে একমাত্র CRIB রক্তের ধারক ভারতীয় নারী-চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন আলোচনা

- আপডেট সময় ০৭:০৬:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫
- / ২৫২ বার পড়া হয়েছে
রক্ত আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা অক্সিজেন সরবরাহ থেকে শুরু করে রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমাদের চেনাজানা রক্তের গ্রুপ চারটি— A, B, AB ও O। কিন্তু যদি বলা হয়, এই চারটির বাইরে আরও একটি নতুন রক্তের গ্রুপের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে? শুনে অবাক লাগলেও ঘটনা সত্যি।
এমনই এক বিস্ময়কর রক্তের গ্রুপের সন্ধান মিলেছে ভারতের বেঙ্গালুরুতে, যা এখন পর্যন্ত বিশ্বে কেবল একজন মানুষের শরীরেই পাওয়া গেছে। এই অনন্য রক্তধারী হলেন বেঙ্গালুরুর কাছে কোলার নামক জায়গায় বসবাসকারী ৩৮ বছর বয়সী এক নারী। তাঁর নাম গোপন রাখা হয়েছে। সম্প্রতি হৃদযন্ত্রে জটিলতার কারণে তাঁকে অস্ত্রোপচারের মুখোমুখি হতে হয়।
সে সময় তাঁর রক্তের গ্রুপ পরীক্ষায় ফল আসে ‘O পজিটিভ’। কিন্তু বিপত্তি দেখা দেয় তখন, যখন সাধারণ O পজিটিভ রক্ত তাঁর শরীরে গ্রহণযোগ্য হচ্ছিল না। পরিবারের ২০ জন সদস্যের রক্ত মিলিয়ে দেখেও কোনও উপকার মেলেনি। চিকিৎসকরা হয়ে পড়েন চরম বিপাকে।
রহস্য উদঘাটনে নারীর রক্তের নমুনা পাঠানো হয় বেঙ্গালুরুর রোটারি টিটিকে ব্লাড সেন্টারে। সেখানেও কোনও সমাধান না পেয়ে তা পাঠানো হয় যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক ব্লাড গ্রুপ রেফারেন্স ল্যাবরেটরিতে। সেখানে দীর্ঘ ১০ মাস গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা এক যুগান্তকারী আবিষ্কারে পৌঁছান। দেখা যায়, ওই নারীর লোহিত রক্তকণিকায় এমন এক বিশেষ ধরনের অ্যান্টিজেন রয়েছে, যা আগে কখনো কোনো মানুষের শরীরে পাওয়া যায়নি। এই নতুন অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি নতুন এক রক্তের গ্রুপকে চিহ্নিত করে।
নতুন রক্তের গ্রুপটির নাম দেওয়া হয় “ক্রিব” (CRIB)। নামকরণে ‘CR’ এসেছে ‘ক্রোমার’ রক্ত সিস্টেম থেকে, আর ‘I’ ও ‘B’ যথাক্রমে ‘ইন্ডিয়া’ ও ‘বেঙ্গালুরু’ থেকে। এই নাম শুধু এক ব্যতিক্রমী আবিষ্কারের প্রতিনিধিত্বই করে না, বরং ভারতের নামও জায়গা করে নিয়েছে বৈশ্বিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে।
কিন্তু কেন এই রক্ত এত অনন্য? কারণ, শরীর সাধারণত নিজের রক্তের সঙ্গে পরিচিত থাকে। অন্য কারও রক্তে ভিন্ন অ্যান্টিজেন থাকলে শরীর সেটিকে শত্রু হিসেবে দেখে এবং লড়াই শুরু করে। এই নারীর শরীরের অ্যান্টিজেন গঠন এতটাই ভিন্ন যে, অন্য প্রায় সব রক্তই তার দেহের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। তাই পৃথিবীতে তিনিই একমাত্র মানুষ, যার রক্তের সঙ্গে মিলবে না আর কারও রক্তই।
এই বিরল রক্তের কারণে তাঁর হৃদযন্ত্রের অপারেশন করাও ছিল দারুণ চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু চিকিৎসকেরা কোনোভাবেই হাল ছাড়েননি। তাঁরা অসাধারণ দক্ষতায়, রক্ত ছাড়াই সেই জটিল হার্ট সার্জারি সফলভাবে সম্পন্ন করেন। এটা চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক অসাধারণ অর্জন বলেই বিবেচিত।
তবে প্রশ্ন উঠেছে, এই নারী কি ভাগ্যবান, নাকি দুর্ভাগা? তাঁর শরীরে এমন এক রক্ত আছে, যা পৃথিবীর কারও সঙ্গে মেলে না— এটি যেমন অনন্য, তেমনি বিপজ্জনকও। ভবিষ্যতে যদি তাঁর রক্ত প্রয়োজন হয়, তখন তো মিলবে না কারও রক্তই! সে কারণেই অনেকেই বলছেন, এই বিরলতা যেমন সৌভাগ্যের, তেমনি এক ধরনের ঝুঁকির প্রতীকও।
এই ঘটনা চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। এরই মধ্যে ভারতে ও বিশ্বব্যাপী বিরল রক্তের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেন ভবিষ্যতে এমন কোনো সংকটে আরও দ্রুত সমাধান পাওয়া যায়।
বেঙ্গালুরুর এই নারী যেমন চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন, তেমনি তাঁর গল্প হয়ে উঠেছে মানবদেহের রহস্যময় জগতের এক চমকপ্রদ উদাহরণ।