ভয়াল দুর্ঘটনার ১২ দিন পর খুললো মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজ, শোকেই স্তব্ধ শ্রেণিকক্ষ

- আপডেট সময় ১২:২৭:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫
- / ২৬২ বার পড়া হয়েছে
প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমানের বিধ্বস্ত হয়ে আগুনের লেলিহান শিখায় ছিন্নভিন্ন হয়েছিল একটি ভবন, থমকে গিয়েছিল অসংখ্য স্বপ্ন ও জীবনের গতিপথ। সেই মর্মান্তিক ঘটনার ঠিক ১২ দিন পর আজ সীমিত পরিসরে খুলেছে উত্তরার মাইলস্টোন এন্ড কলেজ। তবে শিক্ষার্থীরা আজ শ্রেণিকক্ষে ফিরলেও পাঠদান হয়নি; ফিরে এসেছে কেবল নিঃশব্দ শোক, স্মৃতি আর গভীর বেদনার নিয়ে।
রবিবার (৩ আগস্ট) সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে ঘুরে দেখা যায়, সকাল ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে প্রবেশ করছেন মূল ফটক দিয়ে। কিন্তু নেই কোনো চেনা কোলাহল, হাসি কিংবা উচ্ছ্বাস। সাড়ে ১০টার দিকে শুরু হয় মিলাদ মাহফিল, শোক ও স্মরণসভা, যাতে অংশ নেন কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। শ্রেণিকক্ষগুলোতেও কিছু শিক্ষার্থী নীরবে বসে ছিলেন— যেন একটি নিঃশব্দ প্রার্থনায় নিমগ্ন সবাই।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিরা ইসলাম বলেন, “প্রতিদিন যেই ভবনের সামনে দিয়ে ক্লাসে যেতাম, আজ সেখানে পোড়া গন্ধ, ধ্বংসস্তূপ আর শূন্যতা। আজ কোনো ক্লাস হয়নি, আমরা এসেছি শুধু একে অন্যকে দেখার জন্য।” একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম চোখে জল নিয়েই বলেন, “এই মাঠে আমরা কত হাসি-আনন্দ ভাগাভাগি করেছি। আজ সেই মাঠেই যেন নীরব কান্না। সহপাঠীরা আর ফিরবে না ভাবতেই বুকটা ভার হয়ে আসে।”
কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল জানান, শিক্ষার্থীরা যেন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে, সেজন্যই সীমিত পরিসরে ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া হয়েছে। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা শিক্ষক ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাচ্ছে, যা তাদের মানসিক স্বস্তি ফেরাতে সহায়ক হবে।
তিনি আরও জানান, আজ কলেজে আবারও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। বিমান বাহিনীর সহায়তায় ক্যাম্পাসেই চালু রয়েছে একটি চিকিৎসা ক্যাম্প, যেখানে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিংয়ে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন। কেউ চাইলে ব্যক্তিগত আলাপেরও সুযোগ পাচ্ছেন।
২১ জুলাই ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ তিন দফায় ছুটি ঘোষণা করে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী ২ আগস্ট পর্যন্ত কলেজ বন্ধ ছিল। এ সময়ও চালু ছিল প্রশাসনিক কার্যক্রম এবং দুর্ঘটনায় আহতদের সহায়তায় গঠিত কন্ট্রোল রুম।
এই অল্প সময়ের মধ্যেই শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের পারস্পরিক সহানুভূতি, মানবিকতা ও সহমর্মিতা হয়ে উঠেছে কলেজের সবচেয়ে বড় শক্তি। শ্রেণিকক্ষে পা রাখা শিক্ষার্থীদের নীরব উপস্থিতি যেন জানিয়ে দেয়— জীবন থেমে যায় না, কিন্তু কিছু ক্ষত সারতেও সময় লাগে।