ইসরায়েলে ইরানি হামলা:
মাইক্রোসফট অফিসের কাছে আগুন, রেলস্টেশন বন্ধ

- আপডেট সময় ০২:০৩:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
- / ২৬৭ বার পড়া হয়েছে
মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-ইরান সংঘাত এখন এক নতুন এবং বিপজ্জনক মোড় নিয়েছে। একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ বিরসেবা শহরে মাইক্রোসফটের কার্যালয়ের একদম কাছে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। এই হামলা দেশটির প্রযুক্তি কেন্দ্র এবং জনজীবনকে সরাসরি প্রভাবিত করছে।
ইসরায়েলের বিরসেবা শহরে মাইক্রোসফটের কার্যালয়ের খুব কাছেই বড় ধরনের আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। আবাসিক ভবনগুলোতেও এই আগুনে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘটনাস্থলে দ্রুত ছুটে গেছেন অগ্নিনির্বাপককর্মী ও প্যারামেডিকসরা। ইসরায়েলি জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, এই হামলায় আহত পাঁচজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ গাভ-ইয়াম টেকনোলজি পার্ক লক্ষ্য করে ইরান এই হামলা চালিয়েছে। এই টেক পার্কটি রোবোটিকস ও তথ্যবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার জন্য পরিচিত।
আল জাজিরার খবর অনুযায়ী, বেন গুরিয়ন ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইট অনুসারে, এই পার্কটি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সি৪আই শাখার ক্যাম্পাসের কাছে অবস্থিত। এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে কাছাকাছি অবস্থিত সোরোকা হাসপাতালেও ইরান হামলা চালায় বলে ধারণা করা হয়েছিল। তবে ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হাসপাতাল নয়, ইসরায়েলের সামরিক ও গোয়েন্দা কার্যালয়ই ছিল তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু।
এই হামলা শুধু জানমালের ক্ষতি করছে না, ইসরায়েলের সাধারণ জনজীবনেও ফেলছে বড় প্রভাব। ইসরায়েলের বিরসেবা শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে রেলস্টেশন সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের রেলওয়ে কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন। এই স্টেশনটি তেল আবিব থেকে বিরসেবা-ডাইমোনা অঞ্চলে আন্তঃনগর লাইনের অংশ। বিরসেবা পৌরকর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, উদ্ধারকারী দল সেখানে কাজ করছে। ইসরায়েলের উদ্ধারকারী দল মেগান ডেভিড অ্যাডম সামাজিক মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ছবি প্রকাশ করলেও, হামলায় কেউ হতাহত হয়নি বলে জানিয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীও বসে নেই। তারা জানিয়েছে, তারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার তিনটি কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, এই হামলায় ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার কেন্দ্রে থাকা ইরানের একজন কমান্ডার নিহত হয়েছেন।
ওই তিনটি কেন্দ্র থেকে ইসরায়েলের উদ্দেশে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে হামলা চালানো হয় বলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে। তাদের দাবি, নিহত কমান্ডার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এই পাল্টা হামলা মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলেছে।
এই ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা বিশ্বজুড়ে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রগতিশীল ইহুদি অধিকার সংগঠন জিউইশ ভয়েস ফর পিস (জেভিপি) ইসরায়েলকে ইরানের ওপর হামলা অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। সংগঠনটি বলেছে, এই হামলা পুরো অঞ্চলে একটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করছে। জেভিপি যুক্তরাষ্ট্রকে এখনই ইসরায়েলকে অস্ত্র দেওয়া বন্ধ করতে বলেছে।
আল জাজিরার খবর অনুযায়ী, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে জেভিপি আরও বলেছে, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল সরকারের যুদ্ধাপরাধে আন্তর্জাতিক সমর্থনে দীর্ঘদিনের দায়মুক্তি এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিঃশর্ত সামরিক সহায়তা আজকের এই পরিস্থিতিতে নিয়ে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর ইসরায়েলকে অন্তত ৩৮০ কোটি মার্কিন ডলার সামরিক সহায়তা দেয়। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আরও কয়েক বিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত সহায়তা ইসরায়েলকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
জেভিপি দাবি করেছে, ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন ও সমর্থনে ইসরায়েল সরকার ফিলিস্তিনিদের ওপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ এবং তাদের অনাহারের মাত্রা বাড়িয়ে চলছে। তাদের অভিযোগ, ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে এবং আঞ্চলিক যুদ্ধ উসকে দিচ্ছে।
তাই তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রকে এখনই ইসরায়েলকে অস্ত্র দেওয়া বন্ধ করতে হবে। এই ধরনের আহ্বান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে।
এই হামলাগুলো শুধু সামরিক কৌশল নয়, এর পেছনে রয়েছে গভীর ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণ। ইরানের হামলা ইসরায়েলের সামরিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে, একইসাথে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ফিলিস্তিনি ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান জোরালো করছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের পাল্টা হামলা ইরানের সামরিক সক্ষমতাকে দুর্বল করার এবং প্রতিরোধের বার্তা দেওয়ার প্রচেষ্টা।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার বিষয়টি সংঘাতের তীব্রতা বাড়াচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, এই সামরিক সহায়তাই ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংকট নিরসনে কূটনৈতিক সমাধানের উপর জোর দিলেও, উভয় পক্ষের কঠোর অবস্থান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।