সোহাগ হত্যার প্রতিবাদে রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

- আপডেট সময় ০৫:৫৪:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫
- / ২৬০ বার পড়া হয়েছে
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (১২ জুলাই) দুপুরে ব্র্যাক, নর্থ সাউথ, ইস্ট ওয়েস্ট, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি ও ইডেন কলেজসহ একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। বেলা একটার দিকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে আয়োজিত বিক্ষোভে অংশ নেন ‘ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থী সমাজ’-এর ব্যানারে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। এর আগে দুপুর ১২টায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) শিক্ষার্থীরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি মিছিল শেষে ১ নম্বর গেটে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন। সেখানে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির (আইইউবি) শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন।
বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা ‘কণ্ঠে আবার লাগা জোর, চাঁদাবাজের কবর খোঁড়’, ‘চাঁদাবাজ চাঁদা তোলে, ইন্টেরিম কী করে?’, ‘চব্বিশের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘কে দিল রে জানোয়ার মানুষ মারার অধিকার?’—এমন স্লোগান দেন।
তীব্র ক্ষোভ ও তিন দফা দাবি
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের দশম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ফারাবি জিসান বলেন, “মিটফোর্ডের সামনে চাঁদাবাজির জেরে এক ব্যবসায়ীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। অথচ রাজনৈতিক দলগুলো কেবল দায় এড়িয়ে বহিষ্কার করেছে। আমরা বলছি— এ ঘটনা দলীয় পরিচয়ে সংঘটিত হয়েছে এবং এর সুষ্ঠু বিচার চাই। এ ধরনের সংগঠন কোনো ক্যাম্পাসে রাজনীতি করতে পারে না। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কোনো কমিটি থাকতে পারবে না। আজকের মধ্যেই কমিটি প্রত্যাহার করতে হবে।”
আরেক শিক্ষার্থী সাইফুল্লাহ সাকিব বলেন, “বিপ্লব–পরবর্তী আশাবাদের জায়গাটা রাজনীতির সহিংসতায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমরা এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই।” ছাত্রনেতা মুরাদ আল হাসান বলেন, “তারেক রহমানকে বলছি— আপনি দেশে ফিরে এসে আপনার দল সামলান। রাজনীতি বদলাতে হলে বদল আনুন, সন্ত্রাস নয়।”
বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি উত্থাপন করেন:
1. শিক্ষাঙ্গনে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ: ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেকোনো ছাত্রদলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। নাম ব্যবহার করে প্রকাশিত কমিটি অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হবে।
2. দ্রুত বিচার: চকবাজারে সোহাগ হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সকলকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের আশ্রয়দানকারী রাজনৈতিক রাঘববোয়ালদেরও আইনের মুখোমুখি করতে হবে।
3. চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস বন্ধ: দেশের প্রতিটি জেলায় রাজনৈতিক পরিচয়ে বাজার, স্ট্যান্ড, দোকানপাটে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
শিক্ষার্থীরা সরকারের প্রতি ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, এই সময়ের মধ্যে যদি দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়, তাহলে দেশব্যাপী দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে।
একই দিন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের প্রধান ফটকে বিক্ষোভ করেন। ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা কলেজ গেটে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও গ্রেপ্তার গত বুধবার (৯ জুলাই) রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) কে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সোহাগকে পিটিয়ে, ইট-পাথরের টুকরো দিয়ে মাথা ও শরীর থেঁতলে হত্যা করা হয়। হত্যার আগে তাকে বিবস্ত্র করা হয় এবং হত্যাকারীরা শরীরের ওপর লাফিয়ে আঘাত করে।
ঘটনার পরপরই যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কয়েকজন নেতাকর্মীর সংশ্লিষ্টতা উঠে আসে। ইতোমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। অভিযুক্তদের মধ্যে দুজনকে বহিষ্কার করেছে জাতীয়তাবাদী যুবদল এবং আরও দুজনকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল।