ঢাকা ০৭:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

    মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যাকাণ্ড বর্বরতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে – রুমিন ফারহানা

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ১২:৩৪:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫
    • / ২৫৭ বার পড়া হয়েছে

    রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকায় প্রকাশ্যে ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সোহাগকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনাকে বর্বরতার সকল সীমা ছাড়িয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশো অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

    রুমিন ফারহানা বলেন, এই ঘটনার ভিডিওটি আমি দেখতে পারিনি। একটা পর্যায়ে গিয়ে মনে হয়েছে— আমার পক্ষে তা দেখা সম্ভব নয়। আমি কেবল অনুমান করতে পারি, এরকম নৃশংসতা বিশ্বজিৎ হত্যার সঙ্গেও তুলনীয় হতে পারে। এই হত্যাকাণ্ডটি বর্বরতার সকল সীমা অতিক্রম করেছে।

    তিনি বলেন, রাতের অন্ধকারে নয়, প্রকাশ্য দিবালোকে এ ঘটনা ঘটেছে। আশেপাশে কেউ এগিয়ে আসেনি। অথচ ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরেই আনসার ক্যাম্প ছিল। তখন তারা কী করছিল? দেশে পছন্দ করি আর না করি, একটা সরকার আছে— নির্বাচিত হোক বা না হোক। সেই সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আছেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আছে। তাহলে প্রশ্ন হলো— তারা কী করেছে? এই প্রশ্নগুলোর জবাব সরকারকে দিতে হবে।

    তিনি আরও বলেন, আপনি একজন অথর্ব স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে দায়িত্বে রেখেছেন। আমি ওনাকে অথর্ব বলছি কারণ তার এমন মন্তব্যের নজির আছে— যিনি গুলির ম্যাগাজিনকে চশমা বা মোবাইলের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। গুলি তার কাছে হয়তো অতি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু ততটা ক্ষতিকর নয়। তার ব্যর্থতা নতুন কিছু নয়, শুরু থেকেই তিনি সেটি প্রমাণ করে চলেছেন।

    দেশে আইনশৃঙ্খলার চিত্র তুলে ধরে রুমিন ফারহানা জানান, ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে প্রায় ১৩০০ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, যেখানে আগের বছরগুলোতে এই সংখ্যা ছিল অনেক কম— ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এই সংখ্যা কখনো ৫৫, কখনো ৫১, কখনো ৪৭–এর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

    তিনি অভিযোগ করেন, গত নয় মাসে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ভেঙে পড়েছে। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি ১০০টিরও বেশি মাজার ভাঙা হয়েছে, নারী ফুটবলারদের খেলা বন্ধের ষড়যন্ত্র হয়েছে, নারীর পোশাক নিয়ে পুলিশিং ও হেনস্তা হয়েছে। এমনকি সাবেক সংসদ সদস্যের সাবেক স্ত্রীর বাড়িতে পর্যন্ত ঢুকে পড়েছে মব। এসব ঘটনা কী আমরা দেখিনি?

    তিনি অভিযোগ করেন, কয়টি ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? নারীর পোশাক নিয়ে কটূক্তিকারীকে গ্রেপ্তারের পর থানার বাইরে তাকে স্বাগত জানাতে লোকজন ফুলের মালা নিয়ে দাঁড়ায়। এটাই কি সভ্যতার চিত্র? রুমিন ফারহানা বলেন, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার যদি অপরাধ করে থাকেন, তাহলে আইন অনুযায়ী শাস্তি হোক। কিন্তু তাকে জুতার মালা পরানো, ডিম নিক্ষেপ করা— এটা তো কোনো সভ্য দেশে ঘটে না।

    তিনি বলেন, ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা গেছে কে সোহাগের মাথা থেতলে দিয়েছে। সেই ব্যক্তিকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না? সাধারণভাবে অস্ত্র দেখলে মানুষ সরে যায়, কিন্তু ইট-পাথরের মতো জিনিসে লোকজন সরে না। তাহলে ওই হামলাকারীদের কে কন্ট্রোল করছিল? কারা ভীতি ছড়িয়ে রাখছিল চারপাশে?”

    তার দাবি, এখনও মিডিয়ায় যেসব প্রত্যক্ষদর্শীরা কথা বলছেন, তারা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। এর মানে, জনগণ ভীত। যখন বিশ্বজিৎকে মারা হয়েছিল, তখনও সরকার ছিল আওয়ামী লীগের। তখন প্রত্যক্ষদর্শীরা মুখ খুলতে ভয় পেয়েছিল। আজও মানুষ ভয় পাচ্ছে মুখ খুলতে— এটা প্রমাণ করে এই সরকার কাদের।

    তিনি অভিযোগ করেন, ভিডিও ফুটেজে স্পষ্টভাবে একজন হামলাকারীকে দেখা গেলেও তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। “বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বারবার বলেছেন, যাকে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তাকে যেন প্রথম আসামি করে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু তাকে গ্রেপ্তার করলে অনেক গোপন তথ্য বেরিয়ে পড়বে— সরকার সেটাই চায় না।

    রুমিন ফারহানা বলেন, সরকার বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে না দেওয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে এই ধরনের মব-সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। মূল আসামিদের গ্রেপ্তার না করে মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। এগুলো একদিন দেশের জনগণকেই ভোগাবে।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যাকাণ্ড বর্বরতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে – রুমিন ফারহানা

    আপডেট সময় ১২:৩৪:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

    রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকায় প্রকাশ্যে ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সোহাগকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনাকে বর্বরতার সকল সীমা ছাড়িয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশো অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

    রুমিন ফারহানা বলেন, এই ঘটনার ভিডিওটি আমি দেখতে পারিনি। একটা পর্যায়ে গিয়ে মনে হয়েছে— আমার পক্ষে তা দেখা সম্ভব নয়। আমি কেবল অনুমান করতে পারি, এরকম নৃশংসতা বিশ্বজিৎ হত্যার সঙ্গেও তুলনীয় হতে পারে। এই হত্যাকাণ্ডটি বর্বরতার সকল সীমা অতিক্রম করেছে।

    তিনি বলেন, রাতের অন্ধকারে নয়, প্রকাশ্য দিবালোকে এ ঘটনা ঘটেছে। আশেপাশে কেউ এগিয়ে আসেনি। অথচ ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরেই আনসার ক্যাম্প ছিল। তখন তারা কী করছিল? দেশে পছন্দ করি আর না করি, একটা সরকার আছে— নির্বাচিত হোক বা না হোক। সেই সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আছেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আছে। তাহলে প্রশ্ন হলো— তারা কী করেছে? এই প্রশ্নগুলোর জবাব সরকারকে দিতে হবে।

    তিনি আরও বলেন, আপনি একজন অথর্ব স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে দায়িত্বে রেখেছেন। আমি ওনাকে অথর্ব বলছি কারণ তার এমন মন্তব্যের নজির আছে— যিনি গুলির ম্যাগাজিনকে চশমা বা মোবাইলের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। গুলি তার কাছে হয়তো অতি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু ততটা ক্ষতিকর নয়। তার ব্যর্থতা নতুন কিছু নয়, শুরু থেকেই তিনি সেটি প্রমাণ করে চলেছেন।

    দেশে আইনশৃঙ্খলার চিত্র তুলে ধরে রুমিন ফারহানা জানান, ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে প্রায় ১৩০০ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, যেখানে আগের বছরগুলোতে এই সংখ্যা ছিল অনেক কম— ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এই সংখ্যা কখনো ৫৫, কখনো ৫১, কখনো ৪৭–এর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

    তিনি অভিযোগ করেন, গত নয় মাসে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ভেঙে পড়েছে। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি ১০০টিরও বেশি মাজার ভাঙা হয়েছে, নারী ফুটবলারদের খেলা বন্ধের ষড়যন্ত্র হয়েছে, নারীর পোশাক নিয়ে পুলিশিং ও হেনস্তা হয়েছে। এমনকি সাবেক সংসদ সদস্যের সাবেক স্ত্রীর বাড়িতে পর্যন্ত ঢুকে পড়েছে মব। এসব ঘটনা কী আমরা দেখিনি?

    তিনি অভিযোগ করেন, কয়টি ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? নারীর পোশাক নিয়ে কটূক্তিকারীকে গ্রেপ্তারের পর থানার বাইরে তাকে স্বাগত জানাতে লোকজন ফুলের মালা নিয়ে দাঁড়ায়। এটাই কি সভ্যতার চিত্র? রুমিন ফারহানা বলেন, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার যদি অপরাধ করে থাকেন, তাহলে আইন অনুযায়ী শাস্তি হোক। কিন্তু তাকে জুতার মালা পরানো, ডিম নিক্ষেপ করা— এটা তো কোনো সভ্য দেশে ঘটে না।

    তিনি বলেন, ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা গেছে কে সোহাগের মাথা থেতলে দিয়েছে। সেই ব্যক্তিকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না? সাধারণভাবে অস্ত্র দেখলে মানুষ সরে যায়, কিন্তু ইট-পাথরের মতো জিনিসে লোকজন সরে না। তাহলে ওই হামলাকারীদের কে কন্ট্রোল করছিল? কারা ভীতি ছড়িয়ে রাখছিল চারপাশে?”

    তার দাবি, এখনও মিডিয়ায় যেসব প্রত্যক্ষদর্শীরা কথা বলছেন, তারা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। এর মানে, জনগণ ভীত। যখন বিশ্বজিৎকে মারা হয়েছিল, তখনও সরকার ছিল আওয়ামী লীগের। তখন প্রত্যক্ষদর্শীরা মুখ খুলতে ভয় পেয়েছিল। আজও মানুষ ভয় পাচ্ছে মুখ খুলতে— এটা প্রমাণ করে এই সরকার কাদের।

    তিনি অভিযোগ করেন, ভিডিও ফুটেজে স্পষ্টভাবে একজন হামলাকারীকে দেখা গেলেও তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। “বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বারবার বলেছেন, যাকে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তাকে যেন প্রথম আসামি করে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু তাকে গ্রেপ্তার করলে অনেক গোপন তথ্য বেরিয়ে পড়বে— সরকার সেটাই চায় না।

    রুমিন ফারহানা বলেন, সরকার বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে না দেওয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে এই ধরনের মব-সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। মূল আসামিদের গ্রেপ্তার না করে মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। এগুলো একদিন দেশের জনগণকেই ভোগাবে।