যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কমাতে আলোচনায় অগ্রগতি, বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির ইঙ্গিত

- আপডেট সময় ১১:৫১:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
- / ২৬২ বার পড়া হয়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক ইস্যুতে চলমান তৃতীয় দফার আলোচনায় বাংলাদেশ ইতিবাচক অগ্রগতি অর্জন করেছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে শুরু হওয়া এই আলোচনার প্রথম দিন শেষে তিনি জানান, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক হার কমবে বলে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ধারণা পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় হোয়াটসঅ্যাপে দেওয়া এক বার্তায় মাহবুবুর রহমান বলেন, “এজেন্ডা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আজ ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আমাদের শুল্ক যথেষ্ট পরিমাণে কমবে। তবে সুনির্দিষ্ট হার এখনই বলা সম্ভব নয়। আলোচনার বাকি দিনগুলোতেও (আজ ও আগামীকাল) আমরা আশাবাদী, বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু হবে।”
ওয়াশিংটনে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৩টা) প্রথম দিনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা তিন দিনব্যাপী, যা বৃহস্পতিবার শেষ হওয়ার কথা। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। দলে আরও রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সহকারী ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ ব্রেন্ডন লিঞ্চ।
উল্লেখ্য, ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকা ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক নিয়ে বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন। বর্তমানে বাংলাদেশের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে ২২ থেকে ২৩ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে, যা ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির আগে ছিল সাড়ে ১৫ শতাংশ। চলতি বছরের ২ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন ৬০টি দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। তবে ৯ এপ্রিল তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। এরপর ৮ জুলাই নতুন ঘোষণা দিয়ে জানানো হয়, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পাল্টা শুল্ক হার হবে ৩৫ শতাংশ এবং এতে আরও ১০ শতাংশ যুক্ত হবে।
বৈঠকের আগে গত ২৩ জুলাই বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে একটি অবস্থানপত্র পাঠায়, যার ভিত্তিতে এই আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাল্টা শুল্ক কমানোর চেষ্টা করছে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ বোয়িং কোম্পানির কাছ থেকে আগামী কয়েক বছরে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়া প্রতিবছর সাত লাখ টন করে পাঁচ বছর মেয়াদে গম আমদানি, সয়াবিন, এলএনজি, তুলা, সামরিক সরঞ্জামসহ বিভিন্ন মার্কিন পণ্য আমদানির পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ১২৩ বিলিয়ন ডলার হলেও তারা ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্কে চুক্তি করেছে। আমাদের ঘাটতি মাত্র ৬ বিলিয়ন ডলার, যেটি আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে আরও কমে আসবে। আমদানিও বাড়বে অন্তত দেড় বিলিয়ন ডলারের মতো। আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।”
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, আলোচনার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অনেকটাই নমনীয় হয়েছে। এখন ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের ওপর পাল্টা শুল্ক হার ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে থাকতে পারে। তুলনামূলকভাবে, ভিয়েতনাম ২০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন ১৯ শতাংশ, জাপান ১৫ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ১০ শতাংশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ১৫ শতাংশ হারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা করেছে।
এই আলোচনা সফল হলে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে বলে আশা করছেন বিশ্লেষকরা। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলা আলোচনার ফলাফলের ওপর।