যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কমাতে দেওয়া হচ্ছে একাধিক ছাড়

- আপডেট সময় ১২:১৯:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫
- / ২৬১ বার পড়া হয়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক হার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে বাংলাদেশ রাজি হয়েছে একাধিক ছাড় দিতে। দুই দেশের মধ্যে একটি সম্ভাব্য বাণিজ্যচুক্তি—‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ পারস্পরিক বাণিজ্যচুক্তি’— এখন চূড়ান্তকরণের পথে রয়েছে। এই চুক্তির আওতায় শুল্ক, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, মেধাসম্পদ, পরিবেশ, শ্রম অধিকার ও সেবা খাতসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ নমনীয় অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে।
বাংলাদেশ সব দাবি মেনে নিয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সব দাবি মানা সম্ভব হয়নি বলেই দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা চলেছে। চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক এবং নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক হ্রাসে রাজি হয়েছে। তবে এসব কার্যকর করতে আইন সংশোধনের প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
এ ছাড়া বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের ওপর বিদ্যমান কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে এবং অনাপত্তিপত্র (NOC) সহজ করবে। বিনিয়োগে অনুমোদন প্রক্রিয়া দ্রুত ও স্বচ্ছ করতে নতুন নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে থাকা মার্কিন কোম্পানিগুলোর বকেয়া পরিশোধের বিষয়েও অঙ্গীকার করা হয়েছে।
সামরিক ও বেসামরিক পণ্যের পাশাপাশি গম, তুলা, এলএনজি ও ভোজ্যতেল আমদানির চুক্তিও অন্তর্ভুক্ত থাকছে চুক্তির সম্ভাব্য কাঠামোয়। খাদ্য ও কৃষিপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন ছাড়াই তা প্রবেশে বাধা না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেবে বাংলাদেশ। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকট্রনিক বিল অব লেডিং বৈধ হিসেবে মেনে নেওয়া হবে।
চিকিৎসা যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের FDA-এর অনুমোদন গ্রহণ করার নীতিও থাকবে চুক্তিতে। হার্ড কপি কিংবা সত্যায়িত কপি ছাড়াই ইলেকট্রনিক কপি গ্রহণযোগ্য হবে। বাংলাদেশ ‘আন্তর্জাতিক মেডিকেল ডিভাইস রেগুলেটরস ফোরাম’-এ সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের দুগ্ধ, মাংস ও ডিমজাত পণ্য আমদানিতে অনুমোদন দেবে বাংলাদেশ। কোনো ঝুঁকি দেখা দিলে দ্রুতই তা যুক্তরাষ্ট্র বা তৃতীয় পক্ষের বিশ্লেষণ অনুযায়ী বিবেচনা করা হবে। বাংলাদেশ ওয়ান হেলথ, পেটেন্ট কো–অপারেশন ট্রিটি, মাদ্রিদ প্রোটোকল, ইউপিওভি ১৯৯১সহ একাধিক আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুমোদন ও বাস্তবায়নের বিষয়েও সম্মত হয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) শর্ত অনুযায়ী প্রতিবেদন দাখিল এবং পরিবেশ ও দুর্নীতিবিরোধী পরিকল্পনা প্রকাশেও রাজি হয়েছে বাংলাদেশ।
ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সাইবার আইন সংশোধন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিষয়ক আইনেও পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা নীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের মতামত গ্রহণযোগ্য বিবেচনায় নেওয়ার বিষয়েও সম্মত হয়েছে সরকার।
এদিকে, সাধারণ বিমা করপোরেশনের সঙ্গে ৫০ শতাংশ পুনর্বিমা বাধ্যবাধকতা বাতিলের জন্য আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক। সবমিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য নীতিগত ছাড় দিচ্ছে। যদিও বাণিজ্য কর্মকর্তারা বলছেন, চূড়ান্ত চুক্তিতে এখনও কিছু বিষয়ে দর-কষাকষি চলছে।