যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হুমকিতে চাপে ভারত, শিগগিরই চূড়ান্ত হতে পারে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি

- আপডেট সময় ১১:৩৮:১১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
- / ২৬৩ বার পড়া হয়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত না হলে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাঁচ দফা আলোচনা শেষেও চুক্তি না হওয়ায় এই হুমকিকে নতুন চাপ হিসেবে দেখছে নয়াদিল্লি। তবে এমন উত্তেজনার মধ্যেও একটি বৃহৎ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আশাবাদী ভারতের কর্মকর্তারা বলছেন, আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে এবং আগামী মাসেই চুক্তির কাঠামো দাঁড়িয়ে যেতে পারে।
মঙ্গলবার ট্রাম্পকে সাংবাদিকেরা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “আমার তাই মনে হয়”—যে ভারতের ক্ষেত্রে শুল্কহার ২৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। এই মন্তব্যের পরই নয়াদিল্লিতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মহলে আলোচনা তীব্র হয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ভারতের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, আগস্টের মাঝামাঝি সময় মার্কিন প্রতিনিধিদল দিল্লি সফর করবে এবং আলোচনা আরও এগোবে। যদিও শুল্ক আরোপের সম্ভাবনাকে তারা ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি’ ধরে নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তবে এটি অস্থায়ী বলেই আশা করছেন তারা।
একইসঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসন একটি “বিশ্ব শুল্ক” চালুর পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট নিজেই। তিনি বলেন, যদি পৃথক বাণিজ্য চুক্তি না হয়, তবে বেশিরভাগ অংশীদার দেশকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হবে, যা বর্তমানে গড়ে ১০ শতাংশ। এই বিষয়ে শিগগিরই প্রায় ২০০টি দেশকে অবহিত করবে ওয়াশিংটন।
ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আলোচনায় ‘দারুণ অগ্রগতি’ হয়েছে এবং ভারত ইতিমধ্যে কিছু পণ্যে শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে। সেই সঙ্গে অশুল্ক বাধা সহজীকরণেও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে কৃষি ও দুগ্ধ খাত এখনো ভারতের জন্য ‘অস্পর্শনীয়’, যেখানে জিন-পরিবর্তিত ভুট্টা বা সয়াবিন আমদানি কিংবা দুগ্ধ খাত উন্মুক্ত করার প্রস্তাব নাকচ করা হয়েছে।
২০২৪ সালে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ভারতের উদ্বৃত্ত ছিল ৪৬ বিলিয়ন ডলার। এই প্রেক্ষাপটে নয়াদিল্লি এমন একটি চুক্তি চায়, যাতে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনাম, জাপান, ইন্দোনেশিয়া কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পায়।
ব্রিকস জোটের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের কড়া শুল্ক হুমকি এবং ডি-ডলারাইজেশন বা রাশিয়া থেকে তেল আমদানির মতো ইস্যুগুলোর আলোকে ভারত এখন কৌশলগতভাবে নিজেকে নতুন করে মূল্যায়ন করছে। এ কারণেই ভারত আপাতত নতুন কোনো প্রস্তাব উত্থাপন থেকে বিরত রয়েছে। এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা এমন একটি চুক্তি চাই যা দীর্ঘমেয়াদে আমাদের রপ্তানিকারকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষ সুবিধা নিশ্চিত করবে।”
বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, যদি চুক্তি না হয়, তবে ভারতের রপ্তানি পণ্য গড়ে ২৬ শতাংশ মার্কিন শুল্কের মুখে পড়তে পারে, যা প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। যদিও ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি অফিস এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য দেয়নি, তবে দুই পক্ষই এখনো আলোচনার টেবিলে আছে বলে নিশ্চিত করেছে সূত্রগুলো।
বর্তমানে পুরো পরিস্থিতির দিকে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক মহলের নজর রয়েছে। আর এর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবস্থান এবং দিল্লির দর কষাকষির দক্ষতার ওপর।