রাজশাহীতে নারীর রহস্যজনক মৃত্যু

- আপডেট সময় ০৪:৩৩:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
- / ২৬৪ বার পড়া হয়েছে
রাজশাহীর পবা উপজেলায় ধানখেত থেকে উদ্ধার হওয়া এক নারীর রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে অবশেষে মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
লাশটি এতটাই বিকৃত ও পোড়ানো ছিল যে শনাক্ত করাও কঠিন হয়ে পড়ে।
তবে কোমরে থাকা একগোছা চাবিই শেষ পর্যন্ত জানিয়ে দেয়—নিহত নারী কে ছিলেন।
পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগসারা গ্রামের ধানখেতে শনিবার দুপুরে অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর অর্ধপোড়া লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
লাশটির হাতের আঙুল পর্যন্ত পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল যাতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট থেকে পরিচয় শনাক্ত করা না যায়। চারদিনের পুরনো লাশে পচন ধরেছিল।
তবে কোমরে ঝুলে থাকা একটি চাবির গোছাই তদন্তে মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
নিহত নারীর ছেলে সেই চাবি দিয়ে ঘরের তালা খুলে নিশ্চিত হন—এই লাশ তাঁর মা-ই।
নিহত নারী, বয়স ৪৩ বছর, রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটার একটি খাবার হোটেলের কর্মচারী ছিলেন, ১৫ অক্টোবর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।
রবিবার নিহতের ছেলে পবা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে তিনি জানান, প্রায় ১৫ বছর আগে তাঁর বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়।
এরপর তাঁর মা দ্বিতীয় বিয়ে করেন এবং নওহাটায় ভাড়া বাসায় থেকে কাজ করতেন।
১৮ অক্টোবর সৎবাবা ফোনে জানান, তাঁর মায়ের ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
পরে তিনি গিয়ে দেখেন ঘরটি তালাবদ্ধ। স্থানীয়দের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন,
কয়েকদিন ধরে ঘরটি বন্ধ। সেই সময়ই খবর পান ধানখেতে এক অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার হয়েছে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের শাহ মখদুম জোনের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার সাবিনা ইয়াসমিন জানিয়েছেন,
পবা থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের যৌথ তৎপরতায় হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় প্রথমে তিন আসামির পরিচয় শনাক্ত করেন তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক শারিফুর রায়হান।
পরে রোববার দিবাগত রাতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সোনাদিঘি মোড় এলাকা থেকে তারা মিয়াকে,
মহানন্দাখালী থেকে ফারুক হোসেনকে এবং পিল্লাপাড়া থেকে হেলাল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—তারা মিয়া , ফারুক হোসেন ও হেলাল উদ্দিন ।
তারা মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
জবানবন্দিতে তিনি জানান, নিহত নারী টাকার বিনিময়ে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন।
পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে তাঁদের সঙ্গে চুক্তি হয়।
কিন্তু টাকা না দেওয়ায় পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করে লাশ ধানখেতে ফেলে দেন।
অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার সাবিনা ইয়াসমিন বলেন: দুষ্কৃতকারীরা লাশ পুড়িয়ে বিকৃত করেছিলেন।
হাতের আঙুলও পুড়িয়ে দেন যাতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট শনাক্ত করা না যায়।
তাঁরা হয়তো ক্রাইম পেট্রল সিরিয়াল দেখে এমন পরিকল্পনা করেছে।
চারদিন পর লাশে পচন ধরেছিল, ছেলেকে মায়ের পোশাক দেখানো হলে তিনিও প্রথমে নিশ্চিত হতে পারেননি।
কিন্তু কোমরে থাকা চাবির গোছাই সব রহস্য উন্মোচন করে।
নিহত নারীর ছেলের চোখের সামনে মায়ের শেষ চিহ্ন হয়ে ছিল সেই তিনটি চাবি।
আর সেই চাবিই উন্মোচন করল এক নির্মম হত্যার সত্য। রাজশাহী পুলিশ বলছে,
তদন্ত শেষ হলে আরও তথ্য প্রকাশ করা হবে। রাজশাহী পুলিশ বলছে,
এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে আরও কেউ জড়িত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।






















