শিশু হাসপাতালে ৬৫ চিকিৎসক নিয়োগ বাতিলের সুপারিশ, তদন্তে বেরিয়ে এলো ভয়াবহ অনিয়ম

- আপডেট সময় ১২:০৩:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫
- / ২৫৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ৬৫ জন চিকিৎসকের নিয়োগে ভয়াবহ অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে তদন্তে। বিধি লঙ্ঘন করে, প্রতিযোগিতা ও মেধা যাচাই ছাড়া, অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে এই নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি নিয়োগগুলো বাতিলের সুপারিশ করেছে।
তদন্ত কমিটির ৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, হাসপাতালটিতে চিকিৎসক নিয়োগের কোনো জরুরি পরিস্থিতি ছিল না। তবু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ‘জরুরি ভিত্তিতে’ ছয় মাসের জন্য ৬৫ জন আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়। নিয়োগের আগে কোনো জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়নি। কেবল হাসপাতালের নোটিশ বোর্ডে একটি বিজ্ঞপ্তি টাঙানো হয়। লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২ জুলাই হাসপাতাল পরিচালকের কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চায়, আদৌ নিয়ম মেনে পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কি না। জবাবে পরিচালক দাবি করেন, পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্ত এবং হাসপাতালের চাকরির বিধি অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এরপর ১০ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। এতে নেতৃত্ব দেন যুগ্ম সচিব খন্দকার মোহাম্মদ আলী, সদস্য সচিব ছিলেন শব্বির ইকবাল, এবং সদস্য হিসেবে ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন।
তদন্ত কমিটি সরেজমিন পরিদর্শন, পরিচালক, ১৪ জন নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক, ৪ জন বঞ্চিত আবেদনকারী, এবং পরিচালনা বোর্ডের দুই সদস্যের বক্তব্য নেয়। তারা কাগজপত্র, আবেদনপত্র ও বিধিমালাও পর্যালোচনা করে।
কমিটি জানায়, ২৮ মে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং মাত্র এক মাসের মধ্যে, ৩০ জুন পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে ফেলা হয়। এই দ্রুততা নিয়োগের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এমনকি নোটিশে যেখানে বলা হয়েছিল ৪২ জন নিয়োগ দেওয়া হবে, বাস্তবে ৬৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২৩ জনের নিয়োগে গুরুতর অনিয়ম হয়েছে বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে।
আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, আবেদনপত্রের কোনো রেজিস্ট্রেশন সংরক্ষণ করা হয়নি, আবেদন গ্রহণের কোনো ক্রম নেই, সই করা আবেদনপত্রে তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। তদন্ত কমিটি সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছে, এই নিয়োগ আগেই নির্ধারিত ছিল।
তদন্ত প্রতিবেদনের মূল সুপারিশ হলো ৬৫ জন চিকিৎসকের এই অনিয়মতান্ত্রিক নিয়োগ বাতিল করা। পাশাপাশি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন ও নিয়োগ কমিটি গঠন অন্তর্ভুক্ত।
এ ছাড়া ২০২১ সালের শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট আইনের অধীনে একটি প্রবিধান দ্রুত প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমোদন ছাড়া কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত না নেওয়া যায়। হাসপাতালের কার্যক্রমে মন্ত্রণালয়ের নজরদারিও নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এই ঘটনায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, এ ধরনের নিয়োগ প্রক্রিয়া যোগসাজশ ছাড়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় এনে জবাবদিহির ব্যবস্থা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। কারণ, নির্বাচিত বা অন্তর্বর্তী কোনো সরকারের অধীনে এ ধরনের নিয়োগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এ ঘটনায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম জানিয়েছেন, “আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।” তবে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
দেশের হাসপাতালগুলোর নিয়োগে অনিয়ম নতুন কিছু নয়, তবে শিশু হাসপাতালের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে এভাবে ঢালাও নিয়োগ দেশের স্বাস্থ্যখাতে আস্থার সঙ্কট তৈরি করেছে বলে মনে করছেন অনেকে।