শেখ হাসিনা ও এস আলম গ্রুপের গোপন বৈঠক, সরকার উৎখাতের নীলনকশা

- আপডেট সময় ১১:৫৬:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
- / ২৫৮ বার পড়া হয়েছে
জুলাই মাসের গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। গোয়েন্দা সূত্র অনুযায়ী, দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ নেতারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি দিল্লিতে এক গোপন বৈঠকে মিলিত হন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ। এই বৈঠকে তারা আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানা গেছে।
গোয়েন্দা সূত্রের তথ্যানুসারে, এই বৈঠকে সাইফুল আলম মাসুদ শেখ হাসিনাকে ২৫০০ কোটি টাকা দিয়েছেন এবং আরও ২০০০ কোটি টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এই অর্থের বিনিময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এবং দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে একটি ভয়াবহ নাশকতার ছক কষা হয়েছে। বিভিন্ন দেশে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, প্রাক্তন আমলা, সামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এই নীলনকশা প্রস্তুত করা হয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আওয়ামী লীগ দলীয় ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলে জানা যায়।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, পবিত্র উমরাহ পালনের কথা বলে সাইফুল আলম মাসুদ মূলত দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে মক্কায় গিয়েছিলেন। মক্কার বিলাসবহুল ফেয়ারমন্ট হোটেলে বসে তিনি পলাতক আওয়ামী নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তিনি দেশ থেকে পাচার করা অর্থের বিনিময়ে একটি হোটেল কেনার জন্য একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গেও বৈঠক করেন।
মক্কায় বৈঠক শেষে ৪ আগস্ট এস আলম মদিনায় চলে যান এবং ‘ইলাফ আল তাকওয়া’ হোটেলে ওঠেন। সেখানে তিনি চট্টগ্রামের কিছু আওয়ামীপন্থী ব্যবসায়ীর সঙ্গে দেখা করেন। দুই দিন মদিনায় থাকার পর ৬ আগস্ট তিনি বিশেষ ফ্লাইটে আরব আমিরাতের দুবাই হয়ে ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে পৌঁছান।
দিল্লি সফরে তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ফারজানা পারভীন ও তাদের ছোট ছেলেসহ ইসলামী ব্যাংকের একজন সাবেক চেয়ারম্যান। তারা দিল্লির বিখ্যাত পাঁচ তারকা হোটেল ‘দ্য ওবেরয় নিউ দিল্লি’-তে ওঠেন।
দিল্লি সফরের সময় এস আলমের সঙ্গে পলাতক সাবেক মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং মোহাম্মদ আলী আরাফাতসহ আরও অনেকে সাক্ষাৎ করেন। তাদের মধ্যে দেশকে অস্থিতিশীল করার বিষয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।
এস আলমের এই সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ৮ আগস্ট শেখ হাসিনার সঙ্গে তার গোপন বৈঠক। ওইদিন দুপুরে তিনি সব ফোন ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস হোটেলে রেখে একটি নম্বরবিহীন গাড়িতে করে শেখ হাসিনার বাসভবনের উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথে দুইবার গাড়ি পরিবর্তন করে তিনি অবশেষে দিল্লির ল্যুটিয়েন্স বাংলো জোনে (Lutyens Bungalow Zone-LBZ) অবস্থিত শেখ হাসিনার বাসভবনে পৌঁছান। সেখানে তিনি দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা ২৭ মিনিট পর্যন্ত অবস্থান করেন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এই দীর্ঘ সময়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে এস আলমের একান্ত আলাপ হয়। বৈঠকে ভারতের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকে শেখ হাসিনা এস আলমের কাছে ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা চান এবং এস আলম এতে সম্মতি দেন।
এই বিশাল অঙ্কের অর্থ নির্দিষ্ট কিছু খাতে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে:
* আন্তর্জাতিক লবিস্ট ও বিভিন্ন দেশের নীতিনির্ধারকদের আওয়ামী লীগকে সহায়তা করার জন্য ম্যানেজ করা।
* আগামী নভেম্বর ও ডিসেম্বরে দেশজুড়ে নাশকতার মাধ্যমে এমন অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, যাতে অন্তর্বর্তী সরকার বিদায় নিতে বাধ্য হয়।
* সরকারি আমলা, পুলিশ ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কিনে ফেলা।
* আওয়ামী নেতাকর্মীদের জামিনের জন্য খরচ করা।
* এস আলমের সুগার রিফাইনারিসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মাধ্যমে আন্দোলন সংগঠিত করা।
এই অর্থের গ্রহণ, বিতরণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার দায়িত্বে আছেন আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।