সিআরআই’র দায়িত্বে সায়মা, ভারত থেকে পরিচালিত হচ্ছে সাইবার যুদ্ধ

- আপডেট সময় ০১:২২:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৬০ বার পড়া হয়েছে
আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন’ (সিআরআই) এখন ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের হাতে পরিচালিত হচ্ছে।
নয়াদিল্লির লুটিয়েন্স বাংলো জোনের কাছে একটি দোতলা ভবন থেকে এই প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের দাবি, এই প্রতিষ্ঠানটি অন্তর্বর্তী সরকার, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির বিরুদ্ধে সাইবার আক্রমণ পরিচালনা করছে, যা মূলত জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করার একটি অপচেষ্টা।
জানা গেছে, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গত তিন মাস ধরে সিআরআই আবারও সক্রিয় হয়েছে। এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় আইনগত কারণে অফিশিয়ালি দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। এ কারণে শেখ হাসিনার নির্দেশে জয়কে সরিয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পুতুল নিয়মিত এই দিল্লির কার্যালয় থেকে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে সিআরআই’র কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
সূত্র জানায়, সিআরআই মূলত তিনটি লক্ষ্য সামনে রেখে কাজ করছে:
১. অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করা।
২. যেকোনো মূল্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভন্ডুল করা।
৩. বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করে গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা।
এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, শেখ হাসিনাকে আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনা। এজন্য প্রতিষ্ঠানটি দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করছে।
সিআরআই’র বিরুদ্ধে এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) দিয়ে তৈরি ভিডিও ক্লিপ, বেনামি ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল ব্যবহার করে এক ধরনের সাইবার যুদ্ধ ঘোষণার অভিযোগ উঠেছে। এই সাইবার আক্রমণ থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা শীর্ষ রাজনীতিবিদ, উপদেষ্টা, সামরিক-বেসামরিক আমলা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রেহাই পাচ্ছেন না।
অভিযোগ রয়েছে, সিআরআই এখন শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে আওয়ামীপন্থী ‘কালচারাল ফ্যাসিস্টদের’ সংগঠিত করছে। এর মধ্যে রয়েছে টকশোর জনপ্রিয় মুখ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, ইউটিউবার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা, যাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
এই ছদ্মবেশী কালচারাল ফ্যাসিস্টদের মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। এর লক্ষ্য হলো:
• সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তোলা।
• জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা।
• বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিকে চরম প্রতিপক্ষ হিসাবে সংঘাত-সংঘর্ষে জড়ানো।
• বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাঙ্গনে বড় ধরনের সংঘাত-সহিংসতা সৃষ্টি করে দেশকে চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেওয়া।
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের সব শক্তিকে ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। সবশেষে, সুযোগ বুঝে কমপক্ষে ২০ লাখ কর্মী-সমর্থক জড়ো করে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ বা ‘যমুনা ঘেরাও’র মতো কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
প্রজন্ম ৭১, মঞ্চ ৭১, ব্রিগেড ৭১, নিউক্লিয়াস ৭১, মুক্তিবাহিনী ৭১, হিস্টোরি অব আগস্ট, নয়া সংগ্রাম ২৫, প্রত্যাবর্তনস-০২, বঙ্গবন্ধু-৭১ এবং জয়বাংলা ব্রিগেডসহ শতাধিক ফেসবুক আইডি, ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলকে এই প্রোপাগান্ডা প্ল্যাটফর্ম হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে সিআরআই’র কার্যক্রম শুরু হয়। এর ঠিকানা ছিল ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে, যদিও গোপনে বিভিন্ন স্থান থেকে এর কার্যক্রম পরিচালিত হতো। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দিল্লিতে পালিয়ে আশ্রয় নেন, যার কারণে সিআরআই’র কার্যক্রম অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়েছিল। উল্লেখ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের (এসইএআরও) পরিচালক পদ থেকে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে সায়মা ওয়াজেদকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল।