সেদিন প্রধান শিক্ষিকা ডেকে না নিলে হয়তো আমিও আর বেঁচে থাকতাম না-অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম

- আপডেট সময় ০৬:৩৪:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫
- / ২৫৯ বার পড়া হয়েছে
উত্তরার দিয়াবাড়িতে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের মর্মান্তিক ঘটনায় প্রাণ হারানো শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের স্মরণে শনিবার সকালে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে আয়োজিত শোক ও দোয়া মাহফিলে ভারী আবেগে কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন (অব.) জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বলেন, “যে বাচ্চারা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। ওইদিন ১টা ১২ থেকে ১৩ মিনিটের মাঝামাঝি দুর্ঘটনা ঘটে। যদি দুর্ঘটনাটা ১টা ৪-৫ মিনিটে ঘটত, তাহলে কী যে হারাতাম, তা কল্পনারও বাইরে। আরও কত মা-বাবা সন্তান হারাতেন, তার ঠিক থাকত না।”
অধ্যক্ষ জানান, প্রতিদিন ছুটির সময় তিনি শিক্ষার্থীদের বারান্দা থেকে পর্যবেক্ষণ করেন, কিন্তু দুর্ঘটনার দিন দুজন নতুন শিক্ষকের সাক্ষাৎকারের কারণে প্রধান শিক্ষিকার ডাকে সাড়া দিয়ে ১টার সময় কক্ষে যান। ১টা ৪ মিনিটে বেরিয়ে আসার পর মাত্র আট-নয় মিনিটের মধ্যে দুর্ঘটনাটি ঘটে। তিনি বলেন, “সেদিন প্রধান শিক্ষিকা ডেকে না নিলে হয়তো আমিও আর বেঁচে থাকতাম না।”
উদ্ধারকাজে শিক্ষক-কর্মচারীদের সাহসিকতা ও ত্যাগের কথা স্মরণ করে অধ্যক্ষ বলেন, “আপনাদের কষ্ট, বেদনা— সবকিছুর প্রতি আমি আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই। যদি কেউ মনে করে অবহেলা হয়েছে, তাহলে তার দায় একমাত্র আমার। আপনারা যেকোনো বিচার করতে পারেন।”
অনুষ্ঠানে নিহত শিক্ষার্থী জারিফ হাসানের বাবা হাবিবুর রহমান জানান, “সেদিন নাকি ও স্কুলে আসতে চায়নি। ওর মা বলেছিল।” তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “ছেলেটা খুবই চটপটে আর ফ্রেন্ডলি ছিল।” এ ঘটনায় প্রাণ হারান বাংলা বিভাগের সহকারী শিক্ষিকা মাসুকা বেগম ও নিহত হন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা মেহরিন চৌধুরী (৪৪) তার শরীরের ৮৫ শতাংশ দগ্ধ হয়। সহকর্মীরা জানান, তিনি চাইলে রুম থেকে দৌড়ে বের হতে পারতেন, কিন্তু শিক্ষার্থীদের একা রেখে যেতে চাননি।
মাসুকার দুলাভাই খলিলুর রহমান বলেন, “আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঘটনাটি শুনেই ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করি, কিন্তু পারিনি। ঢাকায় এসে স্কুলে খোঁজ নিই, সেখানেও পাওয়া যায়নি। পরে হাসপাতালে খোঁজ মেলে।”
শোক ও দোয়া মাহফিলের শুরুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় নিহতদের স্মরণে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধান শিক্ষিকা খাদিজা আক্তার।
দোয়ার মাধ্যমে শেষ হয় আয়োজনটি, যার সঞ্চালনায় ছিলেন ইংরেজি শিক্ষক নুসরাত আলম। এটি ছিল এক অনাড়ম্বর, অথচ হৃদয়বিদারক স্মরণসভা— যেখানে কান্না আর নিঃশব্দ শোকই যেন সবচেয়ে জোরালো ভাষা হয়ে উঠেছিল।