ঢাকা ০১:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

    হাসিনার গুলি চালানোর নির্দেশ নিয়ে আল জাজিরার প্রতিবেদন

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০৭:১১:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫
    • / ২৬৩ বার পড়া হয়েছে

    বাংলাদেশে গত বছরের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমন করতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের প্রকাশ্য নির্দেশ’-সংক্রান্ত ফোনালাপ ফাঁস করেছে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। সংস্থাটির ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট (আই-ইউনিট) এই ফোনালাপের ফরেনসিক বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত করেছে যে এগুলো জেনারেটেড অডিও নয়, বরং প্রামাণ্য রেকর্ডিং।

    বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে যেখানেই পাওয়া যাবে, সেখানে গুলি চালানোর আদেশ দিয়েছিলেন। এসব রেকর্ড আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপনের প্রস্তুতি চলছে।

    আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্দোলনের সময় ঢাকার পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়া হয় হাসপাতালের প্রবেশপথ লক্ষ্য করে। আহত শিক্ষার্থীদের শরীরে অস্বাভাবিক ধরনের গুলির ক্ষত দেখা গেছে, যা সরাসরি প্রাণঘাতী ছিল।

    রাডার সংস্থা এনটিএমসি গত বছরের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনার একটি ফোনালাপ রেকর্ড করে, যেখানে তিনি নিজেই প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতির কথা বলেন। তার কথায়, “আমি প্রকাশ্যে আদেশ দিয়েছি… যেখানেই পাবে, গুলি চালাবে।”

    প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১৬ জুলাই রংপুরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যু আন্দোলনের গতি পাল্টে দেয়। পরবর্তীতে শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান পুলিশের মহাপরিদর্শককে ফোনে চাপ দেন ময়নাতদন্ত রিপোর্ট বিলম্বের বিষয়ে।

    রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রাজিবুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তাকে পাঁচবার রিপোর্ট পরিবর্তন করতে বাধ্য করা হয় যাতে গুলির তথ্য মুছে ফেলা যায়। আবু সাঈদের পরিবারসহ আরও ৪০টি পরিবারকে ঢাকায় গণভবনে হাজির করা হয়। সেখানে শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দেন ন্যায়বিচারের। কিন্তু আবু সাঈদের বোন সুমি খাতুন বলেন, “ভিডিওতে দেখা গেছে পুলিশ গুলি করেছে। এখানে তদন্তের কী আছে?”

    আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম দাবি করেন, শেখ হাসিনা নিজের রেকর্ডিং সম্পর্কে জানতেন এবং তাতে বিন্দুমাত্র সংকোচ ছিল না। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ফোনালাপ বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়েছে। শেখ হাসিনা কখনোই প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেননি বলেও দাবি করা হয়।

    ২০২৪ সালের জুনে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়, যা পরবর্তীতে সরকারবিরোধী গণআন্দোলনে রূপ নেয়। সেই আন্দোলনের পটভূমিতেই এসব ভয়াবহ দমন-পীড়নের ঘটনা ঘটে বলে আল জাজিরার প্রতিবেদনে উঠে আসে।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    হাসিনার গুলি চালানোর নির্দেশ নিয়ে আল জাজিরার প্রতিবেদন

    আপডেট সময় ০৭:১১:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫

    বাংলাদেশে গত বছরের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমন করতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের প্রকাশ্য নির্দেশ’-সংক্রান্ত ফোনালাপ ফাঁস করেছে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। সংস্থাটির ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট (আই-ইউনিট) এই ফোনালাপের ফরেনসিক বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত করেছে যে এগুলো জেনারেটেড অডিও নয়, বরং প্রামাণ্য রেকর্ডিং।

    বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে যেখানেই পাওয়া যাবে, সেখানে গুলি চালানোর আদেশ দিয়েছিলেন। এসব রেকর্ড আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপনের প্রস্তুতি চলছে।

    আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্দোলনের সময় ঢাকার পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়া হয় হাসপাতালের প্রবেশপথ লক্ষ্য করে। আহত শিক্ষার্থীদের শরীরে অস্বাভাবিক ধরনের গুলির ক্ষত দেখা গেছে, যা সরাসরি প্রাণঘাতী ছিল।

    রাডার সংস্থা এনটিএমসি গত বছরের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনার একটি ফোনালাপ রেকর্ড করে, যেখানে তিনি নিজেই প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতির কথা বলেন। তার কথায়, “আমি প্রকাশ্যে আদেশ দিয়েছি… যেখানেই পাবে, গুলি চালাবে।”

    প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১৬ জুলাই রংপুরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যু আন্দোলনের গতি পাল্টে দেয়। পরবর্তীতে শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান পুলিশের মহাপরিদর্শককে ফোনে চাপ দেন ময়নাতদন্ত রিপোর্ট বিলম্বের বিষয়ে।

    রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রাজিবুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তাকে পাঁচবার রিপোর্ট পরিবর্তন করতে বাধ্য করা হয় যাতে গুলির তথ্য মুছে ফেলা যায়। আবু সাঈদের পরিবারসহ আরও ৪০টি পরিবারকে ঢাকায় গণভবনে হাজির করা হয়। সেখানে শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দেন ন্যায়বিচারের। কিন্তু আবু সাঈদের বোন সুমি খাতুন বলেন, “ভিডিওতে দেখা গেছে পুলিশ গুলি করেছে। এখানে তদন্তের কী আছে?”

    আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম দাবি করেন, শেখ হাসিনা নিজের রেকর্ডিং সম্পর্কে জানতেন এবং তাতে বিন্দুমাত্র সংকোচ ছিল না। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ফোনালাপ বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়েছে। শেখ হাসিনা কখনোই প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেননি বলেও দাবি করা হয়।

    ২০২৪ সালের জুনে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়, যা পরবর্তীতে সরকারবিরোধী গণআন্দোলনে রূপ নেয়। সেই আন্দোলনের পটভূমিতেই এসব ভয়াবহ দমন-পীড়নের ঘটনা ঘটে বলে আল জাজিরার প্রতিবেদনে উঠে আসে।