৩৬ জুলাই মুক্তির উৎসব, ৭৬ লাখ টাকা তোলার লক্ষ্যে প্রায় ৭০টি প্রতিষ্ঠানে চিঠি: সাবেক সমন্বয়ক

- আপডেট সময় ০৮:৩৭:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫
- / ২৫৬ বার পড়া হয়েছে
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক অনুদান ও সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার।
তার এই আবেদনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ হাসান নকীবের ‘স্ট্রংলি রিকমেনডেড’ মন্তব্যসহ সুপারিশ করায় বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং তা ঘিরে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা তৈরি হয়।
ফেসবুকে অনুদান চাওয়ার আবেদনপত্রের অনুলিপি ভাইরাল হওয়ার পর অনেকেই দাবি করেছেন, ৭৬ লাখ টাকা তোলার লক্ষ্যে প্রায় ৭০টি প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
তবে সালাউদ্দিন আম্মার আজ মঙ্গলবার জানিয়েছেন, তিনি ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। এই দুই দিনের উৎসবের আয়োজনের জন্য ২১টি প্রতিষ্ঠানে আবেদন প্রস্তুত করা হয়, এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৪টিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠির সঙ্গে অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও বাজেটের বিস্তারিতও সংযুক্ত করা হয়েছে।
বাংলায় লেখা একটি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, “রাজশাহীর গৌরবময় ইতিহাসে ৩৬ জুলাই একটি স্মরণীয় দিন। এই দিনটি আমরা ‘জুলাই আন্দোলন’ হিসেবে স্মরণ করি, যেখানে বহু তরুণ শহীদ হয়েছিলেন এবং অনেকে আহত হয়েছিলেন গণতান্ত্রিক অধিকারের সংগ্রামে। এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজন করছি ‘৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব’। এতে শহীদ পরিবার, আহতদের পরিবার ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেবেন। লক্ষ্য হলো শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো ও তরুণ প্রজন্মকে তাদের আত্মত্যাগের গল্প জানানো।”
এই আবেদনপত্রে সালাউদ্দিন আম্মারের পাশাপাশি সই করেছেন ‘৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব’-এর আয়োজক এবং ক্যাম্পাস বাউলিয়ানার পরিচালক কে এস কে হৃদয়। তাদের প্রস্তাবে গত ৯ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুপারিশ করেন এবং লেখেন, ‘স্ট্রংলি রিকমেনডেড’।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কাছেও ২১ জুলাই একটি আবেদন পাঠানো হয়, যার প্রেক্ষিতে ২৩ জুলাই নগর ভবন থেকে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
অন্যদিকে, উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব জানান, সালাউদ্দিন একা নন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো সংগঠন এ ধরনের আবেদনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা চাইলে তিনি ‘রিকমেন্ড’ করে দেন। এটি তিনি দায়িত্বের জায়গা থেকেই করেন। তবে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা বাড়তে থাকায় ২৭ জুলাই সালাউদ্দিন আম্মার একটি দীর্ঘ ফেসবুক স্ট্যাটাসে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।
তিনি এটিকে ‘ভয়াবহ মিডিয়া ট্রায়াল’ বলে উল্লেখ করেন এবং দাবি করেন, জুলাই আন্দোলনের পর তিনি চাইলে কোটি কোটি টাকা আয় করতে পারতেন। তিনি একটি বড় কনসার্ট আয়োজনের পরিকল্পনা করেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়ামে। সে উদ্দেশ্যে প্রশাসনের কাছে একটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়, কিন্তু তারা জানায়, বর্তমানে অর্থ নেই, তবে সহযোগিতা থাকবে। এরপর উপাচার্যের স্বাক্ষর নিয়ে বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানি, ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে প্রস্তাবনা পাঠান তিনি।
সালাউদ্দিন জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫টি ব্যাংকের হেড অফিসে একই প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া হলেও সেগুলো প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। কেবল ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১৫ হাজার টাকা ও রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স ৩০ হাজার টাকা দিয়েছে। সিটি করপোরেশন দিয়েছে ২ লাখ টাকা। এর বাইরে আর কোনো প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত বাজেট বরাদ্দ দেয়নি।
আজ মঙ্গলবার দেওয়া আরেকটি স্ট্যাটাসে তিনি জানান, মোট ১৯টি প্রতিষ্ঠানে আবেদন পাঠানো হয়েছে এবং অনুষ্ঠানের প্রতিটি খরচের হিসাব স্বচ্ছতার সঙ্গে তুলে ধরা হবে। তিনি আরও লেখেন, গত বছর ‘বিজয় উৎসব’ আয়োজনের পরিকল্পনা থাকলেও ফেনীর বন্যার কারণে তা হয়নি। রাজশাহীর গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কারণে এবার সেই উৎসবও রাজশাহীতেই হবে বলে জানান সালাউদ্দিন।
এই বিতর্কে উৎসব আয়োজনের উদ্দেশ্য, অনুদান সংগ্রহের পদ্ধতি ও প্রশাসনিক সহযোগিতার প্রশ্নে যে ধরনের সমালোচনা উঠেছে, তা নিয়ে এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরেও চলছে নানা মিশ্র প্রতিক্রিয়া।