ঢাকা ০১:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

গাজায় খাবার সংগ্রহ, এ যেন আরেক যুদ্ধ

ঢাকা প্রেস ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৫:৫৩:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
  • / ২৫৬ বার পড়া হয়েছে

গাজায় খাদ্য সংগ্রহ এখন যেন আরেকটি যুদ্ধ। হাজার হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন খাবারের জন্য হাঁটছেন কিলোমিটারের পর কিলোমিটার। কিন্তু এত কষ্টের পরও খাবার পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই, এমনকি জীবিত ফেরারও কোনো গ্যারান্টি নেই। 

গাজার উত্তরাঞ্চলে বসবাসকারী ৩৮ বছর বয়সী হিন্দ আল নাওয়াঝা ও তার বোন মাযৌযার জীবন এখন এক দুঃস্বপ্নের মতো। প্রতিদিন তাদের ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের খাবার সংগ্রহ করতে হাঁটতে হয় কয়েক কিলোমিটার।

কিন্তু সেখানে পৌঁছেও খাবার পাওয়া যায় না সবসময়। নাওয়াঝা বলেন, “হয় খাবার নিয়ে ফিরবেন, আর আপনার সন্তানরা খুশি হবে, নয়তো খালি হাতে ফিরে তাদের কান্না দেখবেন। আর সবচেয়ে খারাপ হলো, হয়তো আপনাকে কাপড়ে মুড়ে ফিরিয়ে আনা হবে।”

গাজায় চলছে তীব্র খাদ্য সংকট। ইসরায়েলি অবরোধের কারণে ত্রাণ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। মার্কিন ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে। কিন্তু তাদের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আর সীমিত সরবরাহের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল।

গাজার স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবি, গত মে মাস থেকে ত্রাণ কেন্দ্রে খাবার নিতে গিয়ে শত শত ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। কেবল গত দুই দিনে, অর্থাৎ ১৮ ও ১৯ জুন, কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

গতকালই ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৫১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১২ জন ত্রাণ কেন্দ্র থেকে খাবার সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করছে, নেতজারিম এলাকায় সন্দেহভাজন একদল লোক তাদের দিকে এগিয়ে আসছিল, তাই তারা ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছে। তবে হতাহতের বিষয়ে তারা কিছু জানে না বলে দাবি করেছে।

এদিকে, জিএইচএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা গাজার স্বাস্থ্যকর্মীদের দেওয়া তথ্যকে ভুল বলে দাবি করছে। কিন্তু হতাহতের বিষয়ে তাদের কাছে কোনো স্পষ্ট জবাব নেই। জাতিসংঘ বারবার বলেছে, গাজায় খাদ্য সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

নাওয়াঝা ও তার বোনের মতো হাজারো মানুষ শরণার্থী শিবিরে তাঁবুর বাইরে রাস্তায় দিন কাটাচ্ছেন। ত্রাণ কেন্দ্রে ধাক্কাধাক্কি আর ভিড়ের মধ্যে খাবার পাওয়া প্রায় অসম্ভব। নাওয়াঝা বলেন, “আমরা ক্লান্ত। কয়েক কিলোমিটার হেঁটে শুধু জুতা ক্ষয় আর পায়ে ব্যথা নিয়ে ফিরি। আর বাচ্চারা ক্ষুধায় কাঁদছে।”

গাজার এই সংকট শুধু খাদ্যের নয়, এটি মানবতার সংকট। প্রতিদিন হাজারো মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাবারের জন্য লড়াই করছে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

গাজায় খাবার সংগ্রহ, এ যেন আরেক যুদ্ধ

আপডেট সময় ০৫:৫৩:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

গাজায় খাদ্য সংগ্রহ এখন যেন আরেকটি যুদ্ধ। হাজার হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন খাবারের জন্য হাঁটছেন কিলোমিটারের পর কিলোমিটার। কিন্তু এত কষ্টের পরও খাবার পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই, এমনকি জীবিত ফেরারও কোনো গ্যারান্টি নেই। 

গাজার উত্তরাঞ্চলে বসবাসকারী ৩৮ বছর বয়সী হিন্দ আল নাওয়াঝা ও তার বোন মাযৌযার জীবন এখন এক দুঃস্বপ্নের মতো। প্রতিদিন তাদের ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের খাবার সংগ্রহ করতে হাঁটতে হয় কয়েক কিলোমিটার।

কিন্তু সেখানে পৌঁছেও খাবার পাওয়া যায় না সবসময়। নাওয়াঝা বলেন, “হয় খাবার নিয়ে ফিরবেন, আর আপনার সন্তানরা খুশি হবে, নয়তো খালি হাতে ফিরে তাদের কান্না দেখবেন। আর সবচেয়ে খারাপ হলো, হয়তো আপনাকে কাপড়ে মুড়ে ফিরিয়ে আনা হবে।”

গাজায় চলছে তীব্র খাদ্য সংকট। ইসরায়েলি অবরোধের কারণে ত্রাণ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। মার্কিন ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে। কিন্তু তাদের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আর সীমিত সরবরাহের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল।

গাজার স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবি, গত মে মাস থেকে ত্রাণ কেন্দ্রে খাবার নিতে গিয়ে শত শত ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। কেবল গত দুই দিনে, অর্থাৎ ১৮ ও ১৯ জুন, কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

গতকালই ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৫১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১২ জন ত্রাণ কেন্দ্র থেকে খাবার সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করছে, নেতজারিম এলাকায় সন্দেহভাজন একদল লোক তাদের দিকে এগিয়ে আসছিল, তাই তারা ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছে। তবে হতাহতের বিষয়ে তারা কিছু জানে না বলে দাবি করেছে।

এদিকে, জিএইচএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা গাজার স্বাস্থ্যকর্মীদের দেওয়া তথ্যকে ভুল বলে দাবি করছে। কিন্তু হতাহতের বিষয়ে তাদের কাছে কোনো স্পষ্ট জবাব নেই। জাতিসংঘ বারবার বলেছে, গাজায় খাদ্য সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

নাওয়াঝা ও তার বোনের মতো হাজারো মানুষ শরণার্থী শিবিরে তাঁবুর বাইরে রাস্তায় দিন কাটাচ্ছেন। ত্রাণ কেন্দ্রে ধাক্কাধাক্কি আর ভিড়ের মধ্যে খাবার পাওয়া প্রায় অসম্ভব। নাওয়াঝা বলেন, “আমরা ক্লান্ত। কয়েক কিলোমিটার হেঁটে শুধু জুতা ক্ষয় আর পায়ে ব্যথা নিয়ে ফিরি। আর বাচ্চারা ক্ষুধায় কাঁদছে।”

গাজার এই সংকট শুধু খাদ্যের নয়, এটি মানবতার সংকট। প্রতিদিন হাজারো মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাবারের জন্য লড়াই করছে।